বিএনপির বৃহস্পতিবারের সম্ভাব্য জনসভায় ২০ দলের শরিক জামায়াতে ইসলামীকে কৌশলগত কারণে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। তবে জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতাদের ওই জনসভায় আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ার পথে সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে এ কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছে বিএনপি। তবে জনসভার আগে বিষয়টি জামায়াতকে বুঝিয়ে বলবে দলটি।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানায়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ জনসভার আয়োজন করতে চাইছে দলটি।
বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জনসভা করার অনুমতি পেলে যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও বাম জোট ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের অবস্থান কী হবে তা জানা যায়নি।
অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কারণে এ জনসভায় বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত ইসলামীকে আমন্ত্রণ না জানানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রয়োজনে এ কৌশলী ভূমিকা নেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝানো হবে। জামায়াত যাতে বিষয়টি নিয়ে মনোক্ষুণ্ণ না হয়- সেটিও খেয়াল রাখবে বিএনপি। অর্থাৎ যত চাপই আসুক- এ মুহূর্তে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে চাইছে না দলটি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি ও লক্ষ্যগুলো নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবারের জনসভায় এসব দাবি উপস্থাপন করা হবে। অবশ্য বৈঠকে জনসভার তারিখ পরিবর্তন করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিবর্তিত তারিখ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর হতে পারে।
বৈঠকে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পেশাজীবীদের মধ্যেও ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা করেন নেতারা। এর অংশ হিসেবে উচ্চ আদালতে বিএনপি ও সমমনা আইনজীবীদের নিয়ে সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে তোলা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
এ বিষয়টি তদারকির জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলা, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় এবং সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার নতুন মামলা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।