মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তা অস্বীকার করেছেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু রোববার সরকারের একাধিক মন্ত্রী এ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রাখেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই তবে বিষয়টি ‘সিক্রেট’। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়েছে এবং তা দেখতে চাইলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রয়োজন।
বিভিন্ন সময়ে ব্যঙ্গাত্মক কথায় নানাভাবে আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন এই দুই নেতা। শেষ মুর্হুতেও প্রাণভিক্ষা চাওয়া না চাওয়ার বিষয়ে তাদের স্বজনরা সরাসরি এ প্রশ্ন তোলেন। দুজনেই অস্বীকার করেছেন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে।
যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের এই দুই নেতা তাদের মানবতা বিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সরকারের এই দাবি প্রত্যাখান করেছে তাদের দল ও পরিবার।
জামায়াত নেতা মুজাহিদ প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতি কাছে আবেদন করেছেন এই সংবাদের পর জামায়াতের পক্ষ থেকে এটাকে ভিত্তিহীন বলে তা প্রত্যাখান করা হয়। একই সঙ্গে মুজাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা নাকচ করে দেয়। জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা শেষ দেখা করার পর ফাঁসি কার্যকর হবার পর এ বিষয়ে তার ছোট ছেলে মাবরুর বলেন, এ বিষয়ে তার পিতা বলেছেন, এ জালিম সরকারের কাছে আমার প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই সরকার গত ৫ বছর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মিথ্যা মামলা দিয়ে মিথ্যাচার করেছে। আজ এই শেষ মুহূর্তে এসেও তারা মিথ্যাচার অব্যাহত রেখেছে। মূলত আমাকে আমার দলের কাছে, আমার পরিবারের কাছে, দেশের মানুষের কাছে হেয় করার জন্য কাপুরষ বানানোর জন্য তারা এ মিথ্য অপপ্রচারের নাটক করেছে।
ফাঁসির আগেও শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে কারাগারে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে তার ছেলে আলী আহমদ মাবরুর সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আমার বাবার প্রাণভিক্ষার কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। বাবা আমাদের বলেছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাননি। উনার সম্পর্কে প্রশাসন মিথ্যাচার করেছে। তিনি বলেন, তিনি কোনো মার্সি পিটিশন করেননি। দেশের কাছে, দলের কাছে, পরিবারের কাছে হেয় করা ও কাপুরুষ বানানোর জন্য এই মিথ্যাচারের নাটক তৈরি করা হয়েছে।
অপর দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার গত শনিবার রাতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, তার বাবা বলেছেন, এসব (প্রাণভিক্ষা) বাজে কথা, কে বলেছে? এ সরকারের সময় কত কাগজ বের হবে। তিনি বলেন, এ সরকার আমার বাবাকে নির্বাচনে হারাতে পারবে না জেনে কিছুক্ষণের মধ্যে তার জান নিয়ে নেবে।
এরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে শনিবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন দলের পক্ষে এক বিবৃতিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রাণভিক্ষা চাননি। তার পরিবার বিএনপিকে অবহিত করেছেন এ মর্মে একটি বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চলছে, যা আদৌ সত্য নয়।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রাণভিক্ষা নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়া না চাওয়ার বিষয়টি এখন আর অতটা প্রাসঙ্গিক নয় কারণ রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দিয়েছেন এবং তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারটি তাদের স্বজনরা দ-াদেশ প্রাপ্তদের বরাত দিয়ে অস্বীকার করা হলেও সরকারের তরফ থেকে এটা একাধিকবার বলা হচ্ছে কারণ তাদের কাছে মার্সিপিটিশনটি রয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধ স্বীকার করে নেয়ার মধ্যে দিয়ে মানবতাবিরোধী বিচার নিয়ে যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্ক রয়েছে তার অবসান হবে এবং যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতকে আগামি মার্চের মধ্যে নিষিদ্ধ করার যে আগামি আভাস সরকারি দলের নেতারা দিয়ে রেখেছেন তাও কার্যকর করা সহজ হবে। তবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আদালতের বিবেচনাধীন থাকলেও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে বিচার ও দলটি নিষিদ্ধ করার কাজটি সহজ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। এক সাক্ষাতকারে অধ্যাপক কামাল বলেন, তারা নতজানু হয়েই নিজেদের দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছে।