সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস মহামারি চলছে। সংবাদ পত্র শিল্পেও এরপ্রভাব পড়েছে। করোনার ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনকরতে গিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ব্রিটিশ মিডিয়ামোগল মিরর গ্রুপ বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসে পত্রিকার বিক্রিকমে যাওয়া ও বিজ্ঞাপনে ভাটা পড়ায় ১২ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়েরসিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানের আয় কমেযাওয়ায় ইতিমধ্যে তারা নিজেদের ৫৫০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন।এদিকে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক(বিআইজেএন) এর এক জরিপে করোনা পরিস্থিতিতে দেশেরউপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত ৬০.৩১ শতাংশসংবাদপত্র বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার সময়ে ৪৫৬টি স্থানীয় সংবাদপত্রের মধ্যে ২৭৫টি (৬০.৩১%) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের কমপক্ষে ছয়টি জেলায় আরকোনো সংবাদপত্র প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে করোনাপরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এই পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫১৩ জনগণমাধ্যমকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জন করোনাআক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, আরও ১০ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।করোনা সংক্রমণ, ছাঁটাই, বাধ্যতামূলক ছুটি, অনিয়মিত বেতন; গণমাধ্যম কর্মীরা নজিরবিহীন এক সংকটে আছেন। সংকটেগণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোও। সার্কুলেশন কমেছে প্রিন্ট মিডিয়ার।প্রাইভেট বিজ্ঞাপন নেই বললেই চলে। সরকারি– বেসরকারি বকেয়াবিলের স্তূপ এ সংকটকে করেছে গভীর। চাকরি হারানো বা বেতন নিয়েকরোনার আগে থেকেই সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমগুলোতে এই সংকটছিলো। করোনার মতো মহামারির সময়ে এসে সংকট আরো প্রকটআকার ধারণ করেছে। এই সুযোগে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকাগত কয়েকদিন আগে করোনা পরিস্থিতির অজুহাতে বিপুল সংখ্যককর্মী ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য বিভাগীয় প্রধানদের উদ্দেশ্যেএকটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এর বাইরে বড় একটি মিডিয়া গ্রুপেরএকটি পত্রিকার বেশ কয়েকজন সিনিয়র সংবাদকর্মীকে ছাঁটাই ওবাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে। একটি প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিকওকয়েকজন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া দ্যাইন্ডিপেন্ডেন্টসহ কয়েকটি পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।কালের কন্ঠে গণছাঁটাই চলছে, বাংলাদেশের খবর, নিউ নেশন, এশিয়ান এইজ, মানবজমিন পত্রিকায় বেতন হ্রাসসহ ছাঁটাই ওবাধ্যতামূলক ছুটি দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানঅনৈতিক পথে পা রেখেছেন। করোনা পরিস্থিতিতেও তারাসাংবাদিকদের কাজে যেতে বাধ্য করছেন। কাজে না গেলে তারা বেতনবন্ধসহ সাংবাদিক ছাঁটাইয়ের নামে নৈরাজ্যকর পরিবেশ তৈরিরঅপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চলতি বছরের ছয়মাসের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী ১৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবেনির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধারসম্মুখীন হয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে সাংবাদিক নির্যাতন দ্বিগুণমাত্রায় বাড়িয়েছেন।
এই অবস্থায় দৈনিক তথ্যধারা পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ওস্বনামধন্য প্রিন্টিং শিল্প প্রতিষ্ঠান সোনালী প্রিন্টিং প্রেস, সোনালীসিটিপি ও সোনালী গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলমখান তার সম্পাদকীয় কার্যালয় ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্তথেকে শুরু করে সকল জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালীন সময়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্কথাকার আহ্বান জানিয়ে এবং দৈনিক তথ্যধারার সাংবাদিকদেরএকেবারেই না করলে নয় এমন অ্যাসাইনম্যান্ট ছাড়া অন্য সংবাদেরপেছনে আপাতত ছুটতে নিষেধ করেছেন। যদিও যান অবশ্যই নিজের, পরিবারের ও আশপাশের মানুষগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি আগেনিশ্চিত করতে অনুরোধ জানিয়ে এক বার্তা দিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তিদিয়েছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, ভালো লেগেছে এবংঅত্যন্ত ব্যতিক্রম মনে হয়েছে বিধায় আমরা ‘দৈনিক তথ্যধারা’পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক এবং সোনালী প্রিন্টিং প্রেস, সোনালীসিটিপি ও সোনালী গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলমখান সাহেবের মুখোমুখি হয়েছি। করোনা মহামারির মাঝেওসাক্ষাৎকার দিয়েছেন দানবীর ও মহান সম্পাদক খ্যাত জনাব মোঃজাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি এখানে করোনা মহামারি ছাড়াও বিভিন্নবিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। ‘লন্ডন বাংলা’ পত্রিকা ও এলবিটিভি এর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহ ইউসুফ ও মো: মনিরুজ্জামান।
লন্ডন বাংলা:– আসসালামু আলাইকুম। আশাকরিভালো আছেন। যতদুর জানি আপনি এখন শেরপুরে আছেন।করোনা মহামারি চলছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে নানাঅব্যবস্থাপনাসহ মানুষের নানা দুর্ভোগের খবর আসছে। করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে শেরপুর জেলার মানুষেরা কেমন আছেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– ওয়ালাইকুম সালাম। হ্যা, আমি এখনশেরপুরে আছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা শেরপুর জেলার মানুষেরাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় তুলনামূলক ভালো আছি। করোনাভাইরাসের সাথে এবার বন্যাও এসেছে। কিছুটা দু:চিন্তায় থাকলেওস্থানীয় প্রশাসন, এখানকার সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিগণ, সরকারি দল, বিরোধী দল, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীগণসহসকল শ্রেণী ও পেশাজীবি মানুষ পরিস্থিতি উত্তরণে এক যোগে কাজকরছি। যে কোন দুর্যোগে শেরপুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ সবসময় কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। যে যার অবস্থান থেকেবিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে এগিয়ে এসেছেন। এবারও সবাই তাইকরছেন। শেরপুরের একজন হতদরিদ্র মানুষ (ভিক্ষুক) করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দী কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তারজন্য উপজেলা প্রশাসনের তহবিলে তার জীবনের সকল সঞ্চয় দানকরেছেন। কম বেশি সবাই সরকারি স্বাস্থবিধি মেনে চলছেন।
লন্ডন বাংলা::- পত্রিকায় যেদিন আপনার ‘দৈনিকতথ্যধারার কর্মীদের সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের আহবান’ জানানোরবিজ্ঞপ্তিটা দেখেছিলাম, সেদিনই আপনার একটা ইন্টারভিউ করারকথা আমরা ভেবেছিলাম। ইন্টারভিউ করার আগে আপনারজন্মস্থান ও আপনার পত্রিকাসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরলোকজনের সাথে কথা বলার জন্য একটু সময় নিচ্ছিলাম। আপনারসম্পর্কে কিছু কিছু জিনিস এর ওর কাছে আগেই জেনেছিলাম। আরোকিছু জিনিস জানার জন্যই আরেকটু খোঁজ খবর করছিলাম। শেষপর্যন্ত আজ সরাসরি আপনার মুখোমুখি হলাম। আজকে আপনারমুখে আমরা আপনার সম্পর্কে আরেকটু জানবো এবং আপনার যদিআপত্তি না থাকে আপনার ব্যক্তিগত বিষয়েই বেশি কথা বলবো, প্রশ্নকরবো।
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আপনাদেরকে ধন্যবাদ। দেশের বাইরে থেকেকেউ আমার সম্পর্কে জানতে চাইছেন, খোঁজ খবর করছেন, আমারসম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখাচ্ছেন– এটা অত্যন্ত ভালো লাগার। কোনবিষয়েই আমার কোন আপত্তি নেই। আমার বা আমার পরিবারেরবিষয়ে এখানকার প্রায় সবাই সব কিছু জানেন। আমাদের লুকানোরকিছু নেই। কাজেই আপনারা শুধু আমার ব্যক্তিগত বিষয়েই না চাইলেঅন্য যে কোন বিষয়েই কথা বলতে পারেন, প্রশ্ন করতে পারেন।
লন্ডন বাংলা::- আপনার বিষয়ে আমরা যার সাথেইকথা বলেছি তিনিই আপনাকে দানবীর, মহান সম্পাদক, মহৎ মানুষ, নিখাদ দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ, জনদরদী, পরোপকারী, সেলফ মেইডম্যান, গরীবের বন্ধু, নিরহংকারি ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষিতকরেছেন। কেউ কেউ আপনাকে উপমহাদেশের কিংবদন্তি সাংবাদিকফেণীর আবদুস সালাম ও শেরপুরের প্রখ্যাত সাংবাদিক খন্দকারআবদুল হামিদের সাথে তুলনা করেছেন। এই বিষয়গুলো কি আপনিউপভোগ করেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– মোটেও না। এসব আমার কাছে খুববাড়াবাড়ি মনে হয়। যারা এসব বলেন তারা আমার প্রতি তাদেরভালোবাসা থেকে বলেন। আপনি যে দু‘জন প্রখ্যাত সাংবাদিকেরকথা বলেছেন, তারা দু‘জনেই ছিলেন সাংবাদিকতার মহীরুহ বাবটবৃক্ষ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তারা ছিলেন উজ্জ্বলনক্ষত্র। তারা শুধু সাংবাদিক না, এক এক জন একটি প্রতিষ্ঠানছিলেন। তাদের কাছ থেকে বহুজন সাংবাদিকতা শিখেছেন। পরেতারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তারা তাদের জ্ঞান, মেধা, দেশপ্রেম ওসাহসিকতা দিয়ে সাংবাদিকতা করে গেছেন। বাংলাদেশেরস্বাধীনতাকে তরান্বিত করেছেন। ১৯৭৬ সালে খন্দকার আবদুল হামিদসাহেব ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে ব্রিটেন সফর করেছেন এবং সেইবছরই আপনাদের লন্ডন থেকে বাংলা পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকতায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ‘একুশে পদক’এ ভূষিত হয়েছেন। আবদুস সালাম ও খন্দকারআবদুল হামিদ কিংবদন্তি এই দুই মহান সাংবাদিককে আমি শ্রদ্ধাকরি, সন্মান করি। তাদের সাথে কারো তুলনা হয় না। কারো সাথেকারো তুলনায় আমি বিশ্বাস করিনা। দেশ ও জাতির জন্য তাদেরঅবদান আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করি। আমি তাদের রুহেরমাগফেরাত কামনা করি।
