৭ জুন ২০১৫: জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) খুলনার ফরাজীপাড়ার নিজ বাসভবনে রোববার বিকেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তার স্ত্রী মাজেদা আলী জানান, বিকেল পৌনে ৩টায় তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
শেখ রাজ্জাক আলীর জন্ম খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামের এক ব্যবসায়িক মুসলিম পরিবারে ১৯২৮ সালের ২৮ আগস্ট। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে (১৯৫২) ও বাংলা সাহিত্যে (১৯৫৪) মাস্টার্স ডিগ্রী ও অর্জন করার পর এল এল বি সম্পন্ন করেন।১৯৫৮ সালে তিনি খুলনা জেলা জজ কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বার এর সদস্য হন ও ১৯৬৪ সালে খুলনা আইনজীবি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি খুলনা ল’ কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। এরপর তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর উক্ত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি খুলনার এম এম সিটি কলেজ, সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় , সবুরন্নেসা মহিলা কলেজ, বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টুটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইকগাছা ডিগ্রি কলেজ, শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাইকগাছা, বি এন এস বি চক্ষু হাসপাতাল শিরোমণি খুলনা, সিটি ল্ কলেজ মসজিদ, হিতামপুর জামে মসজিদ এবং কপিলমুনি শাহ্ জাফর আউলিয়া মাজার সংলগ্ন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ খুলনা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ, খুলনা মহিলা আলিয়া মাদরাসা ও হাজী ফয়েজউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বয়রা এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
শেখ রাজ্জাক আলীর রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি মওলানা ভাসানীর ন্যাপে যোগদানের মাধ্যমে। এরপর তিনি যোগ দেন জাসদে। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে জাসদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ১৯৭৮ সালে বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্বে গঠিত জাগদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। ১৯৮৯ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দিয়ে সেবছর নির্বাচনে খুলনা-৬ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। সেবছরই ৫ই এপ্রিল তিনি ডেপুটি স্পিকার ও ১২ই অক্টোবর স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে তিনি শ্রীলঙ্কার কলোম্বোতে প্রথম সার্ক স্পিকারস সম্মেলনে যোগদান করেন ও সার্ক স্পিকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর শেখ রাজ্জাক আলীর সভাপতিত্বেই জাতীয় সংসদে স্বল্প সময়ের অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অনুমোদন দেওয়া হয়।
শেখ রাজ্জাক আলী ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন। তিনি ২০০৬ সালের শেষ দিকে বিএনপি ছেড়ে কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে এলডিপি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি পরিবারের সাথে নিভৃতে সময় কাটাতে থাকেন।
শেখ রাজ্জাক আলী ১৯৫৩ সালে প্রখ্যাত সমাজসেবী, ও লেখিকা অধ্যাপক বেগম মাজেদা আলী’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পাঁচ কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় কন্যা ড. রাণা রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। দ্বিতীয় কন্যা ডা. সাহানা রাজ্জাক স্ত্রীরোগ (গাইনি) বিশেষজ্ঞ হিসেবে খুলনায় কর্মরত। তৃতীয় কন্যা জার্মানীতে কর্মরত ডা. এ্যানা রাজ্জাক মেডিসিন ও আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ। চতুর্থ কন্যা লীনা রাজ্জাক চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট এবং কনিষ্ঠা কন্যা ব্যারিস্টার ড. জনা রাজ্জাক ইউনিভার্সিটি অব দ্যা ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড এর আইন বিভাগের অধ্যাপক।