৬ জুন ২০১৫: বহু প্রতিক্ষিত ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তিতে উভয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের স্বাক্ষর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করেছে। একই সঙ্গে পঞ্চগড়ের ৩৬ টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের মনে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দীদশা থেকে মুক্তির উচ্ছাস প্রকাশ পেয়েছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকায় সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে অমীমাংসিত স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিলে স্বাক্ষরের খবর প্রচার শুরু হল।
ঠিক তখনই আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন লালমনিরহাটের হাতীবান্দার উত্তর গোতামারী ভারতীয় ছিটমহল বাসিন্দারা। নরেন্দ্র মোদি জিন্দাবাদ, শেখ হাসিনা জিন্দাবাদ, মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ স্লোগান নিয়ে আনন্দ মিছিল নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন দীর্ঘদিন সুবিধাবঞ্চিত থাকা এই ছিটমহলের বাসিন্দরা। শুধু এই ছিটমহলেই নয়, লালমনিরহাটের ৫৯টি ছিটমহলের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এ সব ছিটমহলের বাসিন্দারা আনন্দ মিছিল বের করেন। এ সময় পৃথক পৃথকভাবে তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করে।
পরে তারা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে। বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার গাড়াতি ছিটমহলেও আনন্দ মিছিল ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ওই ছিটমহলের বাসিন্দারা। এ সময় ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সহ সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, পঞ্চগড়-নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি মফিজার রহমানসহ ছিটমহলবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির পঞ্চগড়-নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি মফিজার রহমান জানান, আমাদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন সফল হয়েছে। আমরা এখন মা-মাটির দেশে বাংলাদশি নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবো। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে। ছিটবাসীরা তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে।
দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক ও তিন দিক থেকে ভারত বেষ্টিত জেলা পঞ্চগড়ে রয়েছে ৩৬টি ছিটমহল মহল। পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলা, বোদা, দেবীগঞ্জ তিন উপজেলায় গাড়াতি, শিংগীমারী, নাটকটোকা, বেহুলাডাংগা, বালাপাড়া খাসবাড়ি, কোট ভাজনি, দহলা খাগড়াবাড়ি, কাজলদিঘি, পুটিমারী, নাজিরগঞ্জ, দৈখাতা ও শালবাড়িসহ ছোট বড় ৩৬ টি ছিটমহল রয়েছে।
২০১১ সালের গণনা মতে ১১ হাজার ৯৩২ দশমিক ৮০ আয়তনের এসব ছিটমহলের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার ৪৩ জন। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯ জন পুরুষ ও ৯ হাজার ৩৪ জন মহিলা বাসিন্দা রয়েছে।