বাংলাদেশের তীব্র আপত্তির মুখে অবশেষে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের ম্যাপ থেকে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য সরিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখনও তারা সেইন্ট মার্টিনকে মিয়ানমারের অন্যন্য অঞ্চলের মত একই রংয়েই এঁকে রেখেছে।
এর আগে সেইন্ট মার্টিনকে নিজেদের ম্যাপের অংশ বলেই দাবী করেছিল। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মেরিটাইম বিষয়ক সচিব এম খুরশীদ আলম গত শনিবার ঢাকায় কর্মরত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইন উকে এই বিষয়ে তলব করে আপত্তি জানালে মিয়ানমার প্রশাসন ক্ষমা চাওয়ার পর সেই তথ্যগুলো ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেললেও এখনও সেইন্ট মার্টিনকে নিজেদের এলাকা বলেই দাবী করে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের তথ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট এই ম্যাপটি তৈরী করেছে যেখানে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং রাখাইন রাজ্যকে একই রংয়ে আঁকা হয়েছে যাতে বোঝা যায় যে, মিয়ানমার প্রশাসন রাখাইনের মত করেই এই দ্বীপটিকেও নিজেদের দেশের অংশ হিসেবে দাবী করে।
মিয়ানমার গত ৩০ বছরের মধ্যে মাত্র একবার আদম শুমারী করতে পেরেছে। ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ থেকে শুরু করে একই বছরের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ইউএনএফপিএ’র সহযোগিতায় মিয়ানমারের অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রনালয় এই আদমশুমারী পরিচালনা করে।
কিন্তু ১৯৩৭ সাল থেকে ইতিহাসের পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে সেইন্ট মার্টিন কখনোই মিয়ানমারের কোন অংশ ছিলনা। ১৯৩৭ সালে যখন মিয়ানমারের জন্ম হয় তখনও সেইন্ট মার্টিন বৃটিশ-ভারতের অধীনে ছিল। তার মানে তখনও এটা মিয়ানমারের আওতায় নয় বরং ভারতীয় উপমহাদেশেরই একটা অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এটা পাকিস্তানের অংশ হয় আর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর সেইন্ট মার্টিন স্বাধীন বাংলাদেশের আওতায় চলে আসে। ১৯৭৪ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে এই দ্বীপকে বাংলাদেশের স্থায়ী অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
যদিও মিয়ানমার সেইন্টমার্টিনকে নিজেদের ম্যাপে দেখানোকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলছে কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় মনে করছে যে বিষয়টা এত সহজ নয়। মিয়ানমার দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা থেকেই অসৎ উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়েই কাজটি করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক সমুদ্র ট্রাইবুনালে যখন মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জয়লাভ করে তখনও বলা হয়েছিল যে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একটি অংশ। এরপরও দুটি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে মিয়ানমার নিজেদের যে ম্যাপ পাঠিয়েছে সেখানে এই দ্বীপকে তারা নিজেদের বলে দাবী করেছে যা অসততা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
মাস কয়েক আগে মিয়ানমার সামরিক প্রশিক্ষনের একটি ছবি আন্তর্জাতিক মহলে বেশ প্রচার করে বেড়ায় এবং দাবী করে যে বাংলাদেশে এভাবেই জংগী ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আসলে সেটা ছিল ৪৬ বছর আগের, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন দেয়ার একটি ছবি। এই ছবিটি তারা রোহিঙ্গা সংকটের উপর লেখা একটি বইতেও সংযোজিত করে। সে সময়ও বাংলাদেশ আপত্তি জানালে পরে তারা ক্ষমা চেয়ে সেই ছবিও প্রত্যাহার করে।
কিছুদিন পর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে উপহাস করে মিয়ানমার একটার পর একটা অন্যায় আবদার করেছে। পরে বাংলাদেশ সরকার আপত্তি জানালে তারা লোক দেখানো ক্ষমার নাটক করেছে।
বিশ্লেষকরা এজন্য সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কয়েক বছর আগেও এটা ভাবা যেতোনা যে মিয়ানমার বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে কিছু বলবে। বিগত ১০ বছরের ভারতনির্ভর পররাষ্ট্র নীতিমালা এদেশের ব্যপারে একটি পরজীবি ইমেজ তৈরী করেছে যার সুযোগ মিয়ানমারের মত দুর্বল দেশ নিতেও কোন পরোয়া করছেনা।