ব্রিটেনে লকডাউন আইন লঙ্ঘনের মিথ্যা অজুহাত এনে তরুণী এভারার্ডকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত পুলিশের কর্মকর্তা ওয়েন কুজেন্সকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনার পর একা থাকা কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে নারীদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। কোনো পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা দেখলে নারীদের দৌড়ে কোনো বাড়িতে আশ্রয় নেয়া, চিৎকার করে বাস থামানো, কিংবা জরুরি পরিষেবায় ফোন করার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।
চলতি বছরের ৩ মার্চ ৩৩ বছর বয়সী সারা এভারার্ডকে গ্রেফতারের নামে জোর করে একটি ভাড়া করা গাড়িতে তোলেন ওয়েইন কুজেন্স। সম্প্রতি ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ভুয়া ওয়ারেন্ট দেখিয়ে তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি আদালতে এই ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় আদালতের বিচারক বলেন, এই মামলাটি ধ্বংসাত্মক, মর্মান্তিক এবং একেবারে নৃশংস। কুজেন্সকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, আপনি আপনার পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং আপনার অনুশোচনার কোনো প্রমাণ নেই। বিচারক ওই হত্যাকাণ্ডকে জঘন্য বলে বর্ণনা করে বিচারক আরো বলেন, মামলার ভয়াবহতা এতটাই ব্যতিক্রমী যে এটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশের নিশ্চয়তা দেয়।
সারাহ হত্যাকাণ্ডে দেশটিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়। সারাহর নিখোঁজের ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয় ব্রিটেনে। ওসব বিক্ষোভে এক দিন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনও যোগ দিয়েছিলেন। সারা দেশে রাস্তায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রতিবাদের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করে। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কূটনৈতিক সুরক্ষা শাখায় কর্মরত ৪৮ বছর বয়সী ওয়েন কুজেন্স গত জুলাইয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সারাহকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যার কথা স্বীকার করেন।
দক্ষিণ লন্ডনের ক্ল্যাফামে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় সারাহকে করোনাবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তুলে নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তা ওয়েন। তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। আলামত ধ্বংস করতে ওই তরুণীর লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেহাবশেষ একটি জঙ্গলে ফেলেন দেন ওয়েন।
পুলিশের নিরাপত্তা ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, সারাহকে গাড়িতে তুলে নেয়ার আগে পুলিশ কর্মকর্তা ওয়েন ওয়ারেন্ট কার্ড দেখান, হাতকড়া পরান। পাশ দিয়ে গাড়িতে করে চলে যাওয়া এক দম্পতি এ ঘটনা দেখেন। তারা মনে করেছিলেন, আন্ডারকাভার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা হয়তো কাউকে গ্রেফতার করছেন।
আইনজীবী বলেন, লকডাউন বিধিনিষেধ প্রয়োগকারী ওয়েন তার জ্ঞান এবং পুলিশ টহলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন। কোনো ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি জানতেন। সারাহর সাবেক এক প্রেমিক বলেছেন, সারাহ বুদ্ধিমান এবং তার রাস্তায় চলাচলের জ্ঞান ছিল। জোরাজুরি করে অথবা ভুল বুঝিয়ে কোনো অপরিচিত ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলতে পারতো না।
এদিকে একা থাকা কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে নারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। কোনো পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা দেখলে নারীদের দৌড়ে কোনো বাড়িতে আশ্রয় নেয়া, চিৎকার করে বাস থামানো, কিংবা জরুরি পরিষেবায় ফোন করার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।