বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে লোপাট হওয়া ২৩০ কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪.৪০ টন কয়লা ঘাটতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তা অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। খনি পরিচালনা পর্ষদের ২৮৩ তম সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়।
একই সঙ্গে এক লাখ ৫২ হাজার ৪৪৩.৪৩ টন কয়লা উদ্বৃত্ত রয়েছে বলেও পরিচালনা পর্ষদকে তথ্য দেয়া হয়।
জানা যায়, খনির উৎপাদন, বিক্রয়, ব্যবহার ও মজুদের আলোকে এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪.৪০ টন কয়লাকে ঘাটতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত এবং প্রতিটন কয়লার দাম ৭ হাজার ৮৩০ টাকা (উৎপাদন খরচ) হিসেবে মোট ১১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।
খনির নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান এবং জেনারেল ম্যানেজার (মাইন অপারেশন) সাইফুল ইসলাম প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত খনি পরিচালনা পর্ষদের ২৮৩ তম সভায় তা উপস্থাপন করেন।
গত জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে বড়পুকুরিয়া খনির কোলইয়ার্ড পুরোপুরি খালি হলে প্রায় ২৩০ কোটি টাকার এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪.৪০ টন কয়লা লুটের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
এই লুটের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা খোদ প্রধানমন্ত্রীও এই লোপাটের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন। খনিতে কয়লা ঘাটতি দেখা দেয়ার পরই বড়পুকুরিয়ার ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার মানুষ। কয়লা লুটের এই ঘটনা তদন্তে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়। দুদকের তদন্তেও কয়লা লুটের প্রমাণ মেলে।
পেট্রোবাংলার তদন্তেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়ী করে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে কয়লা লুটের সঙ্গে উঠে আসে স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও তার পরিবারের নাম। যিনি একইসঙ্গে এমপি ও মন্ত্রী পদেও রয়েছেন।
পরে ২৪ জুলাই বড়পুকুরিয়ায় খনি থেকে কয়লা গায়েবের ঘটনায় কোল মাইনিং কোম্পানির বরখাস্তকৃত এমডিসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর থানায় মামলা করা হয়। জড়িত কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ও ৪০৯ ধারায় পার্বতীপুর থানায় মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- সাময়িক বরখাস্তকৃত বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুর-উজ-জামান চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল ইসলাম, সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, সদ্য বিদায়ী কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানীয়া, ব্যবস্থাপক (এক্সপ্লোরেশন) মোশাররফ হোসেন সরকার, ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (উৎপাদন ব্যবস্থাপনা) অশোক কুমার হালদার, ব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কন্সট্রাকশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) জাহিদুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক (সেফটি ম্যানেজমেন্ট) একরামুল হক, উপব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, উপব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) মোর্শেদুজ্জামান, উপব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) হাবিবুর রহমান, উপব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) জাহেদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ্রনাথ বর্মণ, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) জোবায়ের আলী, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী এবং মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহা।
মামলায় জানানো হয়, এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা তছরুপ হয়েছে, যার মূল্য ২৩০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকি ১৫ আসামি অনেক আগে থেকেই তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সংঘটিত কয়লা চুরির ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অনুমিত হয়।
মামলার আসামিদের ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। দুদক বলছে, তদন্তে কয়লা লুটের সত্যতা উঠে এসেছে। এখন কীভাবে এই লুট হয়েছে তা বের করার জন্য দুদক কাজ করছে।
Source: শীর্ষ নিউজ