ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / ২ সন্তান হত্যা : মায়ের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

২ সন্তান হত্যা : মায়ের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

০৩ মার্চ, ২০১৬: রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় মাকে আসামি করে মামলা করেছেন বাবা আমানউল্লাহ। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি বাদী হয়ে রামপুরা থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন বলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মামলায় শিশুদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।’
এর আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে করে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত খবর জানিয়েছে র‌্যাব। তখন র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরকীয়ার জেরে নয়, সন্তানদের পড়াশোনার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে মা মাহফুজা মালেকই দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন।
উত্তরায় র‌্যাবের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান দুশ্চিন্তা থেকে তার মা সন্তানদের হত্যা করেছেন বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান।
দুপুর সোয়া ১টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘মা মাহফুজা মালেক ম্যানজেমেন্টে মাস্টার্স করেছেন। এ ছাড়া তিনি দুই বছর একটি কলেজে শিক্ষাকতাও করেন। তিনি উচ্চ শিক্ষিত হওয়ায় ছেলে মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন। এরই প্রেক্ষাপটে গত ২৯ তারিখ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাদের গৃহশিক্ষক চলে যাওয়ার পর নিজের বেডরুমে দু সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মাহফুজা।
মুফতি মাহমুদ জানান, ‘মায়ের বেডরুমে ছেলে আলভি আগে থেকেই ঘুমানো ছিল। পরে মা মেয়ে অরণিকে ডেকে নেন তার রুমে। এরপর মেয়ের গলায় থাকা মায়ের উড়না দিয়ে প্রথমে গলায় উড়না প্যাঁচিয়ে মেয়েকে হত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। পরে মেয়েকে শ্বাসরোধ করে মারতে সমর্থ হয় মা। এরপর ছেলে আলিকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ করে মারা হয়।’
র‌্যাব জানায়, এর পর মাহফুজা স্বামী আমানউল্লাহ মালেককে সন্তানদের অসুস্থতার কথা বলে বাসায় আনেন। আমানউল্লাহ এসে সন্তানদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করে। বিরাণি খেয়ে বিষক্রিয়ায় সন্তানদের মৃত্যুর ঘটনা পুরোটাই মা মাহফুজার বানানো।
মুফতি মাহমুদ জানান, এ বিষয়ে এখন মামলার প্রস্তুতি চলছে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে আরো বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
গত সোমবার বিকেলে বনশ্রীর ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসায় দুই ভাই-বোন সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান অরণি (১৪) ও হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী আলভি আমানের (৬) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
জামালপুরের পারিবারিক গোরস্থানে দুই শিশুকে দাফনের পর বুধবার দুপুরে মা মাহফুজা এবং বাবা আমান উল্লাহ মালেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আনা হয়।
মঙ্গলবার রাতে দুই শিশুর দাফন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবা আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমরা পালাইনি, ভয় পেয়েছিলাম। ঢামেক কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমরা ভয় পেয়ে যাই। তখন ময়নাতদন্তের বিষয়টি আমার স্ত্রী (মাহফুজা মালেক) সহ্য করতে পারবে না বলে তাকে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসি। সেখানে আমাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলাম। পরে স্ত্রীর ফোন পেয়ে বাসায় এসে দেখি অরণি-আলভি গুরুতর অসুস্থ। আমি তাৎক্ষণিকভাবে প্রথমে আল রাজি হাসপাতালে ও সেখান থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’
এদিকে রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে দুই ভাই-বোন নিহতের ঘটনায় একজন গৃহশিক্ষিকা, বাড়ির দারোয়ান ও নিহতদের এক স্বজনসহ মোট ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে এবং সোমবার রাতে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- অরণি ও আলভির গৃহশিক্ষিকা শিউলি, ওই বাসার দারোয়ান পিন্টু এবং নিহতের এক স্বজন।
এর আগে যে রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে দুই ভাই-বোন মারা গেছে বলে পরিবার থেকে বলা হয়েছিল, সে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ও প্রধান বাবুর্চিসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- ম্যানেজার মাসুদ রহমান, প্রধান বাবুর্চি আসাদুজ্জামান রনি ও তার সহযোগী আতাউর রহমান।