বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করেছেন দেশের সুশীল সমাজের প্রায় সব প্রতিনিধিরা। এর আগে সাংবাদিক সাহিত্যক ও বুদ্ধিজীবীরাও নির্বাচনকে না বলেছেন।
রোববার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের একদিন আগেও দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের কাছে এই নির্বাচন না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় এই সময় সবার অংশগ্রহনের মাধ্য দিয়ে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। পৃথিবীর সব দেশও এই নির্বাচন থেকে ইতিমধ্যেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একটি অর্থবহ নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আরও বলেছেন, দেশের প্রায় ৫ কোটি ভোটার ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করুন। নির্বাচনের নামে দেশের তহবিল থেকে ৫শত কোটি টাকা খরচেরও একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
শনিবার সকালে এ বিষয়ে কথা বলেন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, অর্থনীতিবীদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. আকবর আলী খান, সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ড. শাহদিন মালিক, সাংবাদিক ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, ড. মাহফুজউল্লাহ, মাহফুজ আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মনিরুজ্জামান মিয়া, এস.এম.এ ফায়েজ, অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. আসিফ নজরুল, কবি আল মাহমুদ, আব্দুল হাই শিকদার, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা অংশগ্রহন করছে না, সে তালিকা অনেক লম্বা হবে। কারা অংশ নিচ্ছে এই নির্বাচনে? আওয়ামী লীগ আর তাদেরে লেজুরবৃত্তিক দু’য়েকটি দল ছাড়া কাউকেই পাবেন না। তাদের গৃহপালিত দল জাতীয় পার্টিও আজ তাদের সঙ্গে নেই। তাহলে এই নির্বচন কি অর্থবহ হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ কি বলছে, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে না? তাহলে কেন আমরা পাঁচ বছর পর সব দলের অংশগ্রহনে একটি নির্বাচন করতে পারবো না। কেন এই নির্বাচনের নামে পাঁচশ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। অবৈধ এই নির্বাচনের কি প্রয়োজন?’
অর্থনীতিবীদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আজ আমার বাংলা জনপ্রিয় সেই গানটি খুব মনে পরছে, আমার বলার কিছু ছিল না.., ভোট হয়ে গেল, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম….। আমার মত ছোট খাট মানুষরা এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে এত বললো, এত লিখলো, কোন কিছুই যেন গায়ে বিধলো না। গায়ে বিধলো না বিদেশীদের আহ্বানও। এখন শুধু ঐ গানটি গাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবীদ ড. আকবর আলী খান বলেন, ‘আমি তিনটি পাঁচ এর হিসাব জানতে চাই সরকারের কাছে। একটি হচ্ছে- কেনো আমরা পাঁচ বছর পর একটি সংসদ নির্বাচন সবাইকে নিয়ে করতে পারবো না? দুই- কেনো দেশের পাঁচ কোটি ভোটার নির্বাচনে তাদের ভোট প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন? তিন- কেনো এই প্রহসনের নির্বাচনে সরকারের তহবিল থেকে পাঁচশ কোটি টাকা খরচ করা হবে? এই তিন প্রশ্ন আমার সরকারের কাছে। উত্তর পেলে আমি নির্বাচনের পক্ষে মত দেব। ভোটও দেব।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই নির্বাচন অর্থবহ হবে না একথা যে শুধু আমি একাই বলছি তাতো নয়, সুশীল সমাজের সবারই আজ একটি কথা, একটি দাবি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এ দাবি কার কাছে? যার বা যাদের কাছে তারাতো শুনছেন না। গায়ে মাখাচ্ছেন না। ক্ষমতার দাপটে যা মন চাইছে তাই করছেন। একদিন সামনে রেখে আমাদের এ চাওয়া শুধু হতাশা আর ক্ষোভই বাড়াতে পারবে। কার্যত কিছুই হবে না।’
ড. শাহদিন মালিক বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, সব দলকে নিয়ে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করুন। আর সব দলকে আনতে পারলে বল সরকারের কোর্টেই থাকতো। আনতে না পারার ব্যর্থতা অবশ্যই সরকারকে বহন করতে হবে। বল বিরোধীদের কোর্টে সরকারই ঠেলে দিয়েছে। এই নির্বাচনের দায়ও সরকারকেই বহন করতে হবে।’
সাংবাদিক ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত প্রতিষ্ঠিত এবং গণতন্ত্রের পক্ষের দল এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে, তা আমি মানতে পারছি না। এটা আমার জন অনেক কষ্টের। কারণ আমি নিজেও এই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কেন এই নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের তা আমার বোধগম্য নয়। কারা এই নির্বাচনের বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, কারা এর কুশিলব, তারাই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’
ড. মাহফুজউল্লাহ বলেন, ‘আর মাত্র একদিন বাকি। এখন আর এব্যাপারে বলে লাভ কি? দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী, বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র কারো কথাইতো শুনলেন না প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, নির্বাচন করবেন, তাই করছেন। আমরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি…।’
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘১৫৩টি আসনের প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাকি আছে ১৪৭টি আসনের ফলাফল। এ ফলাফলও সকলেই জানা। তাই এই নির্বাচন নিয়ে আর কথা না বলাই ভাল। কারণ কেউ যদি মনে করেন, তিনি নিজে যা করছেন তাই সবচেয়ে উত্তম, তাহলে আমরা তাকে টেনে ধারে আর অধম হবো কেন?’
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য মনিরুজ্জামান মিয়া, এস.এম.এ ফায়েজ, অধ্যপক আনু মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ, ড. আসিফ নজরুল, কবি আল মাহমুদ, আব্দুল হাই শিকদার, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ও গাজী মাঝহারুল আনোয়ার নির্বাচন বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
This is not fair election. I’m also not support this election. The election commission and present Govt. are Corrupted.