হরতাল-অবরোধে জামায়াত-শিবির রাস্তায় থাকে, পিকেটিং করে। কিন্তু তাদের প্রধান শরিক বিএনপি বা তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের কেন রাস্তায় দেখা যায় না- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা রাইজিংবিডিডটকম।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দলের তরফ থেকে পরিবারের দেখাশোনা এবং আর্থিক নিশ্চয়তা পাওয়ার কারণেই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামছেন। যে নিশ্চয়তা বিএনপি দিতে পারছে না তাদের দলীয় কর্মীদের।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্ড ছাত্রশিবির নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৬)। গত ২৭ নভেম্বর ১৮ দলীয় জোটের প্রথম দফা অবরোধ চলাকালে নাশকতার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। এখন আছেন চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে। গ্রেফতারের পর তার পরিবারে নেমে আসে দৈন্যদশা। কিন্তু বেশি দিন সেই সমস্যায় ভুগতে হয়নি তাদের। জামায়াত-শিবিরের নিয়োজিত সহায়ক সেল এখন তার পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে। সেলের পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের বাজারও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জাহাঙ্গীরের বাসায়।
এলাকাবাসী জানান, জাহাঙ্গীরের বাবা মারা গেছেন সাত-আট বছর আগে। আগ্রাবাদ এলাকার একটি আরবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতেন জাহাঙ্গীর। তখন থেকেই জড়িয়ে পড়েন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে। পাহাড়তলী থানার কাট্টলী এলাকায় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে বসে তার মা নজুমা আকতার বলেন, ‘আমার ছেলের সহযোগী শিবির নেতা আলাউদ্দিন প্রতিদিনের বাজার এনে দেয়। এজন্য আমাদের সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছে না।’
কথা হয় জাহাঙ্গীরের বাসায় বাজার সরবরাহকারী আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি নিজেকে পাহাড়তলী ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সাথী পরিচয় দিয়ে বলেন, জাহাঙ্গীরের পরিবারে উপার্জনের কেউ নেই। তার মা ও দুই বোনের খাওয়ার জন্য নিত্যপণ্যের বাজার সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আলাউদ্দিন বলেন, শুধু জাহাঙ্গীর নন, হরতাল-অবরোধে পাহাড়তলী ওয়ার্ড জামায়াত এবং শিবিরের ১৫-১৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা কারাগারে থাকায় পরিবারের সদস্যদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছিল। তাই তাদের পরিবারে কাঁচাবাজারসহ আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সংগঠন।
তিনি আরো জানান, সংগঠন থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে পাহাড়তলী ওয়ার্ড জামায়াত নেতা মোবারক আলী, মাওলানা ফারুক হোসেন, আলতাফ হোসেন, মো. ইদ্রিস, শিবির কর্মী আরিফুর রহমান, এসকান্দর, নাঈম হোসেন, মনিরুল ইসলামসহ ১১ জনকে।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা পুলিশ চলতি মাসের শুরুতে ডিসি হিল এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের ৩০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তারাও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচ-ছয়জন নেতা-কর্মীর পারিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এসব পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে।
শুধু তা-ই নয়, সাতকানিয়া উপজেলার হাসমতের দোকান এলাকা থেকে এক মাস আগে গ্রেফতার হন উপজেলা জামায়াত কর্মী মাওলানা বশির উদ্দিন, ছাত্রশিবির নেতা নজরুল ইসলাম ও নুরুল আলম। বর্তমানে তারাও কারাগারে। তাদের পরিবারের যাবতীয় খরচও জোগাচ্ছে উপজেলা জামায়াত-শিবির।
সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাথী মবিনুল হক বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্যই তো ওরা গ্রেফতার হয়েছে। এজন্য তাদের পরিবারের লোকজনের খোঁজখবর রাখে সংগঠন এবং খরচও বহন করে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রশিবিরের নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে উপজেলার ১১০ জন নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া এসব নেতা-কর্মীর মধ্যে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ জনের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এজন্য সংগঠন থেকে ওইসব পরিবারের জন্য খরচ দেওয়া হচ্ছে।’
বাঁশখালী উপজেলা জামায়াতের রুকন মাওলানা মো. ইউছুপ বলেন, গত দুই মাসে বাঁশখালী থেকে আটজন জামায়াত-শিবির নেতা আটক হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা জামায়াত নেতা মাওলানা মো. শফি জানান, গত দুই মাসে উপজেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের নয়জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের পরিবারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার ও আর্থিক খরচ দিচ্ছে সংগঠন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা শামসুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের অপর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সংগঠনের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তাদের পরিবার-পরিজন অভাব-অনটনে কষ্ট পাক, তা আমরা চাই না। ওরা তো আমাদেরই ভাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি একান্তই সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এ নিয়ে গণমাধ্যমের এত কৌতূহলের কী আছে?’ এ নিয়ে কোনো রকম লেখালেখি না করাই ভালো বলে উল্লেখ করেন তিনি।