০১ মার্চ ২০১৬:জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের রাজনৈতিক চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন তাঁরই দলের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (এরশাদ) আমাকে তাঁর অতি প্রিয় পুত্র এরিকের লিগ্যাল গার্ডিয়ান করেছেন। এরিকের ভবিষ্যতের জন্য আমার নামেই কয়েকটি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন। আবার তিনিই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনসভায় নানা অসত্য বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনিই (এরশাদ) আমাদের ডেকে নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যেতে বলেছেন। আবার তিনিই সংবাদ সম্মেলন ডেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার কথা বলেছেন। ১/১১-এর সরকার ও মঈন উ আহমেদের সঙ্গে তিনিই সমঝোতা করে আমাকে দলের অ্যাক্টিং (ভারপ্রাপ্ত ) চেয়ারম্যান করেছেন। আবার তিনিই আমাকে ১/১১-এর কুশীলব হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তিনিই (এরশাদ) মন্ত্রী করার জন্য আমাদের তিনজনের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছেন। আবার পরক্ষণে তিনিই (এরশাদ) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের মন্ত্রী না করার জন্য অনুরোধ করে এসেছেন।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এভাবে ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এরশাদের রাজনৈতিক জীবনের কথা ও কাজের অমিলগুলো একে একে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তাঁরই এক সময়ের একান্ত অনুচর আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরশাদ কয়েকদিন ধরে ১/১১-এর সরকারের কুশীলব হিসেবে তাঁর কথা বলে আসছেন। এর জবাব দিতেই তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এরশাদ সাহেবের অধীনে সাত বছর মন্ত্রী ছিলাম। ১৯৯০ সালে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগের আগ-মুহূর্তে একটি কক্ষে আমি আর তিনি ছিলাম। ওই সময় কক্ষে তিনি কাউকে ঢুকতে দেননি। রেডিও এবং টিভিতে এরশাদের পদত্যাগের ঘোষণাটি আমারই লেখা। আমি তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছুই বলতে পারি। কিন্তু এটা আমার রুচিতে বাধে। আমার মধ্যে একটা রুচিবোধ কাজ করে- এ জন্য আমি তাঁর বিষয়ে অতকিছু বলতে পারব না।’
১/১১-এর সরকারের সঙ্গে এরশাদের সংশ্লিষ্টতার বিবরণ দিয়ে আনিসুল বলেন, ‘এরশাদ সাহেব এখন আমাকে ওই সরকারের কুশীলব বলছেন। আবার তিনিই একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন- আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক। আমি নাকি তাঁর খুব প্রিয়। আমি তাঁর পুত্রের লিগ্যাল গার্ডিয়ান। পত্রিকায় নাকি তাঁর বক্তব্য বিকৃত করে ছেপেছে। কিন্তু আমি তো টেলিভিশনে তাঁর বক্তব্য শুনেছি। তিনি (এরশাদ) আমাকে জড়িয়ে কী বলেছেন।’
১/১১-এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আনিসুল বলেন, “ব্রিগেডিয়ার বারী এরশাদের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ২০ হাজার ডলার ও একটি টিকেট দিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার আলটিমেটাম দেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি (এরশাদ) আমাদের ডেকে বলেন, ‘এখন ডিসেম্বর মাস। ওই সব দেশে প্রচণ্ড শীত। আমি এখন বিদেশে গেলে বাঁচবে না। তোমরা দেখে কী করা যায়।’ ওই দিনই তিনি জিয়াউদ্দিন বাবলুর বাসায় আত্মগোপনে চলে যান। এটা আমরা দু-একজন ছাড়া আর কেউ জানত না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এরশাদই ১/১১-এর সরকার ও মঈন উ আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা করে গ্রেপ্তার এড়িয়েছেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর এরশাদকে আর গ্রেপ্তার করা হয়নি। এরশাদ বাঁচার জন্য নিজেই আমাকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেন। প্রথমে তাঁর ছোট ভাই জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করতে চেয়েছিলেন।’
জি এম কাদেরকে দায়িত্ব না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘জি এম কাদের তখন মঈন উ আহমেদের সঙ্গে বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। মঈন উ আহমেদ রাজনৈতিক দল গঠন করলে জি এম কাদেরকে হয়তো ওই দলে রাখা হতো এবং পরবর্তী সময়ে ওই দল থেকেই তিনি হয়তো মন্ত্রী হতেন। এ জন্য তাঁকে আর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্পর্কে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এরশাদের নির্দেশেই আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তিনিই আমাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বলে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন।’
গত শনিবার গাজীপুরের শহীদ বঙ্গতাজ মিলনায়তনে মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘হাসিনা-খালেদাকে কেউ সরায়নি। আমাকে সরানো হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে আমার দলের লোক ষড়যন্ত্র করেছিল। আমি মাইনাস থ্রির বলি। ১/১১-এর কুশীলবদের বিচারের ব্যাপারে বিএনপি-আওয়ামী লীগ এক। মাইনাস টু-এর ব্যাপারে বিএনপি-আওয়ামী লীগ এক। এখানে মাইনাস থ্রি করা হয়েছিল— এ কথা কেউ বলে না। সে সময় আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান থাকতে পারিনি। পার্টির কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। ষড়যন্ত্র করে আমাকে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছিল।’