লন্ডন বাংলা:- আপনি সাংবাদিক/সম্পাদক, মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার এবং ব্যবসায়ী। একই সাথে তিনটা পরিচয়আপনার। বলা হয় বাংলাদেশের প্রিন্টিং শিল্পে আপনি একজনজীবন্ত কিংবদন্তি। প্রেস লাইনে বা প্রিন্টিং মেশিনারিজ এ বাংলাদেশেটপ যে দু‘জন মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার আছেন আপনি তাদেরএকজন। বুয়েটের ছেলেরা আপনার প্রেসে এসে কাজ শিখেন।বাংলাদেশের প্রায় সকল প্রিন্টিং প্রেসে আপনার লোক আছেন।আপনার প্রশিক্ষিত লোকেরাই দেশের বেশিরভাগ প্রিন্টিং প্রেসগুলোপরিচালনা করছেন। চিটাগাং, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, বগুড়ায় এমনকিছু প্রিন্টিং প্রেস আছে সমস্যা হলে যেগুলোতে আপনি বা আপনারলোক ছাড়া অন্য কারো হাত দেয়া নিষেধ আছে। এই ব্যাপারগুলোআপনি কিভাবে দেখেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– প্রিন্টিং শিল্পে জীবন্ত কিংবদন্তি বা প্রেসলাইনে–প্রিন্টিং মেশিনারিজ এ আমি বাংলাদেশের টপ দু‘জনইন্জিনিয়ার এর একজন কিনা জানিনা। এই ব্যাপারগুলো আমিসেভাবে দেখিনা। প্রতিদিন চলতে চলতে একটু একটু করে শিখেছি, নিজ চেষ্টায় শিখেছি। এখনো শিখছি, কাজকে কাজ হিসেবেই দেখছি।আমি সব সময় কাজকে কাজ হিসেবেই দেখি। যখন যে কাজটাই করি–নিষ্ঠার সাথে করি, সততার সাথে করি। সফলতার জন্য কঠোরপরিশ্রম করি। মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। বাংলাদেশেরপ্রিন্টিং শিল্পে সামান্য অবদান রাখার চেষ্টা করি। দেশের জন্য সামান্যহলেও কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করি। আমার মত এমন অনেকেইআছেন যারা দেশের জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে কন্ট্রিবিউট করারচেষ্টা করছেন। আসল কথা হলো মানুষের জন্য কিছু করা, দেশেরজন্য কিছু করা। মানুষের জন্য কিছু করতে না পারলে, দেশের জন্যকিছু করতে না পারলে কোন পরিচয়ই আপনাকে তৃপ্তি দিবেনা।আপনার কোন পরিচয়েই কারো কিছু যায় আসবেনা। বাংলাদেশেরবিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসের বিভিন্ন পর্যায়ে আমার লোকজন আছেন, চাকরি করছেন, প্রেস চালাচ্ছেন, সাংবাদিকতা করছেন। তারা দেশেরপ্রিন্টিং শিল্পে যে যার অবস্থান থেকে অবদান রাখছেন, দেশের জন্যকন্ট্রিবিউট করছেন। দেশের যে প্রিন্টিং প্রেসগুলো আমার দেয়া, এসেম্বল বা সেটআপ করা সঙ্গত কারণেই সেই প্রেসগুলো আমারলোকজন দেখাশোনা করছেন। কোন সমস্যা হলে তারাই দেখছেন।ফলোআপ করছেন। দেশের প্রিন্টিং শিল্পে সামান্য কন্ট্রিবিউশন ছাড়াএসব কিছুকে আমি বাড়তি কোন অর্জন হিসাবে দেখিনা।
লন্ডন বাংলা:– আপনার নিজস্ব প্রেস আছে। আপনারনিজের প্রেসে আপনি নিজের পত্রিকা ছাড়াও অন্যান্য পত্রিকা ছাপেন।আপনি ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রিন্টিং প্রেস ওপ্রেসের বিভিন্ন মেশিনারিজ বাংলাদেশে নিয়ে এসে এসেম্বল করে বিক্রিকরেন, ব্যবসা করেন। আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী। কিন্তুবাংলাদেশে পত্রিকা প্রকাশনা সাধারণত কোন লাভজনক ব্যবসা না।বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, অতীতে যাঁরা সংবাদপত্র প্রকাশ করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেছেন। বড় বড়রাজনীতিক তাঁদের নিজেদের পত্রিকা প্রকাশ করেছেন এই জন্য যেতাঁরা লক্ষ করেছেন, তাঁদের নীতি–আদর্শ ও কর্মসূচি নির্দল ও ভিন্নমতাদর্শী কাগজে যথাযথভাবে স্থান পায় না। কখনো বিকৃতভাবে বাখণ্ডিতভাবে প্রকাশিত হয়। সে জন্য তাঁরা নিজেরা পত্রিকা বেরকরেছেন। গান্ধী ‘হরিজন’ ও ‘Young India’ বের করেছেন, জিন্নাহ‘Dawn’ বের করেছেন, ফজলুল হক ‘নবযুগ’, সোহরাওয়ার্দী‘ইত্তেহাদ’, মাওলানা আকরম খাঁ ‘আজাদ’, মাওলানা ভাসানী‘ইত্তেফাক’ ও ‘হক–কথা’বের করেছেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু‘ফরওয়ার্ড‘ বের করেছেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশও পত্রিকা বেরকরেছেন। অর্থাৎ প্রায় সব প্রধান নেতাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পত্রিকাবের করেছেন। এর বাইরে যারা করেছেন তারা সাধারনত তাদেরঅন্যান্য বাণিজ্যিক স্বার্থে করেছেন। নিখাদ দেশ প্রেমের জায়গাথেকেও কেউ কেউ পত্রিকা বের করেছেন। আপনি কেনো পত্রিকা বেরকরেছেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আইনাস্টাইন দিনের মধ্যে শতবার নিজেকেএকথা মনে করিয়ে দিতেন যে, আমার ভেতরের ও বাইরের জীবনঅন্যের উপর নির্ভরশীল। আমি যে কাপড় পরি সেটা অন্য কেউআমার জন্য বুনন করে। আমি যে খাবার খাই সেই খাবার জমি চাষকরে অন্যেরা উৎপাদন করে। কাজেই এই মানুষগুলোর কাছে আমিচরমভাবে ঋণী। আমাকে এই মানুষগুলোর ঋণ পরিশোধ করতে হবে।হাজারগুণ বেশি পরিমাণ পরিশোধের জন্য আমাকে সচেষ্ট হতে হবে।আইনাস্টাইন এর মত দিনের মধ্যে শতবার না হলেও এই কথাগুলোআমি মাঝে মধ্যেই ভাবতাম। ভাবতাম এই দেশের মানুষের কাছেআমি ঋণী। বিশেষ করে শেরপুরের মানুষের কাছে আমি চরমভাবেঋণী। আমি সেই ঋণ পরিশোধের কথা সব সময় ভাবতাম।আপনারা হয়তো জানেন, এই শেরপুরেই ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে ‘চারু প্রেস’নামে পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের প্রথম মূদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয়েছিলো।১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে এই চারুপ্রেস থেকে জমিদার হরচন্দ্র রায় চৌধুরীরসম্পাদনায় “সাপ্তাহিক চারুবার্তা” পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিলো।নয়আনী জমিদার চারুচন্দ্র চৌধুরীর এই ছাপাখানা ছিল। এইছাপাখানাকে ঘিরে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রতৈরী হয়েছিলো, বিকাশ হয়েছিলো। এ চারু প্রেসেই মীর মোশারফহোসেনের বিষাদ সিদ্ধু গ্রন্থটি প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল। এমনকি ভাইগিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদকৃত পবিত্র ‘আল কোরআন‘ এর প্রথমখন্ড এই চারু প্রেসেই মুদ্রিত হয়েছিলো। অর্থাৎ শেরপুরের সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা ও মুদ্রণ শিল্পের একটা গৌরবজনক অধ্যায়ছিলো। সেই গৌরবজনক অধ্যায়কে ফিরিয়ে আনতেই আমি ‘দৈনিকতথ্যধারা’ বের করেছি। দেশের শিল্প, সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও মুদ্রণশিল্পে আরো বেশি অবদান রাখতেই আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি এবংপত্রিকা প্রকাশনায় এসেছি। আমার কোন রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিকউদ্দেশ্য নেই। তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা বাণিজ্যিক স্বার্থে পত্রিকাবের করাটা দোষের কিছু না। আমি দৈনিক পূর্বকোণ, মর্ণিং সান থেকেশুরু করে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সেইবিচিত্র অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই পত্রিকা বের করবার সাহস পেয়েছি।নিখাদ দেশ প্রেমের জায়গা থেকেই আমি পত্রিকা বের করেছি। শ্রদ্ধেয়আবু বক্কর সাহেব, আবদুর রেজ্জাক সাহেবও তাই করেছেন।রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থে তারা পত্রিকা বের করেননি। তারাওনিখাদ দেশ প্রেমের জায়গা থেকেই পত্রিকা বের করেছেন। দেশেরমানুষ তথা শেরপুরের মানুষের জন্যই করেছেন। সাপ্তাহিক পত্রিকাশেরপুরে আগে থেকেই ছিলো। শেরপুর জেলায় একটি মানসম্পন্নদৈনিক পত্রিকার প্রয়োজন ছিলো। একটি মান সম্পন্ন প্রিন্টিং প্রেসেরপ্রয়োজন ছিলো। সেই অভাব পূরণ করতেই আমি পত্রিকা প্রকাশনায়এসেছি। এখনও অনেক পথ চলার বাকি আছে। সেই পথটুকু চলারজন্য সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।
