ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / বাদ পড়ছেন মায়া-কামরুল

বাদ পড়ছেন মায়া-কামরুল

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে নেতাদের ভূমিকা বিবেচনায় এনে গঠন করা হচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি। নির্বাচনী কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত নেতাদের আমলনামা এখন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। কার কী ভূমিকা সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত তিনি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, নবনির্বাচিত মেয়র সাঈদ খোকনকে দেয়া হতে পারে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। আর উত্তরে সভাপতির দায়িত্ব পেতে পারেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া মেয়র আনিসুল হককে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। পাশাপাশি সদ্যসমাপ্ত দুই সিটি নির্বাচনের প্রচারণাসহ অন্যান্য কার্মকাণ্ডে যেসব নেতা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। অন্যদিকে নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বর্তমান কমিটির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে বাদ দেয়া হচ্ছে। এই বাদের প্রাথমিক তালিকায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নাম রয়েছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ শনিবার বলেন, ডিসিসি নির্বাচনে ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল তা মূল্যায়ন করে একটি রিপোর্ট দলের সভানেত্রীর কাছে দেয়া হবে। এজন্য সহসাই তারা বৈঠকে বসবেন। এমএ আজিজ আরও বলেন, তিনি যতটুকু জানেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে (দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বিরোধিতা) অবহিত। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
গণভবন সূত্র জানায়, ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে গিয়েছিলেন নবনির্বাচিত দুই মেয়রের অনুসারী নগর কমিটির নেতারা। তারা নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য কয়েকজন প্রভাবশালী নগর নেতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন। ওই সময় তারা সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, হাজী সেলিম ও আওলাদ হোসেনের নাম উল্লেখ করেন। এই চার নেতার প্রথম তিনজনের ব্যাপারে বলা হয়, তারা ইলিশ মাছের কথা বলে ‘মগ’ (মির্জা আব্বাসের প্রতীক)-এ চা খেয়েছেন। প্রথম তিনজন ডিসিসি দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে কাজ করেন। অন্যজন ছিলেন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুই মেয়রের অনুসারীদের বলেন, তিনি সবই জানেন। শিগগির কেন্দ্রওয়ারি ভোটের পরিসংখ্যান দেখবেন। এসব বিষয় মাথায় রেখেই নগর কমিটি চূড়ান্ত করবেন সে ইঙ্গিতও নেতাকর্মীদের দেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্রটি জানায়, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিটি নির্বাচনে বেশ কয়েকজন নগর নেতার ভূমিকায় ভীষণ ক্ষুব্ধ। তাদের ভূমিকার কারণে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত ছিলেন। কারণ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে নামেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও হাজী সেলিম। এই তিন প্রভাবশালী নেতা খোকনের বিরোধিতা করার পাশাপাশি নিজের পছন্দের নেতাদের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে বেশ তৎপর ছিলেন। প্রভাব খাটিয়ে দলীয় সমর্থন আদায় করলেও দেখা গেছে, তাদের পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থীর বেশির ভাগই বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে ধারাশায়ী হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। যার সঙ্গে উত্তর দক্ষিণের দুই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্তাব্যক্তিরা ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা জড়িত ছিলেন।
আরও জানা গেছে, উত্তরে আসলামুল হক আসলাম, রহমতউল্লাহ এবং কামাল আহমেদ মজুমদারের ভূমিকায় শুরু থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন আনিসুল হকের সমর্থকরা। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেও শেষ পর্যন্ত ওই তিন নেতাকে কার্যকরভাবে সক্রিয় করতে পারেননি। এ নিয়ে আনিসুল হক অসন্তুষ্ট। কিন্তু দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত না হওয়ার কারণে তিনি এ ব্যাপারে কারও কাছে অভিযোগ করেননি।
তবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা সিটি নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকায় থাকলেও ভোটের ময়দানে সক্রিয় ছিলেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন মহিলা এমপি। বিশেষ করে অ্যাডভোকেট তারানা হালিম ও সাবিনা আক্তার তুহিন মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড অবগত। ধানমণ্ডির এমপি ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ডিসিসি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিরামহীনভাবে কাজ করায় তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, উত্তরার এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও পল্লবীর ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর ভূমিকায় আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড সন্তুষ্ট। নগর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের মতো (কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়া) যারা নির্বাচনে সক্রিয় ছিলেন তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কমিটি এখনও ঘোষণা করা হয়নি।