সঙ্গে রাখছেন পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের প্রধানকে।। নির্বাচনী মাঠ দাবড়ে বেড়িয়েছেন পুরো সময়। তিনি আর কেউ নন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি এডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। নির্বাচনী মাঠে তার সরব উপস্থিতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক আর উত্তেজনা। নালিশ গেছে নির্বাচন কমিশনেও, সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন ওসিকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন। আর এমপি রয়েছেন নিজ এলাকায় বহাল তবিয়তে। তিনি মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের এক প্রার্থী একেএম ফজলুল হক বাচ্চুর পক্ষে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেণু নিজেকে দল সমর্থিত প্রার্থী দাবি করে বলেন, এমপি বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। পুলিশ কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। রেণুর আশঙ্কা নির্বাচনে এমপি সোহরাবের নেতৃত্বে কেন্দ্র দখল ও ফল পরিবর্তন হতে পারে। গত ২২শে মার্চ পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গানিয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর ছালেনিয়া হুসাইনিয়া দাখিল মাদরাসা মাঠে এক নির্বাচনী সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে এমপির ডান পাশে বসেন প্রার্থী একেএম ফজলুল হক বাচ্চু আর বাম পাশে বসেন পাকুন্দিয়া থানার ওসি হেদায়েতুল ইসলাম ভূঁইয়া। গতকাল ওই জনসভার ভিডিও প্রচার হওয়ার পর আতঙ্ক আরও জেঁকে বসে উপজেলা জুড়ে। সূত্রমতে এমপি হওয়ার আগে এডভোকেট সোহরাব উদ্দিন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন ফজলুল হক বাচ্চু। ২০০৯ সালের ২২শে জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন এডভোকেট সোহরাব। সেই সময়ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রফিকুর ইসলাম রেণু। এবার এমপি হওয়ায় নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই সোহরাব। তবে বাচ্চুর পক্ষে নিয়ে রেণুর বিরুদ্ধে মাঠে সরব। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আক্তারুজ্জামান খোকন এমপির উপস্থিতিকে আতঙ্কজনক উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপি যেভাবে একজন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রয়েছেন তা নজিরবিহীন। তিনিও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করেছেন। এমপি ও ওসির এমন আচরণ কমিশনকে জানানো হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পাকুন্দিয়া থানার ওসি’কে অন্যত্র বদলি করার আদেশ দিয়েছে। ২৯শে মার্চ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় ২-এর সহকারী সচিব মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি জানানো হয়। পত্রে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পাকুন্দিয়া থানার ওসি’কে অন্যত্র বদলি করার প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদন করেছে। সে মোতাবেক পাকুন্দিয়া থানার ওসিকে অন্যত্র বদলি করে তদস্থলে একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা পদায়নের জন্য অনুরোধ করা হলো।
উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে এমপি এডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন একেএম ফজলুল হক বাচ্চুকে দল সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে নিজেই নামেন নির্বাচনী প্রচারণায়। প্রচারণার বিভিন্ন সময়ে পুলিশ প্রটোকল নিয়ে তিনি তার সমর্থনে বিভিন্ন গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নেন। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় তার সঙ্গে একই মঞ্চে পাকুন্দিয়া থানার ওসি হেদায়েতুল ইসলাম ভূঁইয়াও উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েক দফা চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রেণুর সমর্থকদের তোপের মুখেও পড়তে হয় কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে।
এ অবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রেণু ও আক্তারুজ্জামান খোকন আশঙ্কা প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন, এমপি এডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের নেতৃত্বে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল হক বাচ্চুর (ঘোড়া) পক্ষে কেন্দ্র দখল এবং ভোটের ফল পরিবর্তন হতে পারে। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলাম রেণু (মোটরসাইকেল) অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে এমপি জোর করে পাটুয়াভাঙ্গা, জাঙ্গালিয়া ও অন্যান্য ইউনিয়নের ২০টি কেন্দ্র দখল করে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। বর্তমান এমপি হিসেবে প্রশাসনকে তার কথামতো চলতে হবে বলেও তিনি প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। এমপি’র এ ধরনের বক্তব্যে উপজেলায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ করে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামান খোকন (আনারস) বলেন, এমপি তার নিজ ইউনিয়নের ৩৮ নং পাটুয়াভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ৩৯ নং চকদিগা দাখিল মাদরাসা কেন্দ্র এবং ৪০ নং কলাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের ষড়যন্ত্র করছেন। তবে এমপি এডভোকেট সোহরাব উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অমূলক ও ভিত্তিহীন দাবি করেছেন।
১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পাকুন্দিয়া উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৯ হাজার ৮৯৯ জন এবং মহিলা ভোটার ৮২ হাজার ৬৬ জন। ৬৬টি ভোটকেন্দ্রের ৪৪৩টি ভোটকক্ষের মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রেণু (মোটরসাইকেল) ও একেএম ফজলুল হক বাচ্চু (ঘোড়া), বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আক্তারুজ্জামান খোকন (আনারস), বিএনপির দুই বিদ্রোহী মতিউর রহমান সরকার (দোয়াত-কলম) ও জহিরুল ইসলাম খোকন (টেলিফোন) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদির মোহাম্মদী (রাজটুপি)। তবে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির দুই বিদ্রোহী মতিউর রহমান সরকার ও জহিরুল ইসলাম খোকন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত ফারুক আহমেদ বিল্লাল (বৈদ্যুতিক বাল্ব), জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আজিজুল হক (চশমা), চার আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন আনার (তালা), মোহাম্মদ আছাদ মিয়া (নলকূপ), আবদুল আউয়াল (উড়োজাহাজ) ও নাজমুল কবীর (টিয়া পাখি) এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আলম (মাইক) ও আমিনুল হক মানিক (বই) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত নূরুন নাহার ফাতেমা (পদ্মফুল), বিএনপির দুই নেত্রী রওশনারা (প্রজাপতি) ও শামসুন্নাহার (কলস), স্বতন্ত্র প্রার্থী হারেছা খাতুন (বৈদ্যুতিক পাখা) এবং তিন আওয়ামী লীগ নেত্রী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা খাতুন (হাঁস), নার্গিস বেগম (সেলাই মেশিন) ও খালেদা আক্তার (ফুটবল) আজকের ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশের পুলশের কথা বলে লাভ আছে তারা এখন একের ভিতর সব। করন তারা এখন করে । নির্বাচনী প্রচারনা এটা তো তাদের জন্য কিছু না।