লন্ডন বাংলা:– বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস– এই তিনজনের মধ্যে একটা মিল আছে। তারা তিনজনইইউনিভার্সিটি ড্রপ আউট স্টুডেন্ট। জুকারবার্গের তাও ব্যাচেলর ডিগ্রিআছে, অন্য ২ জনের তাও নেই। নজরুল, আইনস্টাইন, বিল গেটস, জাকারবার্গ, স্টিভ জবস এরা সবাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেড্রপ আউট হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ মেট্রিক ফেইল করেছেন। বিল গেটসতার এক বক্তৃতায় হার্ভার্ডের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, কারো ভেতরযদি ক্রিয়েটিভিটি থাকে তাহলে শুধু শুধু একটা সার্টিফিকেটের জন্যসময় নস্ট না করে এখনই লেগে পড়েন, বিল গেটস হতে পারবেন।আর যদি ডিগ্রির জন্য বসে থাকেন তাহলে সেই ডিগ্রি নিয়েবিলগেটসের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন। তিনি আরো বলেছেন , ‘আমি অনেক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছি, কিন্তু কখনও প্রথম হতেপারিনি। অথচ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীরা আমারকর্মচারী। একাডেমিক শিক্ষার এই ব্যাপারগুলো আপনি কিভাবেদেখেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– কেবলমাত্র ড্রপ আউট ও ফেইল করলেইজীবনে সফল হওয়া যাবে, ব্যাপারটা এমন না। বিখ্যাত ড্রপআউটদের সাথে আরো যারা ড্রপ আউট হয়েছেন তারা সবাই কিন্তুবিখ্যাত বা সফল হননি। রবীন্দ্রনাথের সাথে আরো যারা ফেইলকরেছেন তারাও সবাই রবীন্দ্রনাথ হননি। বিল গেটস, মার্কজুকারবার্গ, স্টিভ জবস, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন –এদেরপ্রত্যেকের সফলতার পেছনে ছিল জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন। জীবনে বড়হতে হলে স্বপ্নবাজ হওয়া খুবই জরুরী। ড্রপ আউট মানে লাইফ আউটনয়, ক্যারিয়ার আউট নয়। বাংলাদেশে সফল বা প্রতিষ্ঠিত এমনঅনেক মানুষ আপনি আছেন যারা ঠিক মত তিন বেলা খেতেপারেননি, খুব বেশি পড়াশুনা করতে পারেননি কিন্তু জীবনে স্বপ্নলালন করতে তারা ভুল করেননি। সোনার চামচ মুখে নিয়ে যাদেরজন্ম নয় তারা যে জীবনে বড় কিছু করবে না তাও কিন্তু নয়। যারাজীবনে বড় হয়েছেন তারা তাদের স্বপ্নকে লক্ষ ধরে নিয়েই কাজকরেছেন। সেই সাথে পরিশ্রম আর লেগে থাকার বিনিময়ে সফলতাওপেয়েছেন। জীবনে বড় হতে হলে অনেক ডিগ্রি থাকতে হবে এমন কোনকথা নেই। অনেক ডিগ্রি নিয়ে যেমন অনেক ষ্টুডেন্টও জীবনে বড় কিছুকরেছেন। তেমনি ডিগ্রি বিহীন অনেক ঝরে পড়া ষ্টুডেন্টও জীবনেঅনেক বড় কিছু করেছেন। কারণ তাদের স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাস ছিলআকাশের ওপারে। আন্ড্রু কার্নেগী গরীব ঘরের ছেলে ছিলেন। তিনিএকটি খামারে কাজ করতেন এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে তিনিআমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন। টমাস এলভাএডিসনকে ছোটবেলায় সবাই বোকা এবং সেই সাথে গাধাও বলত।তিনি পড়াশোনায় একদমই ভালো ছিলেন না। তবুও তিনি একজনবিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হতে পেরেছিলেন। বিল গেটস, স্টিভ জবস ড্রপআউট করে নিজের চেষ্টায় বিল গেটস, স্টিভ জবস হয়েছেন। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইনও নিজের চেষ্টায় নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন হয়েছেন। মেধায়, যোগ্যতায়, মানসিক উৎকর্ষতায়সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। আসল কথা আপনাকে চেষ্টা করতে হবে।মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে লেগে পড়েকাজ করতে হবে। কাজকে ভালবাসতে হবে। ব্যর্থ হলেও থেমে নাথেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করতে হবে। আপনারভেতর যদি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন, স্টিভ জবস, জাকারবার্গ, বিলগেটসের মত ক্রিয়েটিভিটি থাকে তাহলে আপনিএকভাবে চেষ্টা করবেন। আর যদি না থাকে অন্যভাবে চেষ্টা করবেন।আসল কথা হলো চেষ্টা করা। আপনি একাডেমিক পড়াশোনা করেওচেষ্টা করতে পারেন। আবার ভ্যালিড কোন রিজন থাকলে ড্রপ আউটহয়েও চেষ্টা করতে পারেন। শুরুটা ভালো না হলেও শেষটা ভালোকরার চেষ্টা করতে পারেন। যখন যেটাই করেন, শেখার চেষ্টা করেন, জানার চেষ্টা করেন, জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করেন। শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জনকরার জন্য পড়াশোনা করার কোন মানে হয়না। আপনি ৪ বছরমেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং পড়লেন, একটা ডিগ্রি অর্জন করলেনকিন্তু প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডে আপনি কোন কাজ করতে পারলেন না, তাহলে এই শিক্ষা বা এই ডিগ্রির কোন মানে হয়না। আপনি পরীক্ষারখাতায় কত নাম্বার পেলেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনারহিসাবে আপনার কত নাম্বার পাওয়ার কথা ছিলো, আর আসলেআপনি কত নাম্বার পেলেন। কতটুকু প্রত্যাশা করছেন আর কতটুকুঅর্জন হচ্ছে এটাই হচ্ছে শিক্ষা। একাডেমিক শিক্ষার এই ব্যাপারগুলোআমি এভাবেই দেখি।
লন্ডন বাংলা:– আপনারা সকল ভাই বোনেরাই কমবেশি লিখেন এবং খুব ভালো লিখেন। লেখালেখির এই অভ্যাসটাআপনারা কার কাছ থেকে পেয়েছেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– লেখক হওয়ার আগে ভালো পাঠক হতে হয়।ভাই বোনেরা সবাই এই বিষয়টা জানেন এবং একাডেমিক পড়াশোনারবাইরেও সবাই প্রচুর পড়াশোনা করেন। পত্র পত্রিকা, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মগ্রন্থ, সায়েন্স জার্ণাল, ম্যাগাজিন, লিটল ম্যাগ থেকে শুরু করে হাতের কাছে যা পান তাইপড়েন। ছোট বেলা সবাই আব্বাকে এভাবে পড়তে দেখেছেন। আব্বারপান, বিড়ি, সিগারেটের নেশা ছিলোনা। আব্বার একটাই নেশা ছিলবই পড়া। ছুটির দিনে ঘরের বারান্দায়, পুকুর পাড়ে বা গাছের তলায়ইজি চেয়ারে বসে ধ্যানমগ্ন হয়ে আব্বা সকাল থেকে সন্ধ্যা বই পড়তেন।মাঝ রাতে কারো ঘুম ভেঙে গেলে আমরা দেখতাম আব্বা তখনওপড়ছেন। সফরে গেলেও কয়েকটা বই নিজের সাথে রাখতেন।এভাবেই এসব দেখেই মনে হয় বই পড়া আর লেখালেখির অভ্যাসটাসবার মাঝে কম বেশি গড়ে উঠেছে। ভালো পাঠক হওয়ার পাশাপাশিসবাই কম বেশি লিখছে।
লন্ডন বাংলা:– আমরা যদি ভুল না জেনে থাকি তাহলেআজ থেকে ৩৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে আপনার বাবাজনাব মো: নওয়াব আলী খান শেরপুর জেলায় যিনি ‘খান স্যার‘নামেই বিখ্যাত ছিলেন তিনি জান্নাতবাসী হয়েছেন। মৃত্যুর পরে অনেক বিখ্যাত মানুষকেও মানুষ ভুলে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত মানুষ আপনারবাবাকে মনে রেখেছেন। এমনকি এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাওআপনার বাবাকে ‘খান স্যার’ বলে এক নামে চিনেন। আপনারবাবার ছাত্ররা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তারাখান স্যারের কথা তুলতেই এখনও চোখের পানি ফেলেন। তাদের প্রিয়‘খান স্যারের’ জন্য দোয়া করেন, প্রার্থনা করেন। এর কারণ কী বলেআপনি মনে করেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আব্বা তার ছাত্রদের জন্যই ‘খান স্যার’ হয়েছেন। ছাত্ররা বড় হলে শিক্ষকও বড় হন। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানযেমন নিজে নিজে বড় হয়না। ছাত্ররা বড় করেন। তেমনি আব্বা একটাইনষ্টিটিউট ছিলেন। আব্বার ছাত্ররাই আব্বাকে বড় করেছেন। আব্বারছাত্ররা কেউ জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, কেউ বিশিষ্ট শিল্পপতি হয়েছেন, কেউ স্বনামধন্য ডাক্তার হয়েছেন, কেউ স্বনামধন্য ইন্জিনিয়ার হয়েছেন, স্বনামধন্য শিক্ষক হয়েছেন, আমলা হয়েছেন, বিজ্ঞানী হয়েছেন, ব্যাংকার হয়েছেন, ব্যবসায়ী হয়েছেন, কবি ও লেখক হয়েছেন, সাংবাদিক হয়েছেন, আর্মি অফিসার বা সৈনিক হয়েছেন। যিনি যেপেশাতেই আছেন, দেশ বিদেশে সাফল্যের চরম শিখরে অবস্থানকরছেন। আব্বা শুধু শিক্ষাবিদ বা শিক্ষকই ছিলেন না। তিনি একজনপ্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ছিলেন। একজন ভিশনারী ছিলেন। বুদ্ধিজীবীতালিকায় নাম থাকায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনিআত্মগোপনে ছিলেন। আমাদের সময়ের শিক্ষকগণ সবাই অসাধারণমানুষ ছিলেন। আব্বা দেখতে যেমন অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন তেমনিঅনেক সুন্দর মনের একজন মানুষ ছিলেন। আব্বার গায়ের রঙ, ধারালো নাসিকা, চওড়া কপাল, ভরাট মুখ, উচ্চতা– একজনটিপিক্যাল পাঠান সন্তান যেমনটা হোন আব্বা দেখতে ঠিক তেমনটাইছিলেন। এ কারণে কোন সমাবেশ বা মাহফিলে গেলে আব্বার উপরসবার চোখ পড়তো। শারীরিক অবয়ব, উচ্চতা, কথাবার্তা ওহাটাচলায় আব্বা খুব সহজেই মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিতেন। দৈহিকগঠন, বেশভূষা ও মুখাবয়বের কারণে প্রথম দর্শনেই তিনি মানুষেরশ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করে নিতেন। আব্বা বিপুল অর্থ আয়করেননি। তবে সারা জীবন তিনি যেটা আয় করেছেন, সেটা হলোভাবমূর্তি। ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুরে আব্বার সাথেপায়ে হেঁটে চলাফেরা করা খুব কঠিন ছিল। মানুষের সালামের জবাবদেয়া ও তাদের সাথে হাত মিলানোর জন্য আব্বাকে পদে পদে থামতেহতো। সততা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দূরদর্শিতা, পরিবারের প্রতিযত্নশীল, বন্ধুবৎসল, দৃঢ়চেতা মনোভাব—সব দিক দিয়ে আব্বাএকজন বিরল মানুষ ছিলেন, অনন্য একজন মানুষ ছিলেন। সবাই জানেন, আব্বা খুবই মানবিক এবং পরোপকারী একজন মানুষছিলেন। তিনি মানুষের বিপদে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়েদিতেন। আব্বার কাছে কেউ সাহায্য চাইতে এসেছে আর আব্বা সাহায্যকরেননি এমনটা কখনও দেখিনি। প্রতিবেশী কেউ অসুস্থ্য হলে বাকারো মৃত্যুর খবর পেলে সবার আগে ছুটে যেতেন। তাৎক্ষণিক রান্নাকরিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার পাঠাতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে আনতেন, বিনা বেতনে ভর্তি করতেন।দুর দুরান্তের ছাত্রদের এবং আর্থিকভাবেঅসচ্ছল পরিবারের ছাত্রদের নিজ বাড়িতে জায়গির রেখেপড়াশোনার সুযোগ করে দিতেন। এভাবে মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো জালাতেন। কাছের বা দুরের সব মানুষকে বিশ্বাস করতেন এবংখুব সহজে মানুষকে আপন করে নিতেন। আব্বা প্রথমে মানুষের কথাভাবতেন তারপর পরিবারের কথা ভাবতেন। যে কারণে আব্বার তেমনকোন সঞ্চয় ছিলোনা। আব্বার কাছ থেকে আমরা এই বিষয়গুলোশিখেছি। আব্বার চামড়ার নিচে পুরোটাই ছিলো কলিজা। তিনি তারছাত্র/ছাত্রীদের ‘চিকেন হার্টেট‘ হতে নিষেধ করতেন। ছাত্র/ছাত্রীদের মনসব সময় বড় রাখতে বলতেন, দৃষ্টি প্রসারিত রাখতে বলতেন। ছাত্র/ছাত্রীরা তার জীবনের প্রাণ ছিলেন। তিনি ছাত্র/ছাত্রীদের অত্যন্ত প্রিয়শিক্ষক ছিলেন। ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। আব্বাএকাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও ছাত্র/ছাত্রীদের অন্যান্য বিষয়েপড়াশোনার জন্য উৎসাহিত করতেন। ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে ভরাটগলায় পৃথিবীর নানা বিষয়ে কথা বলতেন এবং কারো সাথে কথাবলার সময় সকল কথা পরিস্কার করে বলতেন। আব্বা প্রচন্ড স্বরণশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রত্যেক ছাত্র/ছাত্রীর নাম মনেরাখতেন এবং ছাত্র/ছাত্রীদের নাম ধরে ডাকতেন। তার জীবনে পাওয়াশ্রেষ্ঠ/মেধাবী ছাত্রদের কথা আম্মার কাছে বলতেন। মেধা, বুদ্বিমত্তা, সাহস কারো মধ্যে দেখলে তিনি খুব খুশি হতেন এবং আমাদের কাছেপ্রশংসা করতেন। আব্বা কিছু দিলে আত্মীয় অনাত্মীয়, পরিচিতঅপরিচিত সবাইকে সমান সমান করে দিতেন। মানুষের মাঝে তফাতকরতেন না। আমাদের ভাই–বোনদেরও যখন যা দিতেন সবাইকেসমান সমান করে দিতেন। সমতার এই বিষয়টি আমরা ভাই–বোনেরাসবাই ধারণ করছি। আব্বার ছাত্র/ছাত্রীরাও ধারণ করছেন। আব্বা যেমূল্যবোধ শিখিয়ে গেছেন, আমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠান সেঅনুযায়ীই পরিচালিত হচ্ছে। আব্বার মধ্যে পরশ্রীকাতরতা, স্বার্থপরতা, আবেগস্বর্বস্বতা, গলাবাজি, নীচুতা ইত্যাদি ছিল না। দেশও দেশের মানুষকে নিয়ে আব্বা অনেক স্বপ্ন দেখতেন। বিশেষ করেশেরপুরের মানুষকে নিয়ে, বৃহত্তর চরাঞ্চলের মানুষকে নিয়ে অনেক স্বপ্নদেখতেন। আব্বা সব সময় বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষের জয় দেখতে চাইতেন। ছাত্র/ছাত্রীদের জয় দেখতে চাইতেন। আব্বা আত্মীয়স্বজন নিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন, মানুষ নিয়ে থাকতেভালোবাসতেন, ছাত্র/ছা্ত্রীদের নিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন। যেকারণে পুরো বছর জুড়েই বাড়িতে আত্মীয়–স্বজন, মানুষজন ও ছাত্র/ছাত্রীরা আনাগোনা করতেন। আব্বা আম্মার সান্নিধ্য পেতে সবাইপছন্দ করতেন। আব্বা বটবৃক্ষের মত ছাত্র/ছাত্রীদের ছায়া দিতেন, বিপদগ্রস্ত মানুষকে অন্তর দিয়ে আগলে রাখতেন। কমিটমেন্ট, সততা, নৈতিকতা,মূল্যবোধ, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও ছাত্র/ছাত্রীদের প্রতি যত্নশীলআচরণে তিনি শিক্ষকদের আইকনে পরিণত হয়েছিলেন। আব্বা যেমনধার্মিক ছিলেন তেমনি তিনি প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক মানুষছিলেন। আব্বা তার সময়ের তুলনায়, তার সময়ের মানুষদের তুলনায়চিন্তা চেতনায় অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন। আব্বা বরাবরই কাজপাগল মানুষ ছিলেন। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলার সময়তার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ সমস্ত কিছু একসাথে করেনিজেকে একবারে সপে দিয়েছিলেন। আব্বা বালিকা বিদ্যালয়ের স্বপ্নদেখেছিলেন আব্বা মারা যাওয়ার পর আব্বার সহশিক্ষকগণ কাজীস্যার ও অন্য স্যাররাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ আব্বার সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন। আমাদের শ্রদ্বেয় শিক্ষকগণ সব সময় আমাদের পাশেছিলেন। খান স্যারের ছেলে মেয়েদের এখনো তারা খান স্যারেরচোখেই দেখেন। আব্বা মহিলা কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। আমরা না হলেও ভবিষ্যতে কেউনা কেউ আব্বার সেই স্বপ্ন পূরণ করবেন। আব্বা বৃহত্তর চরাঞ্চলেরমানুষকে নিয়ে প্রচুর স্বপ্ন দেখতেন। শেরপুরের মানুষকে নিয়ে অনেকস্বপ্ন দেখতেন, দেশের মানুষকে এবং এই দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন।আব্বা বৃহত্তর চরাঞ্চলের প্রতিটি ইউনিয়নে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। শেরপুরে রেল লাইনসহআন্তজার্তিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদেখতেন, গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁসা নালিতাবাড়ির নাকুগাওএকদিন আর্ন্তজাতিক মানের স্থল বন্দর হবে এবং এই বন্দরকে ঘিরেদেশের মানুষের বিশেষ করে শেরপুরের মানুষের জীবনমান বদলে যাবেবলে বিশ্বাস করতেন। তিনি বলতেন, ‘নাকুগাও এমন একটি জায়গায়অবস্থিত, যা পাড়ি দিয়ে পূর্বদিকে গেলে আসামের গোয়াহাটি, মেঘালয়ের শিলং , আর পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং। এজায়গাটা স্থল বন্দর হলে আসাম পাড়ি দিয়ে সরাসরি খুব সহজেভুটান যাওয়া যাবে। ভুটান থেকে চায়না পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্য বিস্তৃত হবে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মাথা তুলে দাড়াবে।বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। ব্যবসা বাণিজ্যে নতুনদিগন্ত উন্মোচিত হবে।‘ আব্বা মাঝে মাঝে আফসোস করে বলতেনযে, ‘শুধুমাত্র প্রচারণার অভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গাঅবহেলায় পরে আছে।‘ আশার কথা ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ–ভারতের পণ্য আমদানি–রফতানি কার্যক্রম ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহনাকুগাও স্থলবন্দর স্থাপিত হয়েছে। এসব কারণেই হয়তো মানুষআব্বাকে বিশেষভাবে মনে রেখেছেন। আমরা কেউ–ই একদিনথাকবোনা কিন্তু আব্বার লিগ্যাসি প্রজন্মের প্রজন্ম টিকে থাকবে বলেআমার বিশ্বাস। আব্বার ছাত্র/ছাত্রীরা দীর্ঘদিন থেকেই তাদের ‘খান স্যার’ কে নিয়ে একটা স্বরণীকা বের করার তাগিদ দিচ্ছেন। আগামীবছর আব্বার মৃত্যুর ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটা স্বরণীকা বা স্বরণসংখ্যা বের করার কথা ভাবছি। এই উপলক্ষে দেশ বিদেশেঅবস্থানরত আব্বার সকল বন্ধু–বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনসহ ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে লেখা পাঠানোর অনুরোধ করছি।
লন্ডন বাংলা:– আপনার ভাই–বোন, আত্মীয়–স্বজন, কাজিনরা কেউ শিক্ষক, কেউ ডাক্তার, কেউ ইন্জিনিয়ার, কেউব্যাংকার, কেউ বিসিএস ক্যাডার, কেউ কর্ণেল, কেউ মেজর, কেউলেখক, দেশের বাইরেও কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, কেউস্টুডেন্ট ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট, আপনি নিজে সাংবাদিক, সম্পাদক, বিজন্যাসম্যান অর্থাৎ সকল পেশাজীবি মানুষই আপনাদেরফ্যামিলিতে আছেন। আমাদের দেশে দেখা যায় কোন ফ্যামিলির কেউএকজন সামান্য বিসিএস ক্যাডার হলে বা ভালো কোন চাকরি বাব্যবসা করলে, কারো সামান্য কিছু টাকা পয়সা হলে সেই ব্যক্তি, তারফ্যামিলি ও তার চৌদ্দ গোষ্ঠীর মাটিতে পা পড়ে না। তারা অন্যদেরতু্চ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। এই তুই আমাকে চিনস বলে চিৎকারকরেন। গরীব আত্মীয় স্বজনদের এড়িয়ে চলেন। সেই জায়গায়আপনাদেরকে খুবই ব্যতিক্রম মনে হয়। আপনাদের কারো কোনঅহংকার নেই। কর্ণেল আমিনুল ইসলাম মার্সিডিজ থেকে নেমে ঠেলাগাড়ি ধাক্কা দেন। আক্রাম হোসেন ও আপনাকে সবাই “ডাউন টুআর্থ” অর্থাৎ মাটির মানুষ হিসাবেই জানেন। আমাদের প্রথম প্রশ্ননিরহংকার থাকার এই শিক্ষাটা আপনারা কার কাছ থেকে পেয়েছেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন এসব নিয়ে যারা অহংকার করেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনিকী বলবেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– খুব সহজ প্রশ্ন করেছেন। নিরহংকার থাকারএই শিক্ষাটা আমরা পরিবার থেকেই পেয়েছি। নানা–নানীর কাছ থেকেপেয়েছি, দাদা–দাদীর কাছ থেকে পেয়েছি, বাবা–মায়ের কাছ থেকেপেয়েছি। মামা–মামী, খালা–খালু, চাচা চাচী সবার কাছ থেকেইপেয়েছি। মানুষের জীবনের যেখানে কোন নিশ্চয়তা নেই সেখানেজীবনের কোন অর্জন নিয়েই অহংকার করার কিছু নেই। যারা করেনতারা ভুল করেন। যে গাছে যত ফল ধরে সে গাছ মাটির দিকে ততঝুকে পড়ে। আমার বড় খালু আলী আজম স্যারের নাম নিশ্চয়শুনেছেন। তিনি একজন অসাধারণ শিক্ষক ও অভিভাবক ছিলেন।অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন। শেরপুরের শিক্ষা বিস্তারে তিনি ব্যাপকঅবদান রেখেছেন। তিনি সারা জীবন একইভাবে চলেছেন। সন্তানরাছাত্র অবস্থায় যেভাবে চলেছেন, সন্তানরা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরওঠিক একইভাবে চলেছেন। একইভাবে বাজার করেছেন, একই জুতা, একই কাপড় পড়েছেন। সন্তানদের পাঠানো উপহার পর্যন্ত তিনিঅভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করে দিয়েছেন। শ্রেষ্ঠ অভিভাবক ও শ্রেষ্ঠশিক্ষকদের একজন হয়েও তিনি খুবই সাদামাটা জীবযাপন করেছেন।আজীবন নিরহংকার থেকে খুবই সহজ সরল জীবন যাপন করেছেন।গত ডিসেম্বরে তিনি জান্নাতবাসী হয়েছেন। আলী আজম স্যারকেকিন্তু এক নামে শেরপুরের সকল মানুষই চিনেন। আপনি যতই বড়হোননা কেনো সব সময় মনে রাখবেন আপনার থেকেও বড় কেউ নাকেউ আছেন। এই তুই আমাকে চিনস বলে চিৎকার করে কেউকোনোদিন নিজেকে চেনাতে পারেনি। এভাবে কেউ কাউকে চেনাতেপারেনা। যারা এভাবে চেনানোর চেষ্টা করেন তারা ভুল করেন।আসলে মূর্খ যখন হঠাৎ বিত্তবান হয়ে যায়, সে নিজের লোকেদেরসংসর্গ ও তাদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। নিজেকে তখন সেসাধারণের চেয়ে আলাদা মনে করে। আমাদের সমাজেও কিছু কিছুমানুষের মধ্যে এমন আচরণ পরিলক্ষিত হয়। যা খুবই দু:খজনক।যারা এমনটা করেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই কথা—নম্র হও, মানুষকে সহায়তা করো আর বিনীত হও। কুরআন–সুন্নাহর বর্ণনায়অহংকার অনেক বড় গোনাহ। যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকারথাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। আর এতেই প্রমাণিত হয়যে, অহংকার মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায় এবং জান্নাতেযাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
