আকস্মিকভাবে বিএনপি মহাসচিবের ভারত প্রেম, সুশীল সমাজের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের বৈঠক রাজনীতিতে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ভারত থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়ছে। ঐ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি, তা কোনোদিন তাঁরা ভুলতে পারবে না। কূটনীতিক পাড়ায় খবর হলো, ভারতের একটি মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐ বক্তব্যকে ভালো চোখে দেখছে না। ভারতের কূটনীতিকরা বলছেন, ’৭১ এ ভারত বাংলাদেশকে যা দিয়েছে, তা কি বাংলাদেশ ভুলতে পারবে?’ঐ বক্তব্য ছাড়াও ২০০১ এর নির্বাচনে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য ভারত খুবই ‘স্পর্শকাতর’ মনে করছে। এজন্যই কি বাংলাদেশে ভারত বিকল্প খুঁজছে? নাকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষের সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখি করছে? রাজনীতির অঙ্গনে এই প্রশ্নগুলো এখন ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ভারত আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান। সেখানে বিএনপি নেতারা বিজেপি নেতা ছাড়াও ভারতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যান ব্যাংককে। বিবিসির সঙ্গে গত রোববারের সাক্ষাৎকারে ফখরুল নিজেই স্বীকার করেছেন, ভারতে বিএনপি লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছেন। একাধিক সূত্র বলছে, ব্যাংককে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ না দেওয়াসহ ৫ টি অঙ্গীকার করেছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। একটি সূত্র বলছে, এই পাঁচ অঙ্গীকারে সন্তুষ্ট হয়নি ভারত। তারা তারেক জিয়াকে দলের নিষ্ক্রিয় করা এবং জামাতকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত চেয়েছেন। কিন্তু, এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি ফখরুল। তিনি এজন্যই লন্ডনে গেছেন।
কূটনীতিক সূত্রের খবর হলো, শুধু বিএনপি নয়, গত দুই সপ্তাহে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস এবং মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা একাধিক রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও দুজন সম্পাদক এবং কয়েকজন সিভিল সোসাইটির ব্যক্তির সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে।
একটি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগকে ভারত ব্লাঙ্ক চেক দিয়েছে, এই ধারণাটি তাঁরা পাল্টাতে চায়। তাছাড়া, আওয়ামী লীগ ভেবেই নিয়েছে তাদের কোনো বিকল্প ভারতের কাছে নেই, এই ধারণাটিও ভ্রান্ত প্রমাণ করতে তারা তৎপর। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করে জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার উত্থান এবং বিশ্বব্যাপী তাঁর সুনাম ভারতের একটি অংশের পছন্দ নয়।
বাংলাদেশে ভারত একজন বিশ্বনেতার আবির্ভাব দেখতে চায় না। কেউ কেউ এমনও বলছে, ভারত কোনো প্রতিবেশীর বিস্ময়কর উত্থান ও সাফল্য পছন্দ করে না। এজন্যই বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনীতি আর শক্তিশালী সরকার তাঁদের অনেকের পছন্দ নয়। তবে, এর বিপরীতে চিন্তাও আছে, কারও কারও ধারণা, ভারত এসব কিছুই করছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে।
Source: বাংলা ইনসাইডার