মন্ত্রিত্ব ফিরে পেতে পারেন সদ্য কারামুক্ত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। পরিস্থিতি অনুকূল এবং প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকলে লতিফ সিদ্দিকী আবার মন্ত্রী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করছেন সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা।
লতিফ সিদ্দিকী এখনো সংসদ সদস্য রয়েছেন। যেহেতু তিনি সংসদ সদস্য আছেন তাই সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনে তার কোনো বাধা নেই। তবে মুক্তি পাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার তিনি চলতি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেননি।
মন্ত্রী হিসেবে লতিফ বরাদ্দ পেয়েছিলেন হেয়ার রোডের ২০ নম্বর ধলেশ্বরী ভবনটি। বরাদ্দকৃত বাড়িটি এখনো খালি পড়ে আছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে লতিফকে বহিষ্কার করার নতুন করে কাউকেই ভবনটি বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ থেকে বরখাস্ত হন লতিফ সিদ্দিকী। ওই সময় পর্যন্ত তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তার বরখাস্তের পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর পদটি এখনো পর্যন্ত খালি রয়েছে। অর্থাৎ ওই পদে মন্ত্রী হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। অবশ্য রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হলেও সে চিঠি এখনো সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছায়নি। এ চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকীর সদস্য পদ খারিজ চাওয়া হয়েছিল। অজ্ঞাত কারণে ওই চিঠি পৌঁছায়নি।
জানা গেছে, নিউয়র্কের ঘটনার পর লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের তেমন কোনো অবনতি হয়নি। এমনকি লতিফকে বহিষ্কার করা হলেও প্রকাশ্যে লতিফ সিদ্দিকী সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী।
এ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য ড. তারেক শামসুর রেহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘আবার মন্ত্রী হতে লতিফ সিদ্দিকীর আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আস্থায় নেই বলে আমার বিশ্বাস। আর তার আস্থা ছাড়া কেউ মন্ত্রী হতে পারবেন না।’
ড. তারেক বলেন, ‘আইনগতভাবে মুক্তি পেলেও প্রধানমন্ত্রী অতো বোকা নয় যে লতিফ সিদ্দিকীকে আবার মন্ত্রী করবেন। কারণ, বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হচ্ছে না। তাই লতিফকে মন্ত্রিসভায় নেয়া হলে হেফাজতসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলো একটা ঝামেলা তৈরি করবে। আর প্রধানমন্ত্রী চাইবেন না যিনি একটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তাকে নিয়ে আবার বিতর্ক হোক। এছাড়া তিনি এমন কোনো যোগ্য লোক নয় যে তাকে মন্ত্রী করতেই হবে। তার চেয়ে অনেক যোগ্য লোক আওয়ামী লীগে আছে।’
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় মন্ত্রিসভা ও দল থেকে অব্যাহতি পান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
নিউইয়র্কে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কিন্ত হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। এই হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়, হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছে, এদের কোনো কাম নেই, এদের কোনো প্রডাকশন নেই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে, শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। গড়ে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে পাঁচশ কোটি টাকা খরচ হয়।’
এমনকি তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বলেন, জয় আওয়ামী লীগের কে? তার মাসিক বেতন নিয়েও কথা বলেন লতিফ সিদ্দিকী।
এসব মন্তব্যের জেরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ার পর মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। অবশ্য সে পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করা হয়নি। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এখানে ‘টেকনিক্যালি গ্যাপ’ রাখা হয়েছে। সর্বশেষ তিনি এই গ্যাপের সুযোগ নিয়ে আইনি মারপ্যাঁচে আবার মন্ত্রিত্ব ফিরে পেতে পারেন।
অন্য একটি সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাই প্রধান। তিনি যাকে চাইবেন তিনি মন্ত্রী হবেন আর যাকে চাইবেন না তিনি হতে পারবেন না। এখানে আইনি মারপ্যাঁচ কোনো কাজে আসবে না।
সংবিধানের ৫৬ (১) ধারায় বলা হয়েছে, একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরুপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরুপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকিবেন।