৩ মার্চ, ২০১৬: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার ঘটে গেল এক বিরল ঘটনা। নিষ্পাপ শিশুরা যখন নির্মমভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে, মায়ের বিরুদ্ধে উঠছে সন্তান খুনের অভিযোগ, মানবিকতার সেই সংকটময় মুহূর্তে গাছে আটকা পড়া একটি বিড়ালকে উদ্ধারে যন্ত্রপাতিসহ এগিয়ে এলো ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
কুকুরের তাড়া খেয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছে উঠে আটকে যাওয়া বিড়ালকে তিনদিন পর উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের অত্যাধুনিক যন্ত্রের সহায়তায় বৃহস্পতিবার বিড়ালটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা ঘটেছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। চার নম্বর ভবনের কয়েকজন গাড়িচালক জানান, তিন দিন আগে কুকুরের তাড়া খেয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছে উঠেছিল বিড়ালটি। গাছটি সচিবালয়ে চার নম্বর ভবনের সামনে পশ্চিম প্রান্তে। এ গাছটির তলায়ই বৃহস্পতিবার হয়ে গেল মানবিক সংকটের এ দুর্দিনে মানবিকতার দুর্লভ মঞ্চায়ন।
বিড়াল উদ্ধারের সময় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনের পশ্চিম প্রান্তে শত শত মানুষের ভিড় জমে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্র্রধান কার্যালয় থেকে অত্যাধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম নিয়ে আট সদস্যের দল এসেছেন। বিশাল স্কাই লিফট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিড়ালটিকে গাছ থেকে নামিয়ে আনেন। প্রায় ৩০ মিনিটের বিড়াল উদ্ধার শেষে ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেকটর জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কাই লিফটের সাহায্যে আমরা বিড়ালটিকে উদ্ধার করেছি। এটি মাটি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতায় গাছে ছিল। এ লিফটের মাধ্যমে আমার সতেরো তলার সমান উচ্চতায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে পারি।’ বিড়াল উদ্ধারে আট সদস্যবিশিষ্ট একটি দল এসেছেন জানিয়ে জহিরুল বলেন, ‘প্রত্যেকটি জীবন আমাদের কাছে মূল্যবান। বিড়ালের কথা শুনেই আমরা এসেছি। এর আগেও আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে চিল উদ্ধার করেছি।’
যার মানবিক স্পর্শে এ ঘটনার জন্ম হলো- তিনি হলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর গাড়িচালক মো. আজগর আলী। বিড়ালটি উদ্ধারের পর তার চোখে মুখে যেন আনন্দ ঠিকরে পড়ছিল। চার নম্বর ভবনের পেছনের ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে তিনি বিড়ালটির খাবারের ব্যবস্থা করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও খবর দিয়ে এনেছেন তিনি। আবেগী গলায় আজগর বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। একটা জীবন বাঁচল।’ ‘কুকুরের ধাওয়া খেয়ে বিড়ালটি তিন দিন আগে এ গাছটায় উঠেছে। আর নামতে পারছে না। আমার খারাপ লাগছিল। কয়েকটি ছেলেকে বললাম একটু নামাইয়া দেও বিড়ালটাকে। কেউ দিল না। বিড়ালটা না খেয়ে আছে তিন দিন,’ বলেন আজগর। তিনি আরও বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে সচিবালয়ের ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবুল হোসেনকে (ফায়ার সার্ভিসের সচিবালয় ইউনিটের ইনচার্জ) বললাম। তিনি খবর দিয়ে এদের এনেছেন।’