লন্ডন বাংলা:– আপনার পরিবারে নানাগুণে গুণান্বিতঅনেক গুণী মানুষ আছেন। আপনি নিজেও একজন গুণী মানুষ।আমরা যদি সকল গুণ থেকে শুধুমাত্র একটা গুণের কথা বলতে বলিআপনি সবার আগে কোন গুণটার কথা বলবেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– একটা গুণের কথা বলতে বললে সবারআগে আমি কারো সমস্যায় বা মানুষের বিপদ–আপদে পাশেদাড়ানোর কথা বলবো, দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলবো। এটা কম বেশিসবাই করেন। কারো উপকার করে যেহেতু অন্যের কাছে বলতে নেইসেহেতু এক্ষেত্রে আমি আমার পরিবার থেকেই একটা উদাহরণ দিবো।আমার কাকা ফুপুরা ছোট থাকতে বড় ভাই–ভাবী অর্থাৎ আমার বাবা–মা তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। আবার আমার বাবা মারা গেলে কাকাফুপুরা এগিয়ে এসেছেন। বিশেষ করে আমার সেজ কাকা ফজলুররহমান খান আব্বা যে সকল প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সেক্রেটারিরদায়িত্বে ছিলেন তিনি সে সকল প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সেক্রেটারিরদায়িত্ব নিয়েছেন। আব্বা অন্যান্য গ্রামের পাশাপাশি নিজ গ্রামে একটাকলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কাকা আব্বার সেই স্বপ্ন পূরণকরেছেন।
লন্ডন বাংলা:– আপনার পূর্বপুরুষগণ আফগান(পাশতুন) ছিলেন। মধ্যযুগে ধর্ম প্রচারের জন্য বাংলাদেশেএসেছিলেন। কারো কারো মতে তারা সূফী দরবেশ ছিলেন। আপনিযাদের দেখেছেন তাদের কেউ কি আধাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– শুধু ধর্ম প্রচারের সাথেই জড়িত ছিলেন নাসেই সাথে হালাল উপার্জনে জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যবসা বাণিজ্যেরসাথেও জড়িত ছিলেন। নবী রাসুলগণ যেমন ধর্ম প্রচারের পাশাপাশিব্যবসা করতেন, এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতেন আমারপূর্বপুরুষগণও তাই করতেন। তারা নবী রাসুলগণকে অনুসরণকরতেন। আমার পূর্বপুরুষগণ যেমন আফগানিস্তান থেকেবাংলাদেশে এসেছেন তেমনি পূর্বপুরুষদের একজন এক দাদাবাংলাদেশ থেকে আবার একই উদ্দেশ্যে আসাম চলে গেছেন। তখনঅবশ্য ভারতবর্ষ এত ভাগে ভাগ ছিলোনা। কথিত আছে ইরাকেরবিখ্যাত আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী যখনসিরাজগঞ্জে আসেন, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তখনতার সঙ্গে আসাম গিয়ে একসাথে তারা আমার সেই দাদার বাড়িতেইউঠেন। সেখান থেকেই ১৯০৩ সালে তিনি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তহন। পরে ইসলামি শিক্ষার জন্য তিনি দেওবন্দে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ হলে এরপর আমার আরেক দাদার আমন্ত্রণে মাওলানা ভাসানী শেরপুরে এসে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। আমাদের গ্রামের বাজারযেটাকে এখন কামারের চর বাজার বলা হয় সেটা এক সময় নদী বন্দরছিলো। প্রায় ৮/৯ মাইল প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্যসাগর। ব্রহ্মপুত্র নদকে কেন্দ্র করে শেরপুরের সেই বন্দর খুবইজমজমাট ছিলো। সেকালে ইংল্যান্ডের ডান্ডি ও কলকাতার সাথেশেরপুর ও চন্দ্রকোণার সরাসরি নৌ–যোগাযোগ ছিল। ১৮৯৭খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন এ জেলায় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্রেরগতিপথ পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে যমুনা নদীর সাথে মিশে যায় এবংঅসংখ্য দালানকোঠা, বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়ে যায়। এতে শেরপুরেরভৌগোলিক মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটে। সেই সাথে বন্দরেরও পরিবর্তনঘটে। তবুও আগেকার মানুষ এখনো এই বাজারকে বন্দর নামেইডাকেন। তো ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার্থে আমার পূর্বপুরুষগণবসবাসের জন্য বন্দরের পাশের শান্ত, ছায়া–সুনিবিড় গ্রামটিকেই বেছেনিয়েছিলেন। বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে তারাও অনেক ক্ষতিগ্রস্তহয়েছিলেন। যাহোক, আপনি আধাত্মিক ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন।আমার পূর্বপুরুষদের সবাইকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমিআমার দাদা অছিম উদ্দিন খানকে দেখেছি। দাদা যখন ফজর নামাজপড়ার জন্য আজান দিতেন তখন কোথা থেকে যেনো একটা পাখিউড়ে এসে উনার কাধে বসতো। আজান শেষ হলে আবার চলেযেতো। এটাকে ঠিক আধাত্মিক বলা যাবে কিনা জানিনা। তবেআমার বড় কাকা খোরশেদ আলম খান আধাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্নছিলেন। তিনি হারানো জিনিস উদ্বার করে দিতে পারতেন। যদিও পরেসেই ক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেন। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার আর জানা নেই। আমার পূর্ব পুরুষরা বা তাদের সময়ের মানুষেরা কেউ আর এই পৃথিবীতে নেই। তারা থাকলে হয়তো আরো বেশি কিছু জানা যেতো। রেফারেন্সসহ সব বলা যেতো।
লন্ডন বাংলা:– আমরা যতদুর জেনেছি আপনার নানাআলহাজ নাছির উদ্দিন মাস্টার সাহেব জমিদার ছিলেন। প্রায় ৪০০বিঘা জমির মালিক ছিলেন। আগেকার জমিদারদের মাঝে যেমনঅত্যাচারী জমিদার ছিলেন, তেমনি প্রজাহিতৈষী জমিদারও ছিলেন।আপনার নানা কেমন জমিদার ছিলেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আমার নানারা দুই ভাই ছিলেন। বড় নানা, ছোট নানা দুই ভাই ৪০০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন। কিন্তু অত্যাচারীজমিদার বলতে যা বুঝায় সেই অর্থে তারা জমিদার ছিলেন না। নানাআইয়ুব খানের আমলে ইউনিয়ন বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এলাকাররাস্তা ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ থেকে শুরু করে স্কুল, মাদ্রাসা, ইদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠাসহ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকাপালন করেছেন। এছাড়া নানা শিক্ষক ছিলেন, একজন আদর্শশিক্ষকের মতই আদর্শ জীবনযাপন করতেন। নানা মানুষকে উদারহস্তে দান করতেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুদান দিতেন। নানাপ্রচন্ড ভোজনরসিক মানুষ ছিলেন। খেতে ও খাওয়াতে পছন্দ করতেন।গাড়ি ভর্তি মাছ, মাংস বাজার আনতেন– মানুষকে প্রচুর খাওয়াতেন, খাওয়াতে ভালোবাসতেন। মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার চেয়ে, মানুষের খাদ্য জোগানোর চেয়ে মহৎ কাজ আর হতে পারে না।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নানা সেই কাজটা খুব আনন্দের সাথেকরতেন। নানা কেমন মানুষ ছিলেন একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। ১৯৭১ সালে অনেক হিন্দু পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে চলেগেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই বাড়িগুলো অনেকেই দখলেনেওয়ার চেষ্টা করেছেন। নানা তার সাধ্যমত সবাইকে বাধা দিয়েছেন।নানা বলেছেন তারা আবার ফিরে আসবেন। এগুলোতে তাদের অশ্রুলেগে আছে। এগুলো অভিশাপের সম্পত্তি। জোর পূর্বক কেউ দখলেনিলে তাদের অভিশাপ লাগবে। সেই অভিশাপে সব ধ্বংস হয়ে যাবে।নানা খুবই উদার মনের মানুষ ছিলেন এবং অসাম্প্রদায়িক ও অত্যন্তমানবিক একজন মানুষ ছিলেন। নানার আতিথিয়তা নিয়েছেন, নানার হাতে আপ্যায়িত হয়েছেন নানার এমন অসংখ্য গুণগ্রাহী মানুষদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।
লন্ডন বাংলা:– আমরা যতটা জেনেছি, আপনারপত্রিকার অর্থাৎ দৈনিক তথ্যধারার চলার পথটা একদম মসৃণ ছিলোনা। আপনার পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য বা আপনাকে বুঝতে কিছুমানুষের সময় লেগেছে। মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। ওয়ানইলেভেনের সময় মাইনাস টু ফর্মূলার বিরোধীতা করায় আপনারপত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজকেআপনার কাগজ একটা পর্যায়ে এসেছে। এই জায়গা থেকে যখনপেছন ফিরে তাকান তখন আপনার কাছে কী মনে হয়?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– সীমাহীন প্রতিকুলতার পথ পেরিয়েইআমাকে এখানে আসতে হয়েছে। যদিও এখনও অনেক পথই পাড়িদেয়া বাকি আছে। কোনো কাজ সহজ নয়, সহজ করে নিতে হয়।তাদের কাছে আমার সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছিলো। এর জন্যঅনেক ভোগান্তি হয়েছে আমার। আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, প্রকাশনায় পিছিয়ে পড়েছি। এমনকি স্বাভাবিকভাবে হাসতেও ভুলেগেছি। তবে আমি অনড় ছিলাম। কোনো বাধাই আমাকে টলাতেপারেনি। যা করতে হবে, আমি তা ক্লান্তিহীনভাবে করে গেছি। কারণআমি জানতাম আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি সবাইকে ক্ষমাকরে দিয়েছি। আমার সব কাগজপত্র ঠিক ছিলো। যে কারণে প্রশাসনআমার পাশে ছিলো। অর্থাৎ সত্যের পাশে ছিলো। কোন ভালোকাজে, মহৎ কাজে প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারো মন্দ কথায় কান নাদিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের লক্ষে অনড় থাকতে হবে। সততাএবং লক্ষ্য স্থির থাকলে কোনো বাধাই আপনাকে ঠেকিয়ে রাখতেপারবে না। সাময়িক অসুবিধায় পড়বেন বটে। কিন্তু সৎ সাহসেরপরাজয় নেই।
