রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আমার রাজনীতির ৫৮ বছর হয়ে গেছে। আর রাজনীতির স্কুল কলেজ গুরুদয়াল হলেও এই কিশোরাগঞ্জের মাটি আর এই কিশোরগঞ্জের মানুষ আমার রাজনীতির বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার মানুষের কাছে আমি রাজনীতি শিখেছি। আমি রাজনীতি করার সময়ে কিশোরগঞ্জে রিকসা সংগঠন করেছি, রিকসাওয়ালা ভাইদের নিয়েও আমি রাজনীতি করেছি। মুটে শ্রমিক, ঠেলা গাড়ি শ্রমিক এদেরকে নিয়েও আমি রাজনীতি করেছি, সংগঠন করেছি। হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক তাদেরকে নিয়েও আমি রাজনীতি করেছি। প্রতিটি শ্রমজীবি মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করেছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এই কিশোরগঞ্জবাসীর দোয়ায় আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের দুই দুইবার রাষ্ট্রপতি হয়েছি। এটা আমার বড়ো পাওয়া। আমি মনে করি, এ পাওয়া আমার না সমস্ত কিশোরগঞ্জবাসীর এই পাওয়া। আমি জানি, কিশোরগঞ্জবাসী আমার জন্য দোয়া করেছে। তারা আমার সাফল্য কামনা করেছে। তাদের আন্তরিক কামনাতেই হয়তো আমি দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হয়েছি। আসলে এটা চরম পাওয়া এইজন্য যে, এ উপমহাদেশে এরকম দ্বিতীয় নজির আর নেই।
সোমবার বিকালে কিশোরগঞ্জ সদরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠে রাষ্ট্রপতিকে দেয়া গণসংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জের কৃতিপুরুষ মো. আবদুল হামিদকে এই গণসংবর্ধনা দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আজকে গুরুদয়াল কলেজের এই মাঠে এসে আমার অতীতের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। এই যে গুরুদয়াল কলেজ এ মাঠ থেকে আমার রাজনীতি শুরু যদিও স্কুলে থাকতে আমি রাজনীতি করেছি দুই বছর। আমার রাজনীতির নেতৃত্ব এই গুরুদয়াল কলেজ থেকে শুরু। ১৯৬১ সালে আমি মেট্রিক পাস করে গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হই। ৬১ সালে তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ফটো ভাঙ্গা দিয়ে শুরু করেছিলাম।
রাষ্ট্রপতি যোগ করেন, আমার মনে পড়ে, এই গুরুদয়াল কলেজের তখন প্রিন্সিপাল ছিলেন ওয়াসিমুদ্দীন স্যার। শিক্ষকেরা সাধারণত ভালো ছাত্রদেরকে পছন্দ করেন। কিন্তু ওয়াসীমুদ্দীন স্যারসহ যারা তখন শিক্ষক ছিলেন, কেন জানি না আমি ভালো ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও আমাকে পছন্দ করতেন। সেটা আমি আজো জানি না। তারা আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমি প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সে সময় যে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল, সে সংবর্ধনায় আমার ছোট ভাই সৈয়দ আশরাফ উপস্থিত ছিল। আমার দুঃখ লাগে, সে আজ পাশে নাই। কারণ সে অসুস্থ। তবে আমি আশা করি এবং পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আপনারাও করবেন, সে যেনো অচিরেই আমাদের মাঝে ফিরে আসে। আবারো যেনো সে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
এসময় গণসংবর্ধনা মঞ্চে থাকা সহধর্মিণী রাশিদা হামিদের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ৬১ সালে আমার দীর্ঘ রাজনীতি শুরু করলেও আজ থেকে ৫৪ বছর আগে ৬৪ সালে বিয়ে করেছিলাম। আমি কলেজে ছাত্রলীগ করার সময় তখন কোনো ছাত্রী রাজনীতিতে আসতে চাইতো না। তখন কি করব, এই সবেধন নীলমনি ঘরে একজন আছে, সেই ছাত্রীটাকেই ছাত্রলীগ বানিয়েছিলাম। আবার আওয়ামী লীগে যখন মহিলারা আসতো না, তাকে নিয়েই শুরু করলাম। তার অবদান আমি অস্বীকার করি না। কারণ সেই ৬৪ সালে বিয়ের পর থেকে ছাত্রজীবনে যে ছাত্র ভাইয়েরা আসতো, তাদেরকে সে চা বানিয়ে খাইয়েছে। তখন গ্যাস ছিল না, লাকড়ির চুলা আর কেরোসিনের চুলায় চা বানিয়ে খাইয়েছে।
এসময় তিনি রসিকতা করে বলেন, আমার কপাল ভালো, বউডা আমার বাইট্টা। যদি বেশি লম্বা-টম্বা থাকতো, তাহলে মনে হয় চা বানাইতে বানাইতে কোমরডা বাঁকা হইয়া যাইতো।
তিনি বলেন, আপনারা ট্রেনের দাবি করেছেন, এটা যৌক্তিক দাবি। ভৈরব এসে ট্রেন আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে কিশোরগঞ্জ আসতে হয়। যাওয়ার সময় আবার ইঞ্জিন ঘুরিয়ে ভৈরবে আধ ঘন্টা-এক ঘন্টার জন্য থাকতে হয়। এ জন্য একটা বাইপাস করে দিলেই ট্রেন সরাসরি কিশোরগঞ্জ আসতে পারে। এটার জন্য আমি ডিও লেটার দিয়েছি। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরেই খুব দ্রুত রেল মন্ত্রী ও রেল সচিবকে আমি বঙ্গভবনে ডাকবো। এ ব্যাপারে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং আমাদের ট্রেনের যে সমস্যা এগুলো দূর করা হয়। আমি প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়ে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন বাড়িয়েছিলাম। চাহিদার প্রয়োজনে এখন আবার একটা নতুন ট্রেনের দরকার এবং ট্রেনের কোচ এবং বগি বাড়ানো প্রয়োজন।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে নানা সাজে বাদ্য বাজিয়ে এবং বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ হাজির হন।
এর আগে দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ হেলিকপ্টারযোগে কিশোরগঞ্জ শহরের আলোর মেলা এলাকার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন। সেখান থেকে সার্কিট হাউজে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৩টায় রাষ্ট্রপতি সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠের গণসংবর্ধনাস্থলে পৌঁছান। তিন দিনের এই সফরের দ্বিতীয় দিন রাষ্ট্রপতিকে পেশাজীবনের স্মৃতি বিজড়িত জেলা আইনজীবী সমিতিতে সংবর্ধনা দেয়া হবে। বেলা সাড়ে ১১টায় জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
শীর্ষ নিউজ