ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে নিজেদের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এই বৈঠকের কারণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় জানান, খুব শিগগির ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক। এই বৈঠকটি ঘিরেই মূলত আজকের বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অশুল্ক বাধা দূর করা, রফতানি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করা। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে জামদানি শাড়ি রফতানির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় তারও উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা হবে।
জানা গেছে, সবচেয়ে বড় হয়ে আলোচনায় উঠে আসবে তিস্তা চুক্তি। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে তিস্তা চুক্তি আটকে গিয়েছিল। ৪ বছর পর মমতার মনোভাব অনেকটাই পাল্টে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি প্রকাশ্যে এ চুক্তির ব্যাপারে আশ্বাস দেন। তিস্তায় শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ নিয়ে এখনো দু’দেশে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্য মিটে গেলেই এই চুক্তি সম্পাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফরকালীন এই চুক্তি হবে কি না সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না। তবে এ ব্যাপারে পানিসম্পদ সচিব জাফর আহমেদ খান জানান, আমরা আশাবাদী। কারণ ইতিমধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে যে ধরনের সাড়া পাচ্ছি তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করবেন বলে আমরা আশা করছি। যে কারণে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সব সময় ইতিবাচক প্রত্যাশা করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মূল কারণ ‘বিজনেস ভিসা’। পাশাপাশি দু’দেশের ব্যবসায়ীদের সফরকালীন বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ বিষয়টি আজকের বৈঠকে গুরুত্ব পাবে। তবে উভয় পক্ষ কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্র্রসারণের ক্ষেত্রে আরো সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে তার একটি খতিয়ান তৈরি করা হবে।
[Adverts]
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যস্ততার মূল কারণ, স্থল সীমান্ত বিল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষর ও দু’দেশের উপকূল দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর। এ দুটি চুক্তি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আভাস দেন। তবে তিনি আরো জানান, দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি মাদক পাচার, বন্দি বিনিময় চুক্তি, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা, পুশ-ইন, পুশ-ব্যাক বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে দু’দেশের নৌ সচিব পর্যায়ে নৌ প্রটোকল নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি অনুস্বাক্ষর হয়। এই চুক্তির নবায়ন ৩ বছরের স্থলে ৫ বছর হচ্ছে। এ ব্যাপারে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী জানান, এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ কম মূল্যে, কম খরচে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। যার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। লাভবান হবে বাংলাদেশ। আগামিতে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়টি আলোচনা হবে। এর ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক যোগাযোগ বাড়বে। বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হবে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, স্থল সীমান্ত বিল বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে। শুধু তাই নয়, বাস্তবায়নের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বৈঠকে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। তবে তাদের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম, জাল নোট বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি একটি বড় ইস্যু হিসেবে আলোচিত হবে। পাশাপাশি মাদক পাচার রোধ করার বিষয়টি জোর দেয়া হবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায় বৈঠক হয়ে গেছে। সেই বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও, এবার দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় খুব শিগগির বিএসএফ ও বিজিবি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সীমান্ত হত্যার বিষয়টি কোনো দেশ এখন খুব সহজভাবে গ্রহণ করছে না। বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় কীভাবে দু’দেশের বন্দি হস্তান্তর হতে পারে তার একটি রূপরেখা ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ভারতের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে জটিলতা সৃষ্টি হয় তা কীভাবে পর্যায়ক্রমে নিরসন করা যায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।