সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত বক্তা কাজী ইব্রাহিম তার শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নিজের ইচ্ছেমতো মনগড়া কথাবার্তা ওয়াজ মাহফিল, খুতবা এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তিনি এমন কথা স্বীকার করেন।
শনিবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুদিনের রিমান্ড শেষে মুফতি ইব্রাহিমকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. হাসানুজ্জামান। ওই প্রতিবেদনে তিনি এসব কথা উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘কাজী ইব্রাহিম তার শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নিজের ইচ্ছেমতো মনগড়া কথাবার্তা ওয়াজ মাহফিল, খুতবা এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। তাছাড়া বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারসহ কাজী ইব্রাহিম উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বপ্নের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেন। বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। এছাড়া করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য কোরআন শরিফের রেফারেন্স দিয়ে ‘মাইনাস ওয়ান ডট কিউ সেভেন প্লাস সিক্স ইক্যুয়াল থার্টিন’ একটি সূত্র বলে কোরআন শরিফের আয়াতের কল্পনাপ্রসূত মনগড়া ব্যাখ্যা দেন। এছাড়া তিনি ইতালি প্রবাসী মামুন মারুফের স্বপ্নে দেখা করোনাভাইরাসের সঙ্গে কথোপকথনের ইন্টারভিউ কল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্যসহ বর্ণনা করেন এবং ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের কথা স্বীকার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।’
এদিন কাজী ইব্রাহিমের পক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমানের আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মুফতি ইব্রাহিমকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান নোমান তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে বুধবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ঢাকা মহানগর ডিবি উত্তরের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আব্দুল লোকমান বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে জেড এম রানা নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৪২০, ৪০৬ ও ৩৮৫ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে মুফতি কাজী ইব্রাহিম নানা বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। তার বক্তব্যের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল।