ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ, বাংলাদেশে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল

অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ, বাংলাদেশে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল

Hudhud1অক্টোবর ১২, ২০১৪: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘হুদহুদ’ ভারতের বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামের মাঝামাঝি জায়গায় ২০৫ কিলোমিটার থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়েছে। রোববার সাড়ে ১১টার পর থেকে তুমুল শক্তি নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। ওইসব এলাকার জনজীবন অচল হয়ে গেছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা সরকার সেনা সাহায্যের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।

রাজ্যগুলির ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে শনিবার রাতে একটি জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব এবং আবহাওয়া দফতরের অফিসারেরা।

বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামে আটটি উদ্ধারকারী দল ও চারটি ইঞ্জিনিয়ারের দলকে রাখা হয়েছে। গোপালপুরেও আটটি উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে দক্ষিণ মধ্য রেলওয়ের ৩৩টি ট্রেন বাতিল করে দেয়া হয়েছে৷‌

হুদহুদ নিয়ে জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠ। পরে ওড়িশা ও অন্ধ্রের মুখ্যসচিবদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ওই দুই রাজ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ৩৯টি দল পাঠানো হয়েছে।

জাতিসংঘ পরিচালিত বৈশ্বিক দুর্যোগ সতর্কতা ও সমন্বয়কারী সংস্থা- জিডিএসিএস এবং ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ২১২ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই আশংকা সত্যি হলে হুদহুদ ‘ক্যাটাগরি ৪’-এর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এবং এর ফলে ঝড়ের আক্রমণে ফল সর্বনাশা হতে পারে।

অন্ধ্র প্রদেশ ছাড়াও ঝড়ের আশংকায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উড়িষ্যা রাজ্যের হাজার হাজার মানুষকে আরো উত্তরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিকে ‘হুদ হুদ’ ভারতে উপকূলের দিকে এগোলেও তার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-৩ ফুট বেশি উঁচু বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রসঙ্গত, বছরের এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়া সাধারণ ঘটনা। প্রতি বছরে এ ধরনের ঝড়ে উপকূলবর্তী গ্রামগুলোতে প্রচুর হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে, বিদুৎ ব্যবস্থা ও ফোন সেবা বিপর্যস্ত হয়। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের পূর্ব উপকূলে ফসল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি তো রয়েছেই।

এ দুর্যোগ পরবর্তী প্রভাব পড়বে এক কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষের ওপর, জানিয়েছে জিডিএসিএস। আর সমুদ্রে এক থেকে দুই মিটার উচ্চতায় ঢেউয়ের কারণে বিশাখাপট্টম, বিজয়ানাগারাম এবং শ্রীকাকুলাম ও এদের আশপাশের নিম্নভূমির উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমডি।

বিভিন্ন সময়ে অঞ্চলটিতে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রেখেই বিগত বেশ কয়েক বছরের মত এবারো দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলো। ১০ বছর আগে একই অঞ্চলে একটি ঘূর্ণিঝড়ে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে সুষ্ঠু প্রচেষ্টার ফলে গত বছর ঘূর্ণিঝড় ফ্যাইলিনে এই সংখ্যা ৫৩-তে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।