মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহম্মাদ মুজাহিদসহ মোট চার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হলো। আপিলে আরও আটটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে জামায়াতের তিনজন, জাতীয় পার্টির একজন ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এক নেতা রয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া দু’জন এখনও আপিল করেননি।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদ ও সাকার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ দু’জনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা (২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর) ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের (২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল)। আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। কারাগারে মারা গেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর)। আর আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল আলীম (২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট)। এ দুই জনের মামলা আপিলে বিচারাধীনকালে তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আরেক আসামী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও একেএম ইউসূফ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।
এ ছাড়া পলাতক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান, রাজাকার হাসান আলীকে ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে ট্রাইব্যুনাল থেকে শেষে হওয়া আরও আটটি মামলা। এরমধ্যে রয়েছে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), সাবেক জাপা নেতা সৈয়দ মো. কায়সার (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), বহিষ্কৃত আ.লীগ নেতা মোবারক হোসেন (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জাপার সাবেক সাংসদ আবদুল জব্বার (ট্রাইব্যুনালের রায় আমৃত্যু কারাদণ্ড) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), রাজাকার কমাণ্ডার ফোরকান আলী (ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসি), বাগেরহাটের সিরাজ মাস্টার (ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসি)। এরমধ্যে মতিউর রহমান নিজামীর আপিল শুনানি শুরু হয়েছে।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২২ মার্চ।
দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ২১টির রায় দিয়েছেন, যেগুলোতে ২৪ যুদ্ধাপরাধীর সাজা ঘোষিত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জনের ফাঁসির রায় কার্যকরও হয়েছে। একটি মামলায় অভিযুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।