লন্ডন বাংলা:– আপনার অফিসে ক্ষমতাধর যারাআসেন, দৈনিক তথ্যধারায় যারা কাজ করেন, আপনার প্রেসে যারাকাজ করেন, যেসব সম্পাদক প্রকাশকরা আপনার প্রেসে পত্রিকাছাপেন তাদের সবার সাথে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবইভালো। এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো থাকার কারণ কী বলে আপনিমনে করেন? পরিবারের কিংবা অন্য কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণাপান?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আমি যখন যা করেছি পরিবার থেকে সবসময়ই অনুপ্রেরণা পেয়েছি, সাপোর্ট পেয়েছি। পরিবারের সাপোর্ট বাঅনুপ্রেরণা একজন মানুষের এগিয়ে যাওয়ার জন্য খুব জরুরী বলেমনে করি। আর মানুষের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো থাকারকারণ– আমি কোনোদিন ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কারো সাথে সম্পর্কতৈরি করিনি। নারী বা পুরুষ, সিনিয়র বা জুনিয়র, সচিব, এমপি, মন্ত্রী, সম্পাদক বা প্রকাশক— কারো সাথেই না। অনেক ক্ষমতাবানমানুষের সাথে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত হার্দিক। কিন্তু সেই সম্পর্কগুলোভালো থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কখনোইসম্পর্ক কাজে লাগাইনি। দেশে বা বিদেশে কোথাও গেলে কারো বাসায়না উঠে মানসম্পন্ন কোন হোটেল, রেস্ট হাউজ, ডাকবাংলোয় উঠেছি।আমার বাবাও তাই করতেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কখনোই সম্পর্ককাজে লাগাতেন না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে, ক্ষমতাবান এমনঅনেকেই ঢাকায় থাকতেন। খোন্দকার আবদুল হামিদ সাহেব আব্বারবন্ধু ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু বোর্ডের বা অন্য কোন কাজে ঢাকায়গেলে আব্বা রেস্ট হাউজে উঠতেন। মানসম্পন্ন রেস্ট হাউজ খুজে নাপেলে ফিরতি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতেন। প্লাটফর্মে বসে পত্রিকাপড়তেন, বই পড়তেন। ট্রেন না পেলে ফিরতি কোন গাড়িতে বাড়ি চলেআসতেন। আব্বা মানুষের আতিথিয়তা নেওয়ার চাইতে মানুষকেআতিথিয়তা দিতেই বেশি পছন্দ করতেন। আমরাও তাই করি। আপনি যখন নিজের সুবিধার জন্য বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সম্পর্ককাজে লাগাবেন তখন সবার সাথে এমনিতেই আপনার সম্পর্ক খারাপহবে। আর যদি তা না করেন তাহলে সবার সাথে আপনার সম্পর্কএমনিতেই ভালো থাকবে বলে আমি মনে করি।
লন্ডন বাংলা:– পত্রিকা, শিল্প সাহিত্য, প্রিন্টিং প্রেস, প্রকাশনা সাধারনত গরীব লোকের কাজ না। অভিজাত পরিবারেরকাজ, বনেদি পরিবারের কাজ। শিল্প সাহিত্য, প্রেস, প্রকাশনা তারাইকরেন যারা ধনের দিক দিয়ে– মনের দিক দিয়ে ধনী বা রাজা বাদশা।আপনিও কি তাই মনে করেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– মনের দিক দিয়ে আমি ধনী কিনা জানিনা। তবে ধনের দিক দিয়ে আমি মোটও রাজা বাদশা না। তাই যদিহতাম তাহলে শেরপুরে রেল লাইন নেই। জামালপুর হয়ে শেরপুরের মানুষকে ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়। আমি নিজের টাকায় শেরপুরেরমানুষের জন্য রেল লাইন করে দিতাম। নাকুগাও স্থল বন্দরকে দেশেরমানুষের জন্য আর্ন্তজাতিক স্থল বন্দরে রুপান্তরিত করতাম। শেরপুরে একটি আর্ন্তজাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় নেই আমি তাও করে দিতাম। আমার যেহেতু অত সামর্থ্য নেই তাই সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি।আশাকরি, সরকার তা একদিন না একদিন বাস্তবায়ন করবেন।
লন্ডন বাংলা:– আপনার পূর্বপুরুষদের একটা গৌরবজনক ইতিহাস আছে। অত পেছনে যাবো না। আমরা যদি আপনার নানা দাদার সময় থেকেই ধরি, আপনার দাদা মো: অছিম উদ্দিন খান ব্রিটিশ আর্মির একজন ইউনিট কমান্ডার ছিলেন।মানুষ আপনার দাদাকে নিজ নামের চাইতে পদবী অর্থাৎ ‘কমান্ডার ‘ নামেই বেশি চিনতেন এখনো চিনেন। তিনি কমান্ডার হিসাবে মিত্রবাহিনীর হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। আবার উপমহাদেশেব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে চাকরি ছেড়ে তিনি সেইআন্দোলনেও যোগ দিয়েছেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য লড়াইকরেছেন। আপনার নানা আলহাজ নাছির উদ্দিন মাস্টার আইয়ুবখানের আমলে ইউনিয়ন বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আপনার বাবা১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী তালিকায় নাম থাকায়আত্মগোপনে ছিলেন। অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাঙালিজাতির প্রায় প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ইতিহাসের সাথেই আপনারপূর্ব পুরুষরা কোন না কোনভাবে জড়িত ছিলেন। সেই জায়গা থেকেআপনারা এই প্রজন্ম কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন বলে কি মনে করেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– না, আমি তা মনে করিনা। আমরা তাদেরআলোতেই পথ চলছি। আমরা তাদের দেখানো পথেই হাটছি। উনারাসৌভাগ্যবান ছিলেন যে কারণে ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাঙালিজাতির প্রায় প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ইতিহাসের সাথেই কোন নাকোনভাবে সংযুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। সব জেনারেশনেরজীবনে এমন ঘটনা ঘটেনা। সবার সেই সৌভাগ্য হয়না। এক সময়েরসাথে আরেক সময়ের তুলনা হয়না। এক জেনারেশনের সাথে আরেকজেনারেশনের তুলনা হয়না। আগের জেনারেশনকে পরেরজেনারেশনকে আলো দেখান, সেই আলোতে পরের জেনারেশন পথচলেন। নিজেদের পথকে আলোকিত করেন। এটাকে ঠিক পিছিয়েপড়া বলেনা। উনাদের সময়ে উনাদের যা করণীয় ছিলো উনারা ঠিকতাই করেছিলেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে যে যার অবস্থানথেকে মানুষের সেবা করেছিলেন, দেশের সেবা করেছিলেন। দেশ গঠনেভূমিকা রেখেছিলেন। আমাদের সময়ে আমাদের যা করণীয় আমরাতাই করছি। যে যার অবস্থান থেকে মানুষের জন্য কাজ করছি, দেশেরজন্য কাজ করছি। উনাদের কাজ আপনারা এখন মূল্যায়ন করছেন, আমাদের সময়ে আমরা আমাদের কাজটুকু ঠিকঠাক করছি কিনাসেটা আগামী প্রজন্ম মূল্যায়ন করবেন।
লন্ডন বাংলা:– ভারতীয় উপমহাদেশে পাঠানদের সাথেমুঘলদের ক্ষমতা কেন্দ্রিক একটা দ্বন্দ সব সময়ই লেগে ছিলো।মুঘলরা দৃশ্যপটে নেই, পাঠানরা আছেন। শাহরুখ খান, সালমানখান, আমির খানরা রাস্ট্র নিয়ে না ভেবে নাচ গান করছেন। এইব্যাপারটা আমাদের মত আপনাকেও পীড়া দেয় কিনা বা একজনপাঠান সন্তান হিসাবে এই বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– প্রথম কথা যাকে আল্লাহপাক যে কাজেরজন্য পাঠিয়েছেন তিনি সেই কাজই করবেন। শাহরুখ, সালমান, আমির খানরা মানুষকে বিনোদন দিচ্ছেন। সেই সাথে দেশেরপ্রয়োজনে তারা সব সময় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। প্রচুর চ্যারিটি ওয়ার্ককরছেন। গোপনে দান করছেন। বলিউড ইন্ড্রাস্ট্রিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় সব সময় তাদের নাম দেখছেন। মানুষকে বিনোদিত করা সহজ কোন কাজ নয়।সবাইকে রাজনীতি করতে হবে এমন কথা নেই। তারা রাজনীতিরবাইরে থেকেও দেশ ও জাতির জন্য অনেক কিছুই করছেন। বলিউডমুভিকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মুভির মাধ্যমে সুন্দর সুন্দরমেসেজ দিচ্ছেন। কোন কাজকেই ছোট করে দেখা ঠিক নয়। বিতর্কিতহলেও সমাজ পরিবর্তনের জন্য মুভি খুবই শক্তিশালী একটা মাধ্যম।এই মাধ্যমটাকে তারা তাদের মত করে কাজে লাগাচ্ছেন।
লন্ডন বাংলা:– আপনাদের শেরপুরে বর্তমানে যিনি পরপর চারবার এমপি হয়েছেন শুনেছি তিনি এক সময় আপনার কাকারবাসায় ভাড়া থেকেছেন। খুব সম্ভবত উপজেলা চেয়াম্যান নির্বাচিতহওয়ার আগে। সেই সুবাধে তাকে বেশ কাছ থেকে আপনি দেখেছেন।তার আগে পর পর তিনবার যিনি এমপি ছিলেন তিনি আপনারদাদীর ভাইয়ের ছেলে ছিলেন অর্থাৎ রক্তের ধারায় তিনি আপনারকাকা ছিলেন। আপনি যেহেতু দুই জনকেই খুব ভালোভাবে চিনেনএবং জানেন কাজেই বর্তমান এমপি আতিউর রহমান আতিক ওসাবেক এমপি রফিকুল বারী চৌধুরীর মাঝে তুলনা করতে বললেএকজন সাংবাদিক/সম্পাদক হিসাবে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– দেখুন এক সময়ের সাথে আরেক সময়েরকিংবা একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের তুলনা হয় না।এভাবে তুলনা করাটা ঠিক না। এমপি হিসাবে যদি তুলনা করতেবলেন সেক্ষেত্রে বলবো ২৫ বছর আগের একজন এমপির সাথেবর্তমান এমপির তুলনা করাটা ঠিক হবে না। কারণ দু‘জন ভিন্নসময়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এমপি হয়েছেন। রফিক কাকার সময়ে তিনিতার সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। আতিক ভাই তার সাধ্যমত চেষ্টা করেযাচ্ছেন। রফিক কাকা এমপি হিসাবে তার মেয়াদ শেষ করেছেন। তারসময়ে তিনি শেরপুর সদরে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।আতিক ভাইয়ের মেয়াদ যেহেতু এখনো শেষ হয়নি তাই তার কাজেরমূল্যায়ন করার সময় এখনো আসেনি। রফিক কাকার মত আতিকভাই এমপি হিসাবে তার মেয়াদ শেষ করলে তখন তুলনামূলকভাবেদু‘জনের কাজের মূল্যায়ন করাটা ঠিক হবে। তার আগে এই দু‘জনেরতুলনামূলক কাজের মূল্যায়ন করাটা ঠিক হবেনা।
