১ মার্চ ২০১৬: বাংলাদেশ থেকে গত এক বছরে একশোরও বেশি নারী সিরিয়ায় পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে। সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে পাচার হওয়া নারীদের কয়েকজন দেশে ফিরে এসে নানা ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পাচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযানে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সিরিয়ার মতো জায়গায় যেখানে যুদ্ধ চলছে সেখানে কিছু নারী পাচার হয়ে গেছেন সেটি প্রথম নজরে আসতে শুরু করে কিছুদিন আগে যখন কয়েকজন নারী পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তারা র্যাবের কাছে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন । তখন বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে র্যাব ৪৫ জনের নাম জানতে পারে। এখন র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, পাচার হয়ত খানিকটা কমেছে তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি।
বাংলাদেশে থেকে কিভাবে পাচার হচ্ছে নারী?
এপর্যন্ত সব মিলিয়ে একশোরও বেশি নারী সিরিয়ায় পাচার হয়েছে বলে র্যাব অনুমান করছে। তবে এসব নারীরা কোনোভাবে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর দখলে থাকা এলাকায় গিয়ে পড়েছেন কিনা সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, অন্তত তিনজন নারী দেশে ফিরে এসে নানা ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ পাওয়ার পর র্যাব বাংলাদেশে যে তদন্ত করছে তাতে জানা গেছে যে এসব নারীরা আসলে কাজের জন্য জর্দান এবং লেবাননে যাচ্ছিলেন। তাদের কাগজপত্র বৈধই ছিল। কিন্তু দুবাইতে কানেকটিং ফ্লাইটে ওঠার আগে প্লেনের টিকেটে তাদের গন্তব্য বদলে দেয় পাচারকারীরা। এসব নারীরা বুঝতেও পারেননি যে তারা সিরিয়াতে গিয়ে নামবেন। এই চক্রের মধ্যে বাংলাদেশের একজন এবং জর্দানে বসবাসরত এক বাংলাদেশি জড়িত ছিল বলে জানায় র্যাব। দুবাইয়ে বিমানবন্দরে টিকেট বদলানোর কাজ করার জন্য তাদের কারো সাথে যোগাযোগ ছিল। ঢাকায় বৈধ কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির সহযোগিতাও তারা নিয়েছে।
দেশে ফেরত আনা কঠিন এসব নারীকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এখন রয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর। সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা খুব বেশি এগুতে পারেন নি কারণ সিরিয়াতে ব্যাপক যুদ্ধের জন্য তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া কঠিন। সেখানে কোন বাংলাদেশি দূতাবাস নেই। একটি কনসুলেট ছিল সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব পাসপোর্ট নম্বর পাওয়া গেছে তাতে দেওয়া জরুরি টেলিফোন নম্বরগুলো কাজ করছে না। এছাড়া পুরো বিষয়টি আসলে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেখানেও কাজের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। তবে এটিও বলা হচ্ছে যে এখানে একের অধিক চক্র কাজ করছে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা