ফারহানা কামাল বারী: নার্সারী থেকে ফিরতেই রোজই আমার শিশু পুত্র চকলেট না নিয়ে বাড়ি ঢুকতে চায় না ! আমাদের ছোট খাটো নীড়টির অবস্থান বেশ নিরিবিলি আবাসিক এলাকায় ! তাই স্বাভাবিক ভাবেই আসে পাশে দোকান, বাজার বলতে যা বুঝি তা নেই ! আমাদের রোড এর সাথে ছোট একটা দোকান আছে, খুব সামান্য বা প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে চালিত আমাদেরই এক প্রতিবেশীর, মোটামোটি মানের জিনিস যা কিনা বেশ চড়া দামে বিক্রি হয় ! তাই আমরা নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া দোকানটিতে উঁকি দিতে চাই না ! কিন্তু আমার সোনামনি প্রতিদিনই গাড়ি থেকে নেমে ওই দোকানে যাওয়া চাই আর তার খুবই প্রিয় একটি চকলেট হাতে নিয়ে বাড়িতে ঢোকা চাই !
আশি পেনি মূল্যের এই চকলেটটি কি যে জাদু করেছে আমার শিশু পুত্রকে তা বলতে পারছি না ! প্রতিদিন চকলেট খেলে দাঁত নষ্ট হবে আর তার অভ্যাস খারাপ হচ্ছে মনে করে মাঝ খানে আমি দু’এক দিন তাকে চকলেট না দিয়ে বাসায় চলে আসি ! চকলেট না পেয়ে বাসায় ফিরে ছেলেটা প্রচন্ড ভাবে কাঁদে ! মা হিসেবে এটা স্বাভাবিক ভাবেই ভালো লাগবার কথা নয় ! ছেলেটাকে শিক্ষা এবং বোঝাবার চেষ্টা করছিলাম !
এইভাবে দুই-তিন দিন পর ছেলেটি আবার একদিন ‘মা, কিন্ডা চকলেট খাব, চলো চলো !’ এমন হাসি দিয়ে আবদার করে বলল, যে না করব কি উল্টো তাড়াতাড়ি দোকানে গিয়ে কিনে দিলাম ! সঙ্গে নতুন আরেকটি কিনে দিতে চাইলাম কিন্তু সে ‘নো’ বলে তার পছন্দের ঐটি ছাড়া আর কিছু নিতে রাজি হলো না ! মাশাল্লাহ ছেলেটার সেদিন এর সেই আচরণে মুগ্ধ মনে ঠিক করলাম ইনশাল্লাহ আর কোনো দিন তাকে নার্সারী থেকে ফেরার পথে আশি পেনি মূল্যের এই আনন্দকে নষ্ট করব না ! যদিও এই আনন্দটা খুব বেশি দিনের নয় (শিশু বয়সের) আর হতে পারে তা আশি / নব্বই টাকা মূল্যের কিন্তু তার কাছে যে আজ এই আনন্দটা বিশাল, এবং পরিমাপের অযোগ্য ! শিশুদের যে কোথায় কখন কোন কাজে আনন্দ মেলে তা বোঝা ভার !
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমার ছোট বেলার কিছু স্মৃতিচারণ না করে পারছি না ! আমি তখন তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী ! কেবল বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হয়েছে ! সারা বাংলাদেশ কেন সারা বিশ্বই তখন মারাদোনা ক্রেজে বিমোহিত ! ওই বয়সে আমিও টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কিংবা আব্বা-আম্মার কাছে অতিরিক্ত পয়সা চেয়ে নিতাম ! আজ হয়ত মারাদোনা কলম, কাল হয়ত মারাদোনা পেন্সিল, পরশু হয়ত মারাদোনা খাতা, নতুবা শার্পনার, ইরেজার আরো কত কি ! এগুলো হয়ত লেখাপড়ায় খুব ভালো ফলাফল না এনে দিতে পারলেও অফুরন্ত আনন্দ দিত এটা নির্দিধায় বলতে পারি ! কার কটা আইটেম হলো তা নিয়ে আবার বান্ধবীদের মাঝেও ছোট খাটো প্রতিযোগিতা ! কে কত বেশি অন্যদের এসব দেখাতে পারি !
এমনি করে আমরা স্কুল জীবনে আব্বা-আম্মার দেয়া চার আনা, আঁট আনা, কিংবা এক টাকা মূল্যের পকেট মানি দিয়ে জীবনে কত আনন্দই না কিনেছি ! হয়ত স্কুল এর গেট এ দাড়িয়ে থাকা আঁচার ওয়ালা, সিঙ্গারা, পুরি, চকলেট কিনে বান্ধবীদের সাথে ভাগ করে খাওয়া, নতুবা বাসায় ফিরে ভাই-বোনদের সাথে খাওয়া !
সত্যিই শিশু বয়সের আনন্দ বড় আনন্দ ! যেই আনন্দ আজ হয়ত হাজার কিংবা লক্ষ্য টাকায় কিনে পাওয়া যায় না ! একজন মা হিসেবে আজ এই আনন্দ গুলো দেখতে পাই আমার সন্তানদের মাঝে ! ওদের চোখে, ওদের মুখে, ওদের ভাষায়, ওদের চাওয়ায়, ওদের অভিমানে, ওদের অনুরাগে এবং ওদের ভালবাসায় ! আজ যে আমার এবং আমার মত প্রতিটি পিতামাতার জন্য সেই সময়, সন্তানদের গ্রহণযোগ্য সকল চাওয়া আর আনন্দ পূরণ করবার সময় এবং আমি জানি সকল বাবা-মা সন্তানদের সব আশা পূরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন !
এই আনন্দ গুলো শিশুদের জন্য অনেক প্রয়োজন ! শিশুরা এতে আনন্দের পাশাপাশি অনেক কিছুই অর্জন করে ! পরিবারের সাথে আরও ঘনিষ্টতা, ভালবাসার ভাগাভাগি, বাবা-মার কাছে চাইবার বা আবদার করার ক্ষমতা, না পেলে ধৈর্যশক্তি, আনন্দ পেলে তার মূল্যায়ন ! যেটি শিশুদের পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে !
পৃথিবীর সব শিশুরা এইসব ছোট বড় সকল আনন্দ আর ভালবাসায় বেড়ে উঠুক ! আর সুস্থ, সবল সুন্দর একটা পৃথিবী আমাদের উপহার দিক এই কামনা যে সর্বদা করে যাই !
Wow Apa! Khubi darun likhechen!! Onek onek dua apnar choto Sonamonir jonne ebong apnader sobar jonne, khub valo legeche pore .as always 😊