১৪ মার্চ ২০১৬: হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব এক ব্রিটিশ কম্পানিকে দেওয়া হচ্ছে। সোমবার সচিবালয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেকের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০ মার্চের মধ্যে ব্রিটিশ এক কম্পানিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। নিরাপত্তাজনিত ঘাটতির কারণ দেখিয়ে গত ৮ মার্চ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো (বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য) পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখার কথা জানায় তারা। এ সময়ে যুক্তরাজ্য দেখতে চায় নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার আরও নতুন কী কী উদ্যোগ নেয়। গত অক্টোবর মাসে মিসরের শারম আল শেখে রাশিয়ার একটি বিমান বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ২০টি দেশের ৩৮ বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলে। শাহজালাল বিমানবন্দর তার একটি। এই ৩৮টি বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে সরাসরি বিমান যোগাযোগ রয়েছে।
রোববার বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন নিরাপত্তায় অন্যথা হলে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। ওই বৈঠকে উপস্থিত এক সূত্র বলেছেন, রোববারই সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এমন আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতিমধ্যে নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি কার্গো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের পরিবহন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য তার নীতির পরিবর্তন করে নি বলে জানিয়েছেন এক কূটনৈতিক সূত্র। তিনি বলেছেন, নিকট ভবিষ্যতে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।
সূত্র বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ঢাকায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বৃটিশ সরকারের এ দলটি। তারা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। এ নিরাপত্তা যাতে ৩১ মার্চের মধ্যে নিশ্চিত করা হয় এ বিষয়েও তারা দৃঢ় অবস্থানে। সভায় উপস্থিত এক সূত্র বলেছেন, ৩১শে মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক এমনটাই চায় যুক্তরাজ্য সরকারের এ টিমটি। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি যে কার্গো যায় তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সহসা তোলার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে কি যাত্রীবাহী সরাসরি ফ্লাইটেও যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দেবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এক কর্মকর্তা বলেন, এটা যে হবে না এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। উল্লেখ্য, রোববার থেকেই যুক্তরাজ্যের চাহিদামতো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত যুক্তরাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ দলের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেছে। এর মাধ্যমে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে। এ কমিটি আগামী ২০শে মার্চ পর্যালোচনামুলক বৈঠকে বসবে। রোববারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের সাত সদস্যের দলের নেতৃত্ব দেন ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেক।