এ সময় জ্বালানি সচিব বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, আপনি (হোসেন মনসুর) কিছু বলতে চাইলে পরে বলুন। এরপর প্রায় ৪ মিনিটের বক্তব্যে দুর্নীতি বা অবৈধ সংযোগ নিয়ে আর তেমন কিছুই বলেননি জ্বালানি সচিব।
পরে মাইক্রোফোন নিয়ে নিজেই বক্তব্য দিতে শুরু করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর। এ সময় তিনি বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে অনেক উড়ো চিঠি আমি পাই। কিন্তু এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, এসব চিঠিতে যিনি অভিযোগ করেন তাকে জানা যায়নি। এতে করে বিষয়টি অস্পষ্টই থেকে যায়।
হোসেন মনসুর বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে, সেই ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে কি একজন ব্যক্তিও নেই যিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে স্পেসিফিক (সুস্পষ্টভাবে) কোনো অভিযোগ করতে পারে।
উপস্থিত শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা হয়তো বলবেন- গণমাধ্যমে যেসব দুর্নীতির খবর উঠে আসে সেগুলো কি তাহলে সঠিক নয়? আমি বলবো- গণমাধ্যম তো টেপ রেকর্ডার। একটি টেপ রেকর্ডারে একবার কোরআনের আয়াত পরিবেশন হয় আবার পরক্ষণই সেখানে পপ সঙ্গীতও চালানো হয়। সুতরাং গণমাধ্যমে উঠে আসলেই যে তা সঠিক, বিষয়টি এমন নয়।
অবৈধ সংযোগ কমাতে দ্রুততার সঙ্গে নতুন সংযোগ দেয়া হবে উল্লেখ করে ড. হোসেন মনসুর বলেন, অবৈধ সংযোগের কারণে কোম্পানির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ, এসব অবৈধ সংযোগের বিল মূলত বৈধ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়।
এ সময় যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, আপনারা যারা বৈধ সংযোগ ব্যবহার করছেন তারা প্রতিটি চুলায় মাসিক ৭২ ঘনমিটার গ্যাসের জন্য ৪৫০ টাকা করে পরিশোধ করেন। অথচ আপনাদের অনেকেরই এত পরিমাণ গ্যাস খরচ হয় না। এভাবেই এটাকে পুষিয়ে নেয়া হয়।
এরপর বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্রেটারি-১ ও তিতাসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আব্দুল মালেক। এক্ষেত্রেও একই কা- করে বসেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
আব্দুল মালেক তার বক্তব্যের শুরুতেই দুর্নীতি ও অবৈধ সংযোগের বিষয়টি তুলে আনলে তাতে হস্তক্ষেপ করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর।
এসময় হোসেন মনসুরের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর এই সেক্রেটারি বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিতাসের এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। এতে উপস্থিত অতিথিরা তাকে করতালি দিয়ে সাধুবাদ জানান।
পরে আব্দুল মালেক তার বক্তব্যে বলেন, অবৈধ সংযোগ রোধে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের মধ্য থেকে একজন পরিচালক নির্বাচিত করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন আমি তার সঙ্গে একমত। একই সঙ্গে তিতাসের নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই সেক্রেটারি বলেন, জরিমানার মাধ্যমে তিতাস অবৈধ সংযোগ বৈধ করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে আমি সেটাকে সমর্থন করি না। কারণ, এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবো না। এরা কারা? কারা এই অবৈধ সংযোগগুলো দেয়। এরা তো বাইরের কেউ নয়।
আব্দুল মালেক বলেন, এই দুর্নীতিবাজরা কেন রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করে নিজেরা গাড়ি-বাড়ি করবে। সরকারের টাকা মেরে কলেজ প্রতিষ্ঠা করবে। এটা হতে দেয়া যায় না। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে প্রয়োজন হলে তিতাসের নীতিমালাও সংশোধন করতে হবে।
তিতাসের এই পরিচালক আরো বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। যাতে কেউ অবৈধ সংযোগ দেয়ার নামে টাকা চাইলে জনগণ অভিযোগ করতে পারে।
এ পর্যায়ে আবারো হস্তক্ষেপ করে বসেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একাধিকবার পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রাইভেট সেক্রেটারি বলেন, ভাসা ভাসা বিজ্ঞাপন দিলে হবে না। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিষ্কার করতে হবে জনগণ কোথায় কোথায় অভিযোগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, পরিচালক, সচিব সবার কাছেই যাতে জনগণ অভিযোগ করতে পারে বিজ্ঞাপনে সে বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
এ সময় তিনি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, যিনি অবৈধ সংযোগ দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয় বিজ্ঞাপন দিয়ে যদি আপনি তার কাছেই অভিযোগ করতে বলেন তাহলে সেটা কতটুকু কাজে আসবে? এসময় আবারো করতালি দিয়ে তাকে সাধুবাদ জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা।