জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর একটি বক্তব্য নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন এবং জাতীয় দৈনিকে গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে ফলাও করে নিউজ ছাপা হচ্ছে। বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেনের পরিচালনায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত শীর্ষক এক আলোচনায় আবদুল গাফফার চৌধুরী একক বক্তা ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখিত আল্লাহর ৯৯ নাম জড়িয়ে বক্তব্য রেখেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে দাবী করা হচ্ছে। এ ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের অনলাইন ভার্সনে শিরোনাম করা হয়েছে ‘আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিল‘। একই শিরোনাম দিয়েছে অনলাইন পোর্টাল শীর্ষ নিউজ। বাংলাদেশ নিউজ ২৪-এর একই শিরোনাম। আরেক অনলাইন পোর্টাল জাস্ট বিডি ডট কমের শিরোনাম হলো ‘ধর্ম পরিবর্তন করতে পারি, বাঙালীত্ব নয়,। আমার দেশের শিরোনাম হলো কাফেরদের দেবতাদের নামে আল্লাহর ৯৯ নাম। তবে প্রকাশিত সংবাদগুলোতে এ বিষয়ে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য নেই। দেশের একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার বিকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত বাংলাদেশ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে একমাত্র আলোচক ছিলেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের অতীত এবং ভাষার বিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিল। এগুলো আমরা বাংলা ভাষায় এডপ্ট করেছি। যেমন আবু হুয়রায়রা নামে অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। এভাবে আমরা অনেক নাম রাখি। কাফেরদের মধ্যে যারা মুসলমান হয়েছিল তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। বোরখা এবং হেজাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে ওয়াহাবীদের সর্বশেষ মতবাদ। তিনি বলেন, যত দিন আমাদের ভাষা থাকবে, রবীন্দ্র নাথ থাকবে, বঙ্গবন্ধু থাকবে ততদিন বাংলাদেশকে তালেবানরা ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমি বেঁচে থাকবো কি না জানি না, তবে আজকে একটা কথা বলতে পারি আগামী ১৫/২০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে দুটো রাষ্ট্রে বিলুপ্তি হবে। এ দুটো রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান ও ইসরাইল। একটি দেশ দক্ষিণ এশিয়াকে অশান্ত করে রেখেছে, আরেকটি দেশ মধ্যপাচ্যকে অশান্তির মধ্যে রেখেছে। আমেরিকার পতনের সাথে সাথেই এদের পতন হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। তারপরেও বাংলাদেশ শেখ হাসিনার মত ইস্পাতরূপী নেত্রী পেয়েছে। যিনি কিনা মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তাকে ৯ বার হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আমি হলে ভয়ে চলেই যেতাম কিন্তু তিসি সাহসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন যে বিরোধী দল রয়েছে এটাকে গণতান্ত্রিক বিরোধী দল বলা যায় না, এটা হচ্ছে প্রয়োজনের বিরোধী দল। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান থেকে বিভক্ত হয়ে আমাদের ভালই হয়েছে। তা নাহলে এতদিন আমাদের দেশে ড্রোন হামলা হতো। মাদ্রাসা এবং মসজিদগুলো তালেবানরা দখল করে নিতো। আমাদের সৌভাগ্য হচ্ছে আমরা আগে বাঙালি তারপরে মুসলমান। যে কারণেই বাংলাদেশ ধ্বংস হবে না, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আমার হয়ত ভুল হতে পারে। কিন্তু আমার একটি বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই আমি লিখছি। আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, মৌলবাদী রাষ্ট্র আমরা চাই না, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একবার স্বৈরাচার আইয়ুব এসে বলেছিলেন বাঙালিরা হচ্ছে দাসের জাতি, বুটের তালায়পৃষ্ঠ জাতি। সেই সময় এই স্বৈরশাসকের কেউ বিরোধিতা করেনি। একজন বিরোধিতা করে বলেছিলেন বাঙালি সংগ্রামের জাতি আর পাঞ্জাবীরা হচ্ছে দাসের জাতি। এই কথাটি বলেছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জটিল হলেও বাংলাদেশের ভবিষ্যত ভাল। বাঙালি জাতি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখবে। তিনি বাংলা ভাষার বিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো। আমরা নামগুলোকে এডপ্ট করে নিয়েছি। যেমন আবু হুরায়রা নামের অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকরের নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। আমরা কী সেই নামগুলো পরিবর্তন করছি? কাফেরদের মধ্যে যারা মুসলামান হয়েছিলো তাদের নামগুলো কী পরিবর্তন করা হয়েছে?
তিনি বলেন, আমেরিকানরা তালেবান সৃষ্টি করে এখন বিপদে পড়েছে। আর বাংলাদেশের জামাত দ্বীনে মোহাম্মদী নয়, তারা হচ্ছে দ্বীনে মওদুদী। হিজাব এবং বোরখা হচ্ছে মওদুদীর শেষ মতবাদ। আর জামাত এক সময় কোরবানীর গোস্তের চালে (চামড়ার পয়সায়) চলতো।
তিনি বলেন, আমি জিয়াউর রহমানকে ঘৃণা করি। কারণ তাকে আমি দেখেছি যুদ্ধের সময়। সাবুরা সেক্টরে আমি তার সাথে ছিলাম। সে সারাক্ষণ মাথার চুল চিরুনী দিয়ে আচরাতো আর খবর নিতো কোন রাষ্ট্রদূত আসছে কি না? এখন কী না তাকেই বলা হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ সে একটি মাত্র বাণী পাঠ করেছিল। তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বেগম জিয়া আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেন কীভাবে? তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধর্মের বাবা ডেকেছিলেন। তিনিই তার সংসার রক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি ও মৌলবাদ। মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী একটি মন্তব্য করে কি না বিপদে পড়েছেন। তিনি এমন কি বলেছেন?
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের গণসচেতনা গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজদের ফাঁসি দিতে হবে
[Adverts]
এখনো সময় আছে আল্লাহ কে ভয় কর
মনে রাখিস সবার মৃত্যু আছে