লন্ডন বাংলা:– এই করোনা মহামারির সময়ে কোনসমস্যাটা আপনার চোখে খুব বেশি ধরা পড়ছে? এর থেকে উত্তরণ বাকী করলে আমরা সফল হবো?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– ত্রাণ বিতরণে অনিয়মটাই সবচেয়ে বেশিচোখে পড়ছে। বাংলাদেশে খেটে খাওয়া ও অল্প আয়ের মানুষদেরঅবস্থা শোচনীয়। ত্রাণ ও রেশন বিতরণে স্বচ্ছতা আনা খুবই জরুরি।একজন অসহায় লোক সরকারি–সহায়তা পাবেন, আরেকজন পাবেননা তা স্পষ্ট খেয়াল রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া যে কোনোসামাজিক দুর্যোগের সময় আমরা ব্যবসায়িক নীতি অবলম্বনের চেষ্টাকরি অথবা মজুতের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ি; এটি আমাদের সমাজেরএকটি মারাত্মক ব্যাধি। আমরা সবাই যদি এ ব্যাপারে নিজেরঅবস্থান থেকে নিজেদের ও অপরকে সচেতন করি, তাহলে আমরাঅনেকখানি মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হব। অতীতের মতোকোভিড–১৯–ও বয়স বা জাতের বিচারে সংক্রমণ করেনি। রাজা–প্রজা, ধনী–গরিব, যুবক–বৃদ্ধ, কেউ বাদ যায়নি। তাই, অল্পবয়সীদের এ কথাভাবার সুযোগ নেই যে তাদের সংক্রমণের সম্ভবনা কম। ধনীদেরও মনেকরার কোন কারণ নেই যে তারা বেঁচে যাবেন। এ সমস্যা সবার জন্য।তাই সবাইকে মিলিতভাবে মহামারি ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। এককপ্রচেষ্টায় অতীতে কোনো মহামারিকেই ঠেকানো যায়নি। কোনমহামারিই রাতারাতি শেষ হয়নি।
লন্ডন বাংলা:– করোনা ভাইরাস পরবর্তী পৃথিবী কেমনহতে পারে? লকডাউন উঠে গেলে মানুষের চলফেরায় কী কী পরিবর্তনআসতে পারে?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে অর্থনীতিরঅবস্থা কী দাঁড়াবে, সেটা নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা। মহামারিহয়তো নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, কিন্তু এটা করতে গিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিরযে মারাত্মক ক্ষতি এর মধ্যে হয়ে গেছে, তা কাটাতে বহু বছর লেগেযেতে পারে। তাছাড়া এই মহামারির সময় যেসব স্বল্প মেয়াদী পদক্ষেপনেয়া হচ্ছে, সেগুলো পরে পাকাপাকি ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়াতে পারে।লকডাউন থাকুক বা উঠে যাক, আমরা যেভাবে চলি, শপিং করি, খেতে যাই, বেড়াতে যাই, কাজ করি, পড়াশোনা করি– এই সমস্ত কিছুইআমূল বদলে দিতে যাচ্ছে করোনাভাইরাস। কিছু পরিবর্তন এরই মধ্যেঘটে গেছে। বিশ্বের বহু মানুষ এখন ঘরে বসেই কাজ করছেন। প্রযুক্তিখুব সহজ করে দিয়েছে ব্যাপারটি। অনেক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়অনলাইনে তাদের পাঠদান করছে ।
লন্ডন বাংলা:– কভিড–১৯ মোকাবিলায় ভবিষ্যতেসরকারগুলোর ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে বা মনে রাখা হবেবলে আপনার ধারণা?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– সরকার ও জনগণের মিলিত প্রচেষ্টায় সবমহামারিই একদিন শেষ হয়েছে। কোভিড–১৯–ও একদিন শেষ হবে।নিউজিল্যান্ডের মত অন্যান্য কিছু দেশের সরকার তাদের সর্বোচ্চটাদেওয়ার চেষ্টা করেছে। লকডাউনে দেশের প্রত্যেক মানুষ যাতে ঘরেথাকেন, বাইরে না বেরোন ৷ সে ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিলনিউজিল্যান্ড সরকার ৷ তার ফলও হাতে নাতে মিলেছে ৷ আবারযুক্তরাস্ট্র সরকার এক্ষেত্রে চরম অযোগ্যতার নিদর্শন রেখেছে। করোনামোকাবেলায় নিউজিল্যান্ড সরকারের মত যারা সফল হয়েছেন তাদেরএকভাবে মূল্যায়ন করা হবে। আবার যুক্তরাস্ট্র সরকারের মত যারাব্যর্থ হয়েছেন তাদের অন্যভাবে মনে রাখা হবে।
লন্ডন বাংলা:– ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম জো বাইডেন।আপনাকে আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে বললে আপনিকাকে বেছে নিবেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আমি আমেরিকার নাগরিক হলে ডোনাল্ডট্রাম্পের বদলে জো বাইডেনকে বেছে নিতাম। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারবছরের শাসনকাল দেখলাম। ট্রাম্প আশ্রয়প্রার্থী শিশুদের তাদেরপিতামাতার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন, শার্লটসভিলে বর্ণবাদীমিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ‘চমৎকার’ মানুষ হিসেবে বর্ণনাকরেছেন। বাণিজ্য যুদ্ধের নামে তিনি যা করছেন, তাতে আমেরিকারমানুষজনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন একজনকে কিছুতেই আমি আরওচার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে দিতাম না। আমি পরিবর্তনের পক্ষেভোট দিতাম।
লন্ডন বাংলা:– আপনার একটা রিপোর্ট নিয়ে খুবসম্ভবত মুন্তাজ খুনের রিপোর্ট নিয়ে নব্বইয়ের দশকে তোলপাড় হয়েছে।স্থানীয় বাজারে পত্রিকা নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পাদকপরিষদের সাবেক এক সভাপতি লন্ডনে আপনার প্রশংসা করেছেন।নব্বইয়ের দশকেই তিনি নাকি আপনার মাঝে অমিত সম্ভাবনাদেখেছেন। আপনি নিজেই এখন একজন সিনিয়র সাংবাদিক, সম্পাদক। তরুণ বয়সে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আপনার মাঝে যেসম্ভাবনা দেখেছেন আপনিও কি তরুন বয়সের এমন কোনসাংবাদিকের মাঝে সম্ভাবনা দেখেন? বিশেষ করে আপনাদের শেরপুরেসম্ভাবনাময় দু‘জন তরুন সাংবাদিকের নাম বলতে বললে আপনিকোন দু‘জনের নাম বলবেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– অনেক তরুন সাংবাদিকের মাঝেই আমিঅনেক সম্ভাবনা দেখি। মাত্র দু‘জনের নাম বলে অন্যদের মন খারাপকরে দেওয়াটা ঠিক হবেনা। তবে আমি একজন তরুন সাংবাদিকেরনাম বলতে পারি। যার মৃত্যুতে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। তরুণসাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের মাঝে আমি অনেক সম্ভাবনাদেখতাম। গত বছর সাংবাদিক কাকন রেজার এই মেধাবী ছেলেটাকেহত্যা করা হয়েছিল।কেনো হত্যা করা হয়েছিলো, জানিনা। ফাগুনরাজধানীর তেজগাঁও কলেজের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটিম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার রাতে ঢাকা থেকেট্রেনে করে জামালপুরে ফিরছিলেন। কিন্তু ময়মনসিংহের পর থেকেতাঁর সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ ছিল না। মোবাইল ফোনটিওবন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন জামালপুর জেলার নান্দিনার রানাগাছাএলাকায় রেললাইনের পাশে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। এর পর থেকেইহত্যার বিচার দাবিতে শেরপুরের সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশারমানুষ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। আশাকরি তদন্তকারীঅফিসাররা একদিন এই রহস্য উদঘাটন করবেন এবং ফাগুনেরপরিবার ন্যায় বিচার পাবেন।
লন্ডন বাংলা: প্রায় প্রতিদিন হয়ে যাচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল৷অভিযুক্তকে অপরাধী বানিয়ে, প্রশ্নকর্তাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েবিচার হয়ে যাচ্ছে মিডিয়ায়৷ বিচারের আগেই সন্দেহভাজন আসামিরছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা বা টিভিতে দেখানোর মাধ্যমে যে পাবলিকট্রায়াল হয়ে যাচ্ছে, এটাকে কি আপনি সমর্থন করেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– না, আমি এটা সমর্থন করিনা। আইনঅনুযায়ী আদালতে একজন ব্যক্তি অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ততিনি নির্দোষ৷ কাজেই কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণেরআগ পর্যন্ত তার পরিচয় প্রকাশ করা উচিত নয়। জার্মানিতেসন্দেহভাজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। কিন্তু আমাদের দেশেঅনেক ক্ষেত্রেই আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তারের পরতাকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করেন৷ গ্রেপ্তারকৃতের শরীরে ‘আমিজঙ্গি’, ‘চোর’, ‘মাদক ব্যবসায়ী’, ‘ইয়াবা কারবারি’, ‘ধর্ষক’-এমনপরিচয় ঝুলিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন৷ গণমাধ্যমেও তাদের সেই ছবি, পরিচয় প্রকাশ ও প্রচার করেন। এটা ঠিক না।
লন্ডন বাংলা:– আজকাল অনেক বাঙালি সাহিত্যিকইংরেজি পত্রিকায় ইংরেজিতে লেখালেখি করেন। ইংরেজি সাহিত্যকেসাহিত্যের মানদণ্ড হিসাবে ধরেন। এই ব্যাপারটাকে আপনি কিভাবেদেখেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আমি একজন সাংবাদিক, সাহিত্যক না।ইংরেজিতে লেখালেখি আমি অন্যভাবে দেখিনা। কেউ চাইলেলিখতেই পারেন। তবে ইংরেজি সাহিত্যকে সাহিত্যের মানদণ্ড হিসাবেযারা ধরেন তারা ভুল করেন। ইংরেজি সাহিত্যকে মানদণ্ড হিসাবেধরার প্রবণতা আমরা পেয়েছি দুইশো বছরের পরাধীনতা থেকে। চার–পাঁচ বছর ভার্সিটিতে কয়েকখানা ইংরেজি বই পড়ে অনেকেবিশ্বসাহিত্যের তাত্ত্বিক হয়ে যান। কে তাদের বোঝাবে যে ইংরেজিসাহিত্য মানেই বিশ্বসাহিত্য নয়। লালসালু‘ বা ‘খোয়াবনামা‘ যেমনকোনো ইংরেজ লেখকের পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। তেমনি ‘থিংস ফলঅ্যাপার্ট‘ কোনো বাঙালি লেখকের পক্ষে লিখা সম্ভব নয়। ‘ওয়ানহানড্রেড ইয়ারস অফ সলিচিউড‘ যেমন কোনো ফরাসি লেখকলিখতে পারবেন না। তেমনি ‘ইউলিসিস‘ কোনো আফ্রিকান লেখকলিখতে পারবেন না। পৃথিবীর প্রতিটি মহৎ সাহিত্যকর্ম প্রথমেআঞ্চলিক। মোটকথা যে দেশে যে ভাষার লেখক দ্বারা কোনোসাহিত্যকর্ম সৃষ্ট হয়েছে, তা অন্যত্র অন্য ভাষা ও অন্য সংস্কৃতির মধ্যেথেকে লেখা সম্ভব না। কাজেই ইংরেজি সাহিত্যকে সাহিত্যের মানদণ্ডহিসাবে ধরা ঠিক না।
