শরিয়া ও সুদবিহীন বিনিয়োগের কথা বলে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে এহসান গ্রুপ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাদের বিষয়ে যে পরিমাণ তথ্য রয়েছে তা রিটকারী আইনজীবীকে আদালতে দেওয়ার আদেশ দিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মাইক্রোক্রেডিটের (ক্ষুদ্রঋণ) নামে সুদব্যবস্থা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা রিটের শুনানিতে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
শুনানিতে আদালত দেশে মাইক্রোক্রেডিট (ক্ষুদ্রঋণ) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কতগুলো সেই তথ্য জানতে চেয়েছেন। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ব্যারিস্টার সুমন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদন তুলে ধরেন শুনানিতে। তিনি দেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী ৭৫৮টি প্রতিষ্ঠান আছে বলে জানান আদালতকে। এসময় আদালত জানতে চান, কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম বলেন যাদের নিবন্ধন নেই।
তখন সুমন বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে চাচ্ছি না। তবে আমরা খোঁজ নিতে চাই, কতগুলো প্রতিষ্ঠান গরিব-অসহায় মানুষের সর্বনাশের সঙ্গে জড়িত।’
পিরোজপুরভিত্তিক এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসানকে নিয়ে এসময় আদালত বলেন, শরিয়া ও সুদবিহীন বিনিয়োগের কথা বলে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এহসান গ্রুপ। তারা শরিয়া ও ইসলামের কথা বলে এসব করেছে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর মাইক্রোক্রেডিটের নামে সুদব্যবস্থা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়। রিট আবেদনে সারাদেশের সুদ ব্যবসায়ীদের তালিকা চাওয়া হয়।
রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ৬৪ জেলার ডিসি ও এসপিকে বিবাদী করা হয়।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে জনস্বার্থে গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট করেন।
জাগো নিউজকে সুমন জানান, দেশের প্রত্যেক গ্রাম ও মহল্লায় সমবায় সমিতিসহ বিভিন্ন নামে সুদের লেনদেন চলছে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ঋণের নামে উচ্চহারে সুদ নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। তাদের কোনো নিবন্ধন নেই। গরিব-অসহায় মানুষ সুদ কারবারিদের কাছে জিম্মি। তাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে আদায় করা সুদের পরিমাণও গরিব মানুষের কাছে খুব বেশি।
সুমন বলেন, এদের নেটওয়ার্ক যদি ভেঙে দেওয়া যায়, তাহলে দাদন কারবারিদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া কোনো বিষয় নয়। এজন্য ডিসি-এসপি তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এটা যদি কোনোভাবে ভেঙে দেওয়া যায় তাহলে দেখবেন অনেক মানুষ বেঁচে যাবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ৮৪টি মাইক্রোক্রেডিটের অথরিটি লাইসেন্স আছে। অথচ হাজার হাজার মানুষ সুদের কারবার করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এটা নিয়ে কোনোভাবে নাড়াচাড়া করে তাহলেই হবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার চাইলে এই নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া সম্ভব।
সুমন বলেন, দাদন ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে কাউকে গুলি করতে হবে না। বড় কোনো অভিযান চালাতে হবে না। শুধু কারা এ দাদন কারবারের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা করলেই হবে। সফলতার মাত্রায় আমরা আরেকটা জিনিস যোগ করতে চাই, শপথ নিতে চাই, দাদন কারবার নিয়ন্ত্রণে। তবেই সোনার বাংলা হবে এ দেশ।