প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বলেছেন, খুনী, অর্থ পাচারকারী এবং সুদখোররা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে, এরা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে ফেলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরা দেশের সম্পদ লুটে খেয়েছে, এরা ক্ষমতায় গেলে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে মিলে দেশ ধ্বংস করবে। কাজেই জনগণকে তাদের সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রে তার সম্মানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী এসময় নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সরকার বিরোধী জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে তারা কিভাবে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন?
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তারা যে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তা আমরা ফিরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এখন ড. নকামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং মাহমুদুর রহমান মান্না এই দুর্নীতিবাজদেরকেই সঙ্গে নিয়েই লড়াইয়ে নেমেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন এবং বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ নতুন জোটকে সমর্থন দিয়েছেন কিন্তু অতীতে তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মইনুল হোসেন কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করেছিলেন, সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে। সাজু হোসেন বনাম রাষ্ট্র। ওই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত।
আর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে এক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি নিজের ভাইয়ের নামে দখল নেওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ অভিযুক্ত। কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের সরকারে অর্ন্তভূক্ত করেছিলেন।
রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মিডটাউনের হিলটন হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ শাখার সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বলানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বের প্রতি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, তারা ক্ষমতায় এলে দেশটি অর্থপাচারকারী এবং লুটেরাদের রাজত্বে পরিণত হবে।
র্শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে নতুন দল গঠনে ড. কামালের ব্যর্থ প্রচেষ্টার কথাও স্মরণ করেন। এছাড়া বিএনপি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্টপতির দায়িত্ব থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে এবং ‘বিএনপি কর্মীরা তাকে রেল লাইনের ওপর ধাওয়া করে।’
‘জোটের আরেক নতুন মুখ মান্না’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ডাকসু সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের সুনজরে থাকার কারনে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতকিছুর পরেও আমি চাইব তারা একটি দল গঠন করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করুক। যারা যদি জনগণের ভোট পায় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসবে,তারা যেহেতু একটি জায়গায় সমবেত হতে পেরেছে সেজন্যও আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
কিন্তু সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমাদের অপরাধটা কী? দোষটা কী? সরকার উৎখাত করতে হবে কেন? কী কারণে? কোন কাজটা করিনি দেশের জন্য?’
তিনি একইসঙ্গে বলেন, ২০১৩, ১৪,১৫ এই তিনবছরে বিএনপি-জামাতের পেট্রোল বোমা হামলায় ২৮/২৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছে। ফলে সরকার বাধ্য হয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের জঘন্য অপকর্মের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং যথনই তাদের গ্রেফতারে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হলো তখনই এই আইনী পদক্ষেপকে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যা দিতে শুরু করলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘এইগুলো কোন রাজনৈতিক মামলা নয়, উপরন্তু এগুলো হত্যা মামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার জন্য তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
দেশ ও জনগণের কল্যাণে তাঁর সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে চলেছে এর কারণ আমরা সততাকেই আমাদের অন্যতম শক্তি হিসেবে বিবেচনা করি।’
শেখ হাসিনা বলেন,‘ক্ষমতা আমার কাছে কোন ভোগের বিষয় নয়, বরং এটাকে আমি জনগণকে সেবা দেয়ার একটি সুযোগ হিসেইে বিবেচনা করি। জনগণ যদি চায় তাহলেই আমরা ক্ষমতায় থাকবো না হলে নয়।’
সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় সকলেই এখন বিভিন্ন ডিজিটাল যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেন, যেমন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাব এবং এসব প্রযুক্তির ভালো এবং খারাপ দু’টি দিকই রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করার জন্যই আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের একটি অংশ এই আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণায় নেমেছেন কিন্তু আমি পরিস্কার বলে দিতে চাই তারা এসব করছে নিজস্ব স্বার্থে, এসব ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সমাজের যে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে সেদিকে দৃষ্টিপাত করে নয়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় এ ধরণের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সময় (নিরাপদ সড়কের দাবিতে) সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচারের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করায় এবং তাঁর সরকারের প্রদত্ত লাইসেন্স গ্রহণ করে দেশে এখন বিপুল পরিমান সংবাদ পত্র এবং নিউজ চ্যানেল আত্মপ্রকাশ করেছে এবং তারা অবাধে তাদের নিজস্ব মতামত প্রচার করে যাচ্ছে।
বিগত ১০ বছরে দেশের চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান।