ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫৯ বাংলাদেশিকে বহিষ্কার করা হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫৯ বাংলাদেশিকে বহিষ্কার করা হচ্ছে

৩ মার্চ, ২০১৬: দালালকে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করে বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনীভাবে প্রবেশের সময় আটক ১৫৯ ‘বাংলাদেশিকে’ বহিষ্কারের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়। অপরদিকে, গত এক বছরে কমপক্ষে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা ২০ ব্লগার-লেখক-প্রকাশক যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। তারাও ধর্মীয় জঙ্গিদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে এসাইলামের (আশ্রয়) আবেদনে উল্লেখ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, নিউইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, মেট্র ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন এসব ব্লগাররা। নিউইয়র্কে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’য় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক মুক্ত আলোচনার প্যানেলিস্ট প্রবাসের শক্তিমান কবি ও লেখক ফকির ইলিয়াস তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বছর পেরিয়ে গেলেও তার ঘাতকেরা গ্রেফতার হয়নি। এর ফলে অন্য ব্লগার-লেখকরা নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। গত ৮ মাসে এমন ৮ জনের সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটেছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রদানের জন্যে স্টেট ডিপার্টমেন্টে ‘ইউএস কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ এর পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যারাই ব্লগার-প্রকাশক বলে প্রতিয়মান হবে তাদের এসাইলাম মঞ্জুরিতে কোন বিলম্ব ঘটবে না বলে মনে করছেন ইমিগ্রেশন বিষয়ক এটর্নীরা।  এদিকে, মেক্সিকো হয়ে যে সব বাংলাদেশিযুক্তরাষ্ট্রে ঢুকার সময় সীমান্ত রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েছে তার মধ্যে ১৬৯ জনকে খুব দ্রুত বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে চায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। কারণ, এদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য হয়নি যে, জীবন বিপন্ন হওয়ায় তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, ‘বিএনপির কর্মী হিসেবে তারা দাবি করলেও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে কিংবা তাদেরকে মেরে ফেলার জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের লোকজন পিছু নিয়েছিল-এমন প্রমাণাদি উপস্থাপনে সক্ষম হয়নি। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এটি অনুমিত হয়েছে যে, তারা নিজ দেশে স্বস্তিতে ছিলেন না।  ইমিগ্রেশন বিভাগ তথা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট সূত্রে আরও বলা হয়েছে যে, এদের কাছে পাসপোর্ট ছিল না। এজন্যে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কাছে এসব ব্যক্তিদের জাতীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে  ট্র্যাভেল ডক্যুমেন্ট চাওয়া হয়েছে। এরপর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস তাদের জাতীয়তা সম্পর্কে খোঁজ নিতে বাংলাদেশ সরকারকেও অনুরোধ করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুরির সমর্থনে যে ধরনের জোরালো যুক্তি এবং ডক্যুমেন্ট থাকা প্রয়োজন, তা কারো কাছেই নেই। তারা সেগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে, গত বছরের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের  হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মক্কেলদের রক্ষায় অ্যাটর্নীরা আদালতে বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। নিউইয়র্কের প্রখ্যাত ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নী অশোক কর্মকার তার এক মক্কেলের জন্য আইনী লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন এবং সেই ডক্যুমেন্ট অনেকের সহায়ক হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন যথাযথভাবে নথিভুক্ত হবার আগেই যদি বাংলাদেশ সরকার এদের ট্র্যাভেল ডক্যুমেন্ট ইস্যু করে তাহলে ডিপোর্টেশন ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে অ্যাটর্নীরা মন্তব্য করেছেন।  জাতীয়তা যাচাইয়ের জন্য ১৬৯ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা উইং। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পাঠানো তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আটককৃতদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। সবার নামের পাশাপাশি জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। কারও আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য ট্রাভেল ডকুমেন্টের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। এ তালিকায় আছেন- মামুন আলম, সোহেল আহামদ, মিজানুর রহমান, সাব্বির আহম্মদ, মইনুল ইসলাম, মো. মাহমুদুল জিলানী, আহমদ রুমন, কামাল হোসেন, মো. অহিদুর রহমান, মোহাম্মদ সোহেল, আকতার হোসেন, মাহমুদুল হাসান, নাজমুল আহসান, আবদুুর রহমান, ফকরুল ইসলাম, অসীম চন্দ্র দাস, নাসির উদ্দিন ও ইমন বড়ুয়া। এছাড়া আরও আছেন- আহমদ শেখ সিব্বির, আমিনুর ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, আবুল হোসেন, হারুন মিয়া, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, হৃদয় হোসেন, জাহেদ হোসেন, মোহাম্মদ উদ্দিন, সোহরাব হোসেন, আশরাফ হোসেন, মো. জাকারিয়া, রাসেল আহম্মেদ, আবদুস সামাদ, মনির হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, মো. আমানউল্লাহ, শিব্বির আহমদ, রিপন সরদার, মোহাম্মদ মনির হোসেন, খালেদ মিয়া, হাফিজুর রহমান, মহসীন হোসেন, সাজু আলী, মোহাম্মদ রাসেল, আমাদুর রশীদ বাবু, আবু জাফর, আবদুুল আসাদ, মোহাম্মদ আসলাম, মোজাম্মেল হোসেন, মো. আলী নাসের, রায়হান, মতিউর রহমান, আবদুল হালিম, দেলোয়ার হোসেন, আকরাম হোসেন, নাভিদ আজম, ফিরোজ আলম, মোহাম্মদ সোহাগ হোসেন, বিবেক কান্তি দাস, মোহাম্মদ মইনুল হক, আশফাক চয়ন, ইসতাক আহমদ, জুম্মার হোসেন, মো. মহসীন, গাজী কবির, মো. শীপন আহম্মেদ চৌধুরী, বশির বাবু, জামাল মোল্লা, আলী আসগর, শওকত হোসেন, মনিরুল মুন্না, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ ইসলাম, মো. ইসলাম, রাসেল আহম্মদ, ইকবাল মুক্তার, শিহাব আহম্মেদ, লাবু খান, নাঈম সরকার, আনোয়ার রানা, নাসিম আহমেদ, মোহাম্মদ মিলন ভূঁইয়া, মোহাম্মদ ইসলাম, আবু ভূঁইয়া, তারেক আহম্মদ, মামুনর রশীদ, অহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেন, আবদুর রউফ, মারুফ আহমদ, শহীদ উল্লাহ দুলাল, খালেদুর রহমান, আবুল হাসান, আকাব উদ্দিন, রাজীব মিয়া, আনোয়ার হোসেন, সাবুল হোসেন, ক্লিনটন নাথ, গোলাম মেসবাহউদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান, মো. মাহফুজুর রহমান, ডালিম আহমদ, আবু সাঈদ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মাসুম উদ্দিন, কামাল হোসেন, আশিকুল রাসেল, সালমান হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান, সোহরাব হোসেন, মোহাম্মদ তাজেল, আকরাম হোসেন আবেদ ও শাকিল প্রভাগী। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এদের মধ্যে সিলেট, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের অধিবাসীই বেশী।