বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কেবিন ক্রু সৈয়দা মাসুমা মুফতি। চট্টগ্রামের এই বিমানবালাকে নিয়ে ওঠেছে আলোচনার ঝড়। গত শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) লন্ডনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বিজি-০০১ ফ্লাইটের স্টুয়ার্ড হিসেবে তার যাওয়ার কথা ছিল। রেওয়াজ অনুযায়ী ভিভিআইপি ফ্লাইটে ওঠার আগে পরীক্ষাকালে (ডোপ ট্স্টে) ওই ক্রু’র শরীরে মাদক সেবনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর তাকে আর ওই ফ্লাইটে যেতে দেওয়া হয়নি।
রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) মাসুমাকে গ্রাউন্ডেড করে বিমান কর্তৃপক্ষ। ওই ফ্লাইটের চিফ পার্সার ছিলেন কাস্টমার সার্ভিসের ডিজিএম নুরুজ্জামান রঞ্জু। মাসুমার মাদকসেবনের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন তিনি। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সোমবার তাকেও গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই পাইলট ও ক্রুরা মাদক গ্রহণ করেছেন কিনা, তা নিশ্চিত করতে ডোপ টেস্ট করা হয়। গত শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন যাত্রার দিন কেবিন ক্রু মাসুমা মুফতি মাদক সেবন করেও বিষয়টি গোপন রেখে বিজি-০০১ ফ্লাইটে আসেন। পরে ডোপ টেস্টে তার মাদক সেবনের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিমানের নিয়ম অনুযায়ী ডোপ টেস্টে প্রমাণ মিললে কোনো ব্যক্তিকে পরবর্তী ৯০ দিন কোনো ডিউটি দেয়া হয় না। কিন্তু মাসুমা মুফতির ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যতিক্রম। ডোপ টেস্টে মাদক সেবনের প্রমাণ মেলার পরদিনও সিঙ্গাপুর রুটের ফ্লাইটে দায়িত্বপালন করেন তিনি।
এদিকে ডোপ টেস্টে মাসুমা মুফতির মাদক সেবনের বিষয়টি ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাননি ডিজিএম নুরুজ্জামান রঞ্জু। লন্ডনে গিয়েও তিনি অধীনস্ত সব ক্রুকে বিষয়টি গোপন রাখতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টিকে সঙ্গতকারণে স্বাভাবিকভাবে নেননি।
প্রশ্ন ওঠেছে, কে এই মাদকসেবী বিমানবালা সৈয়দা মাসুমা মুফতি? কাস্টমার সার্ভিসের ডিজিএম নুরুজ্জামান রঞ্জুর তার সম্পর্ক কি নিছক সহকর্মীর? একজন মাদকসেবী অধঃস্তন নারীকর্মীকে সুরক্ষায় তার উদ্যোগী ভূমিকা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উসকে দিচ্ছে অন্যরকম সন্দেহ।
সৈয়দা মাসুমা মুফতি দীর্ঘদিন ধরেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট স্টুয়ার্ড হিসেবে কর্মরত। আগ্রাবাদ মহিলা কলেজে থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর পরই ২০০১ সালের মে মাসে বিমানে যোগ দেন। ব্যক্তিজীবনে বিবাহিত মাসুমা এক কন্যা সন্তানের মা। তবে স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। মেয়েকে নিয়ে আলাদাভাবে থাকছেন। নিজের মতোই পশ্চিমাধাঁচের জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একাধিক কর্মী জানান, মাসুমা মুফতি নিয়মিতই মাদকসেবন করতেন। তার মদ্যপান ও মাদকসেবনের বিষয়টি সহকর্মীদের কাছে ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। বিষয়টি উর্দ্ধতনদের না জানিয়ে এতোদিন চেপে রাখার কারণ একজনই, তিনি হলেন বিমানের কাস্টমার সার্ভিসের প্রভাবশালী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান রঞ্জু।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কর্মরত অবস্থায় নুরুজ্জামান রঞ্জুর বিরুদ্ধে একাধিকবার যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। ২০১৪ সালে এক যৌন কেলেঙ্কারির পর কিছুদিনের জন্য শাস্তি হিসেবে চিফ পার্সার থেকে রঞ্জুকে ফ্লাইট পার্সার করা হয়। কিন্তু খুঁটির জোরে তিনি আবার স্বপদে বহাল হন। পরে নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে ডিজিএম হিসেবে পদোন্নতিও পান।
অভিযোগ ওঠেছে, মাদকসেবি বিমানবালা মাসুমার কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়ার বিনিময়ে নুরুজ্জামান রঞ্জু বিষয়টি এতোদিন ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ফাঁস হতে চলেছে তাদের দুজনের ব্যক্তিগত জীবনের নানা কেলেঙ্কারি।
এদিকে,বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল বলেছেন, মাদক গ্রহণকারী এবং তার তথ্য ধামাচাপার চেষ্টাকারী দু’জনকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।মঙ্গলবার দুপুরে হোটেল কন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।