সিসি ক্যামেরায় শনাক্ত ‘খুনিরা’ ছাত্রলীগের

সিলেটে ব্যবসায়ী মো. আক্তার হোসেন ওরফে রাহুলকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ ড্রেনে ফেলে দেওয়ার নৃশংস ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী’। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) দৃশ্য দেখে তাঁদের শনাক্ত করেছে পুলিশ।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক মাস পর গত রোববার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার একজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি পিস্তল। হত্যাকাণ্ডে আরও পাঁচজন জড়িত বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশের ভাষ্য, ধরা পড়া দুজনই ছাত্রলীগের ক্যাডার (অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী)। সিলেট মদন মোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তৎপর সংগঠনের একটি পক্ষের ক্যাডার এ দুজন হলেন অভিজিৎ দাস ও পিংকু চন্দ্র দাস। তাঁরা মদন মোহন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। প্রাক্তন ছাত্র হলেও কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের একটি পক্ষে এখনো সক্রিয় তাঁরা।
পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার দুপুরে অভিজিৎকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন চেয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পিংকুর কাছ থেকে পিস্তল উদ্ধার হওয়ায় অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে জানতে তাঁকে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সুনামগঞ্জের জয়নগরের সরদারপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে রোববার রাতে অভিজিৎকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি জামালগঞ্জের আমড়িয়া গ্রামে। তাঁর বাবা ও মা পেশায় স্কুলশিক্ষক। অভিজিতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিলেট নগরের ভাতালিয়া এলাকা থেকে পিংকুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধী শনাক্ত করে মুঠোফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবস্থান জানার পর দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের এই অভিযান পুরোটাই প্রযুক্তিনির্ভর। এখানে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রের ভাষ্য, ফুটপাতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রিকাবিবাজারের পাশে মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের কয়েকজন ক্যাডারের সঙ্গে বচসা হয়েছিল ব্যবসায়ী রাহুলের। এর সূত্র ধরেই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। স্পট ছিল রিকাবিবাজারের মাদার কেয়ার নামের একটি ক্লিনিকের প্রাঙ্গণ। সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল।
ওই ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য অনুযায়ী, ঘটনার সময়টা ছিল ৪ এপ্রিল রাত আটটা থেকে নয়টা। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন। সঙ্গে ছিলেন আরও ছয়জন। রাহুলের গলায় একজন ছুরি চালিয়ে দেন। এরপর দুজন ঘটনাস্থল থেকে ছুটে পালাতে থাকেন। পরে লাশ ধরাধরি করে ঘটনাস্থল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ছবিও সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত রয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজনের দলীয় সম্পৃক্ততার বিষয়ে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান বলেন, ‘এরা এখন আর ছাত্র নয়, তাই ছাত্রলীগ এদের দায় নেবে কেন?’
এ ছাড়া গতকাল দুপুরে পিংকুকে কোতোয়ালি থানায় সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হলে তিনি তাঁর সঙ্গী ছাত্রলীগের অপর একজন কর্মীর নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, অস্ত্রটি সেই রাখতে দিয়েছিল। তিনি (পিংকু) ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। অভিজিৎও হত্যাকাণ্ডে তাঁকে ‘ফাঁসানো হয়েছে’ বলে দাবি করেন। তবে কে ফাঁসিয়েছে, এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি। [Adverts] গত ৫ এপ্রিল ওই ক্লিনিকের পাশের ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল রাহুলের (৩৬) লাশ। তিনি ফুটপাতে টং দোকান ভাড়ার ব্যবসা করতেন। রাহুলের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মহিলা আনসার ক্যাম্প রোডে। সিলেট নগরের মেডিকেল কলোনি রোডে স্ত্রী রুজিনা বেগমকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
রুজিনার দাবি, ব্যবসাসংক্রান্ত কারণে তাঁর স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন।