ব্রেকিং নিউজ
Home / বিশ্ব / সাগরে ৪৯ দিন ভেসে থাকা তরুণের গল্প

সাগরে ৪৯ দিন ভেসে থাকা তরুণের গল্প

গল্পটি নন-ফিকশন। কাল্পনিক নয়, সত্যি। ইন্দোনেশিয়ার ১৯ বছর বয়সী তরুণ আলদি নোভেল আদিলাং গভীর সাগরে ভেসে ছিলেন টানা ৪৯ দিন। খেয়েছেন সমুদ্রের নোনাপানি আর লাফিয়ে ওঠা মাছ। বিবিসি, ইনডিপেনডেন্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ঘটনার শুরু জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে। ইন্দোনেশিয়ায় গভীর সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরার প্রথাগত একটি পদ্ধতি হলো ‘রমপং’। প্রথমে কাঠ দিয়ে একটি ভেলা তৈরি করা হয়। পরে ওই ভেলার ওপর তৈরি হয় কুড়ে ঘরের মতো ছোট্ট একটি কক্ষ—যাতে দু-একজন থাকতে পারেন। রমপং পদ্ধতিতে মাছ ধরতে ব্যবহার করা হয় আলোর ফাঁদ। সাধারণত রাতে এই ফাঁদ কাজে লাগে। ঢেউয়ের তালে তালে ভেসে থাকা রমপংয়ে জ্বলে আলোর ফাঁদ। আর এতেই মাছ লাফিয়ে ওঠে ওই ভেলার ওপর। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও এই পদ্ধতিতে মাছ ধরার প্রচলন রয়েছে।বিবিসি ও ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, আলদি আদিলাং যে রমপংয়ে মাছ ধরতেন তা নোঙর করা ছিল ইন্দোনেশিয়ার সুলাওসি দ্বীপ থেকে ১২৫ কিলোমিটার ভেতরে গভীর সাগরে। কিন্তু ১৪ জুলাই প্রচণ্ড বাতাসে ওই রমপংয়ের নোঙরের দড়ি ছিঁড়ে যায়। আর এতে অজানা বিপদের মুখে পড়েন আলদি। কারণ রমপংয়ে কোনো ধরনের ইঞ্জিন বা বইঠা ব্যবহার করা হয় না। এটি অন্য কোনো নৌযান দিয়ে গভীর সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মাছ ধরার মৌসুম শেষ হলে কূলে আনা হয়। শুধু মাঝে মধ্যে রমপংয়ে থাকা ব্যক্তির খাবার পৌঁছে দিয়ে ধরা পড়া মাছ নিয়ে আসা হয়।

বিবিসি ও দ্য স্টার টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, নোঙর ছিঁড়ে যাওয়ার পর আলদির রমপং কয়েক শ কিলোমিটার পথ ঢেউয়ের তালে তালে ভাসে। অবশেষে এই রমপং পৌঁছায় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ অঞ্চল গুয়ামে। মহাসাগরের সেই উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ৩১ আগস্ট পানামার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আরপিগিও আলদিকে উদ্ধার করে। পরে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে জাপানে পৌঁছে দেওয়া হয়। ৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস আলদিকে নিজ দেশে পাঠায়।বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অজানা বিপদের মুখে পড়া আলদির এই ৪৯টি দিন কেটেছে নানা শঙ্কায়। তাঁর সঙ্গে থাকা পানি ও খাবার ফুরিয়ে যায়। কারণ তিনি যে রমপংয়ে কাজ করতেন সেখানে নিয়ম করে এক সপ্তাহের জন্য খাবার-পানি পৌঁছে দেওয়া হতো। এর ফলে তীব্র খাবার সংকটে পড়া আলদিকে সমুদ্রের নোনা পানিই পান করতে হয়েছে। আর আমিষ হিসেবে খেতেন রমপংয়ে লাফিয়ে ওঠা মাছ। কখনো মাছ ধরার জন্য তাঁকে রমপংয়ের কক্ষটির কাঠ ভেঙে হাতুড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে হতো।

ইন্দোনেশীয় কূটনীতিক ফাজার ফেরদৌস জাকার্তা পোস্টকে বলেন, ‘আলদি ভয়ে ম্রিয়মাণ থাকত, প্রায় কান্নাকাটি করত। জাহাজ দেখলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করত। কিন্তু এমভি আরপিগিওর আগে ১০ টিরও বেশি জাহাজ তাঁর ভেলার কাছ দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু তারা থামেনি বা বিষয়টি খেয়াল করেনি।’