পাবলিক ইনফোরমার II প্রধান মন্ত্রীর টাগের্ট মুসলিম কমিউনিটি
⁃ দিনার হোসেইন
চলতি সাপ্তাহের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার অন্যতম প্রধান বিষয়টি হলো প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরোন সকল মুসলমান বিশেষ করে মহিলাদের ইংরেজী শিক্ষার আহবান জানিয়েছেন। ইংরেজী শিক্ষায় অবহেলা দেখালে বৃটেন থেকে বের করে দেবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন। তার বক্তব্যে সারা দেশে মুসলিম কমিউনিটিতে সমালোচনার জড় তোলেছে। বিশেষ করে ইংরেজী শিক্ষার সাথে উগ্রপন্থীদের সম্পর্ক টেনে এনেছেন (রেডিক্যালাইজেসন)।
অনেকের মতে তার এ বক্তব্যে শুধু মুসলিম বিরোধী মনোভাবের প্রকাশ পায়নি (যদি ও ডেভিড ক্যামরোন মুসলিম বিরোধী নন) সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো কে বা কারা রেডিক্যালাইজেশন সম্পর্কে প্রধান মন্ত্রীকে উপদেশ দিচ্ছে, তা নিয়ে যতেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যই বৃটেনের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেছি। বারোনেস ওয়ারসি, সাজদা শাহ, সালমা ইয়াকুব সকলেই ইংরেজী শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন কিন্তু এ ব্যাপারে মুসলিম কমিউনিটিকে সিংগল আউট করাতে অনেকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
বৃটেনে কেবল মুসলিম মহিলারা নয়, অনেক পুরুষরাও এমন কি অন্যান্য ইর্ষ্টান ইউরোপীয়ান কমিউনিটি থেকে আগত সকলকে ইংরেজী শিক্ষা গ্রহন করা উচিত। জুইস কমিউনিটি, হিন্দু কমিউনিটি সকলকে ইংরেজী শিক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সকল এদেশের নাগরিক, ইংরেজী শিক্ষা আমাদের নিঃসন্দেহে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অনেকেই হয়ত বা জানেন, ৮০ এবং ৯০ দশকে এদেশে ইংরেজী শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান আর্থিক অনুদান (ই, এস, এল) ছিলো, কিন্তু এই টোরী সরকারই সকল আর্থিক অনুদান বাজেট থেকে কেটে ফেলেছেন। পরবর্তিতে লেবার সরকার ও কোন আর্থিক অনুদান দেয়নি। অর্থনৈতিক মন্দাতার কারনেই হয়তোবা তা আর হয়ে উঠেনি। কিন্তু প্রধান মন্ত্রীর হঠাৎ ইংরেজী শিক্ষার আগ্রহ বিশেষ করে মুসলিম কমিউনিটির উপরে গুরুত্ব দেয়ায় আরো সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ইংরেজী শিক্ষা আমাদের চলার পথে অনেক সহায়তা করবে। বিশেষ করে আমাদের কমিউনিটিতে মহিলাদের পুরুষদের উপর নির্ভরশীলতা অনেক কমবে। এমন কি তাদের নিত্যদিনের চলা ফেরা করতে অনেক সহায়তা করবে। এ উদ্যোগ অত্যান্ত সৎ এবং নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
অমরা দলমত নির্বিশেষে ইংরেজী শিক্ষার জন্য প্রধান মন্ত্রীর এই আর্থিক অনুদান কে সমর্থন করা উচিত। কিন্তু এব্যাপারে প্রধান মন্ত্রীর আরো একটু সচেতনতার পরিচয় দেয়া উচিত। মুসলিম কমিউনিটিকে সিংগল আউট করায় বিতর্ক আসবেই, স্বাভাবিক। সম্প্রতি প্যারিস আক্রমনের পর মুসলিম বিরোধী প্রপাগান্ডা আমরা আনেক দেখছি আর নিরহ মুসলমানরা পস্চিমা দেশে হয়রানির স্বিকার হতেও আমরা দেখেছি। এছাড়া কিছু কিছু নেতাদের বক্তব্য নিঃসন্দেহে ঘৃণার সৃষ্টি করছে। আমেরিকার ডোনাল্ড ট্র্যাম্প তার মধ্যে অন্যতম। তবে প্রকৃত ইংরেজী শিক্ষার জন্য শুধু বি এম ই কমিউনিটি নয়, ই ডি এল এমন কি বৃটেন ফার্ষ্ট কে ইংরেজী শিক্ষার জন্য ক্লাসে যাবার প্রোয়জন আছে বৈকি, তারা শুধু শুদ্ধ ইংরেজী কথা বলতে অক্ষম নয়, তাদের বৃটিশ নাগরিক হিসাবে কি করনীয় এমন কি আমাদের বৃটিশ ভ্যালু কি ভাবে শিক্ষা দেয়া যায়, তাও প্রধানমন্ত্রী কে তলিয়ে দেখার প্রয়োজন।
আর রেডিক্যালাইজেশনের দমনে ইংরেজী শিক্ষা কি ভাবে সহায়তা করবে তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। রিচার্সে দেখা গেছে অনেক বাচ্চাদের অন লাইনে গ্রুমিং করা বা ব্রেইন ওয়াস করা হচ্ছে, এ ব্যাপারে অভিবাবকদের নজর রাখা উচিৎ। আপনার বাচ্চার কম্পিউটার আর স্মার্ট ফোনের ব্যাবহারের দিকে একটু দৃষ্টি রাখা উচিৎ। বৃটিশ নাগরিক হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ইংরেজী শিক্ষার ব্যাপারে আর্থিক অনুদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কিন্তু কোন এক কমিউনিটি কে সিংগল আউট করা নিন্দনীয়ও বটে।