লন্ডন বাংলা:– একজন সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসাবেআপনার ভবিষ্যত স্বপ্ন কী? ভবিষ্যতে সংবাদিকদের কোন অবস্থানেদেখতে চান?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– সাংবাদিকরা যখন সাদাকে কালো আরকালোকে সাদা বলেন। তখন সাংবাদিকতা আর সাংবাদিকতাথাকেনা। এতে সত্যের মৃত্যু হয়। দেশ ও মানুষের অমঙ্গল হয়।সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটা টিকিয়ে রাখতে হলেসাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে সৎ হতে হবে, দল–গোষ্ঠী ও ব্যক্তিস্বার্থের উর্ব্ধে উঠে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। অ্যাক্টিভিজমএবং জার্নালিজম দু‘টো ভিন্ন জিনিস৷ একজন অ্যাক্টিভিষ্ট যা ইচ্ছেতাই বলতে পারেন, কিন্তু একজন পেশাদার সাংবাদিক যা ইচ্ছা তাইলিখতে পারেন না৷ সাংবাদিকতার নীতির সঙ্গে কোন অবস্থায়আপোস করা যাবেনা। একজন সাংবাদিককে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতাঅর্জন করতে হবে। সাংবাদিকদের যত সংগঠন আছে এটা নিয়েতাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এটা ছাড়া দ্বিতীয় কোনোউপায় নাই। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এসে যাওয়ায় ভুলতথ্যের ব্যাপকতা বেড়েছে। ইন্টারনেট আর সামাজিকযোগাযোগমাধ্যম সাংবাদিকতাকে সন্দেহাতীতভাবে বদলে দিয়েছে।সাংবাদিকদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি পরীক্ষা। তাইসংবাদ মাধ্যমগুলোর বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করা জরুরি। ছাপাপত্রিকার সাংবাদিককে অনলাইন সংস্করণেও বিশ্বাস যোগ্য সংবাদপোস্ট করার দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। আমি ভবিষ্যতে সাংবাদিকসংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হিসেবে দেখতে চাই।
লন্ডন বাংলা:– আমাদের দেশে সাধারনত সরকারবদলের সাথে সাথে প্রেসক্লাব গুলোর নেতৃত্বও পরিবর্তন হয়।সরকারদলীয় সাংবাদিকরাই নের্তত্ব দেন। শেরপুর জেলা প্রেসক্লাবেবর্তমানে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– সরকার বদলের সাথে সাথে প্রেসক্লাবগুলোর নেতৃত্বও পরিবর্তন হয় আপনার এই কথার সাথে আমিপুরোপুরি একমত নই। সাংবাদিক–সাংবাদিকই। সাংবাদিকরা কোনদলের না। ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু পেশাগতজায়গায় একজন সাংবাদিক শুধুই সাংবাদিক। পক্ষপাতমূলকসাংবাদিকতা কখনোই বিকশিত হয়ে টিকে থাকতে পারে না। যাহোক, আপনি শেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন– শেরপুরজেলা প্রেসক্লাবে আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পন্ডিতফসিহুর রহমানের সুযোগ্য সন্তান সাংবাদিক শরিফুর রহমান নেতৃত্বদিচ্ছেন। তিনি যোগ্য একজন মানুষ হিসেবেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
লন্ডন বাংলা: শেরপুর মানেই সৌন্দর্যের লীলাভূমি।সীমানাজুড়ে মনোমুগ্ধকর গারো পাহাড়,গজনী অবকাশ, মধুটিলাইকোপার্ক, জমিদার বাড়ি, অর্কিড, রাজার পাহাড় ও বাবেলাকোনা, নয়াবাড়ির টিলা, সন্ধ্যাকুড়ার রাবার বাগান, রাবার ড্যাম, নাকুগাঁওস্থল বন্দর ও পানিহাটা–তারানি পাহাড়। এই বাইরে শেরপুর জেলায়গুরুত্বপূর্ণ আর কী আছে বলে মনে করেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– নদ–নদী বিধৌত শেরপুর জেলায় রবিশস্যের পাশাপাশি প্রচুর ধান উৎপন্ন হয়। শেরপুরের উদ্বৃত্ত খাদ্য–শস্যদিয়ে দেশের মোট খাদ্য ঘাটতির ১৫% পূরণ হয়। জেলায় পাঁচশতাধিক রাইস মিল রয়েছে। শেরপুর প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেইশিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি আর আন্দোলন সংগ্রামে গোটাভারতবর্ষের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বৃটিশ বিরোধীআন্দোলন–সংগ্রাম ও ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসেও শেরপুরবিশেষ স্থান দখল করে আছে। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান আর আদিবাসীগারো, হদি, কোচ, হাজং, সাঁওতাল, বানাই, ডালুসহ বিভিন্নসম্প্রদায়ভূক্ত মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সেই প্রাচীনকালথেকে আজোবধি সাদৃশ্য বজায় আছে। আমি যে কোন জায়গার অন্যসব কিছুর চেয়ে মানুষগুলোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনেকরি। আমাদের শেরপুর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন এবংআছেন। যে সব মনীষীর অবিমিশ্র সরব কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েশেরপুরের ঐতিহ্য স্ফীত হয়েছে, তাদের মাঝে জরিপ শাহ্, মজনু শাহ্পাগল, টিপু শাহ পাগল, শাহ কামাল, শেখ কাদের ইয়েমেনী, শেখবোরহানউদ্দিন, বুড়াপীর, শের আলী গাজী, হরচন্দ্র রায় চৌধুরী,ছাওয়াল পীর, আটরশি ফরিদপুরীর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।আপনারা হয়তো বিপ্লবী রবি নিয়োগী, বিপ্লবী নগেন্দ্র চন্দ্র মোদক,আফসার আলী খান, খোশ মাহমুদ চৌধুরী, জলধর পাল, খানবাহাদুর ফজলুর রহমান, খন্দকার আবদুল হামিদ সাহেবের নামশুনেছেন। বই পুস্তকে পড়েছেন। এর বাইরেও শেরপুরে আরো অনেকশের আছেন, লিজেন্ড আছেন। বই পুস্তকে অনেকেরই নাম নেই- কেনো নেই জানি না। ভবিষ্যতে যারা শেরপুরের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লিখবেন তারা নিশ্চয়ই সেই নামগুলো সোনার অক্ষরে লিখবেন। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষই এই শেরপুর জেলায় জন্মগ্রহণকরেছেন। এ জেলায় অর্ধশতাধিক ভাষা সৈনিক রয়েছেন।তালিকাভূক্ত ১৬৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন বীরমুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু,শেরে বাংলা ফজলুল হক, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী, মাওলানাআব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আইয়ুব খানের শাসন আমলে বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানসহ অসংখ্য রাজনৈতিক, ধর্মীয়ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব শেরপুরে পদার্পণ করেছিলেন।
লন্ডন বাংলা:– আপনার বন্ধুদের কাছে জেনেছি, আপনি খুব ভালো ফুটবল খেলতেন। আপনার ফুটবল টিমের জন্যপেলে, ম্যারাডোনা; মেসি, রোনালদো– এই চারজন থেকে দুই জনকেবেছে নিতে বললে আপনি কোন দুইজনকে বেছে নিবেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আমার চেয়ে আমার মেজ কাকা শাহ আলমখান আরো ভালো ফুটবল খেলতেন। এখনো কেউ একটা ভালো কিকনিলে যারা কাকার খেলা দেখেছেন তারা সেই কিককে ‘শাহালমের ডাং(গোলা বা গুলি)‘ বলে লাফিয়ে উঠেন, উল্লাস করেন। ফুটবলারকেবাহবা দেন। কাকা মাঠের এক প্রান্ত থেকে কিক করে আরেক প্রান্তেগোল করতে পারতেন। ফুটবল নৈপূণ্যের কারণে কাকা প্রথমেমোহামেডান ক্লাবে ডাক পান, পরবর্তীতে সরাসরি জাতীয় দলেরক্যাম্পেও ডাক পান। কিন্তু দাদার সম্মতি না থাকায় কাকার আরজাতীয় দলে খেলা হয়নি। তখনকার দিনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধুফুটবল খেলে ক্যারিয়ার গড়ার কথা কেউ ভাবতে পারতেন না।তখনকার প্রায় প্রত্যেক বাবা মা–ই চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করুক, পড়াশোনা শেষে চাকরি বা ব্যবসা করে ক্যারিয়ার গড়ুক। দাদাও এরব্যাতিক্রম ছিলেন না। যাহোক, আমার ফুটবল টিমের জন্য পেলে, ম্যারাডোনা; মেসি, রোনালদো এই চারজন থেকে সুযোগ থাকলেআমি চারজনকেই বেছে নিবো। পেলেকে গোলবারের সামনে স্ট্রাইকারহিসাবে, ম্যারাডোনাকে মাঝ মাঠে প্লেমেকার হিসাবে, লেফট উইং এমেসি আর রাইট উইং এ রোনালদোকে খেলাব।
লন্ডন বাংলা:– আপনি শেরপুর ওয়েলফেয়ার এন্ডডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন ইউরোপ এর ৪৫ সদস্য বিশিষ্টঅপারেশন কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এইসংগঠন থেকে শেরপুরের মানুষের জন্য ওয়েলফেয়ারমূলক কী কীকার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– শেরপুর ওয়েলফেয়ার এন্ড ডেভেলপমেন্টএসোসিয়েশন ইউরোপ মূলত ইউরোপ প্রবাসী শেরপুর জেলাবাসীদেরসংগঠন। এর কর্মপদ্বতি তারাই ঠিক করেন। এর সকল কার্যক্রমতারাই পরিচালনা করেন। যেহেতু তারা প্রবাসে থাকেন তাই দেশেতাদের কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট একটিঅপারেশন কমিটি গঠন করছেন। তাদের সহায়তা করা এবং দেশেতাদের বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াইএই কমিটির কাজ। ইউরোপ প্রবাসী শেরপুর জেলার মানুষেরা বন্যারসময় শেরপুরের গরীব অসহায় ও পানিবন্দী মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী ও জরুরি ঔষধ দেওয়ার উদ্যেগ নিয়েছেন আমরা তাদেরসহায়তা করেছি। তাদের সেসব সহায়তা সামগ্রী আমরা গরীবঅসহায় ও পানিবন্দী মানুষের মাঝে পৌছে দিয়েছি। এর আগে আইক্যাম্প পরিচালনার উদ্যেগ নিয়েছেন, আমরা তাদের সহায়তা করেছি।চোখের ছানি অপারেশনসহ আমরা শেরপুর জেলার প্রায় ১২০০রোগীর চোখের চিকিৎসা করাতে সক্ষম হয়েছি।
লন্ডন বাংলা:- প্রবাসীদের জন্য সরকারের করণীয় কীবলে আপনি মনে করেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:– এয়ারপোর্টে ফুল দিয়ে বরণ করা।প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা। প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়া এবংপ্রবাসীদের সহায় সম্পদ যেনো বেদখল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।আলাদা একটা সেল গঠন করে প্রবাসীদের আইনি সেবা দেয়া ওতাদের সহায় সম্পদ রক্ষা করা।
লন্ডন বাংলা:- প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান:- প্রবাসী ভাই বোনদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনাদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপরে দেশ চলে। আপনারাআমাদের ন্যাশনাল হিরো। বিদেশে আপনারা প্রত্যেকেই এক একজনরাস্ট্রদুত। পৃথিবীর যে দেশেই আছেন সেই দেশের আইন কানুন মেনেচলবেন। দেশের বদনাম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারাসবাই ভালো থাকবেন, সুন্দর থাকবেন। আমাদের জন্য, দেশেরমানুষের জন্য দোয়া করবেন।
লন্ডন বাংলা:– আপনার এত ব্যস্ততার মাঝেওআমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য এবং এই ভয়াবহ করোনা মহামারিতেসাংবাদিকদের দিকে খেয়াল রাখার জন্য লন্ডন বাংলা ও এলবিটিভি এর পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
জাহাঙ্গীর আলম খান:– আপনাদেরকেও ধন্যবাদ এবং দেশে আসলে শেরপুরে আপনাদের সকলের দাওয়াত।