ব্রেকিং নিউজ
Home / অপরাধ জগৎ / আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের নির্মমতা

আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের নির্মমতা

চান্দিনায় আত্মরক্ষার অজুহাতে পুলিশ মাফিয়া বেগম (৫৫) নামের এক বৃদ্ধার ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। বৃদ্ধার ডান হাতে চারটি ও ডান চোয়ালে ১টি গুলি বিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার দিনগত রাতে চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের পরচঙ্গা গ্রামের নয়া বাড়িতে এ নির্মম ঘটনা ঘটে। মাফিয়া বেগম পরচঙ্গা গ্রামের মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী।

অভিযোগ রয়েছে, চান্দিনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ্ আল মামুনের সঙ্গীয় ফোর্সসহ ২৫ এপ্রিল রাতে পরচঙ্গা গ্রামে গ্রেপ্তার অভিযানে গিয়ে বর্বরোচিত হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে।

গুলিবিদ্ধ মাফিয়া বেগমের ছেলে জসিম উদ্দিন ও আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘আমাদের মায়ের কোনো অন্যায় না থাকলেও পুলিশ তার ওপর গুলিবর্ষণ করে। ২৫ এপ্রিল রাতেই তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা তার খোঁজখবর নেয়নি।

বৃদ্ধার দুছেলে আরো বলেন, আমরা খুব গরিব। বর্তমানে মায়ের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। মায়ের চিকিৎসা নিয়ে আমরা ব্যস্ত। খুব শিগগিরই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব।’ তারা তাদের মায়ের ওপর বর্বর হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে একই রাতে পরচঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষকের ওপরও বর্বরোচিত অত্যাচার চালায় পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, ওই কৃষকের ঘরের দরজা ভেঙে তাকে চৌকি থেকে টেনে ঘরের মেঝেতে ফেলে কাঠের টুকরা, লাঠি-সোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এসআই মামুন, এএসআই রূপমসহ সঙ্গীয় পুলিশ কন্সটেবলরা তাদের পায়ের বুট জুতা দিয়ে কৃষক শহিদুলকে লাথি মারেন।

শহিদুলকে পুলিশি নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন স্ত্রী রফেজা খাতুন (৪০) ও ছোট ভাই মফিজুল ইসলামের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৩৬)। এছাড়া পুলিশের গুলিতে একই গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে আবুল হাশেমও (৪২) আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী জানান, চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের কেশেরা গ্রামের গফুর মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চান্দিনা থানায় একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ২৫ এপ্রিল রাতে চান্দিনা থানা পুলিশের এসআই আবদুল্লাহ্ আল মামুনের নেতৃত্বে থানা পুলিশ মাইক্রোবাস নিয়ে মহিচাইল ইউনিয়নের পরচঙ্গা গ্রামের মৃত অহেদ আলীর ছেলে কৃষক শহিদুল ইসলামের বাড়িতে যায়। রাত পৌনে ১২টায় তার ঘরের দরজা খুলতে বলে পুলিশ।

image কৃষক শহিদুল বলেন, ‘আইনের লোক পরিচয়ে অনেক সময় ডাকাতি হয়। পুলিশ আমাকে দরজা খুলতে বলে। চেয়ারম্যান এলে দরজা খুলে দেব জানালে এসময় পুলিশ গালাগালি করেন এবং ঘরের টিনের বেড়া ও দরজায় লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা দরজা ভেঙে আমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে মারধর করতে থাকে। পরে সিএনজি দিয়ে এএসআই রূপমসহ আরও এক গাড়ি পুলিশ আসে। সবাই মিলে আমাকে টেনে-হেঁচড়ে চৌকি থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি দিতে থাকে।

শহিদুল আরো বলেন, এসময় মহিচাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম রুহুল আমিন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন সরকারও আমাদের বাড়িতে আসেন। তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো কথা না শুনে তাদের সামনেই আমাকে আরো মারধর করেন।’

এব্যাপারে মহিচাইল ইউপি চেয়ারম্যান একেএম রুহুল আমিন ও ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমরা শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে খবর পেয়ে কৃষক শহিদুল ইসলামের বাড়িতে যাই। এসআই মামুনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি আমাদের কোনো কথা না শোনেননি।

রুহুল আমিন ও হোসেন সরকার আরো বলেন, আমাদের সামনে শহিদুল ইসলামকে পুলিশ মারধর করতে থাকেন। তাকে টেনে হেঁচড়ে মাইক্রোবাসে উঠান। ততক্ষণে শহিদুল ইসলামের আর্ত-চিৎকারে গ্রামবাসী এসে জড়ো হয়। এসময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে দুই জন আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় মাফিয়া বেগমকে আমরা রাতেই কুমিল্লা মেডিকেলে নিয়ে যাই।’

ইউপি চেয়ারম্যান একেএম রুহুল আমিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি একজন জনপ্রতিনিধি। আমার কোনো কথাই পুলিশ শুনল না। নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর আমার সামনে পুলিশ নির্মম নির্যাতন চালায়। যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি এর বিভাগীয় বিচার দাবি করছি।’

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার এসআই আবদুল্লাহ্ আল মামুন জানান, ‘গ্রাম পুলিশ আমাদের ভুল তথ্য দেয়। ঘটনাক্রমে উত্তেজিত জনতাকে দূরে সরাতে একজন কনস্টেবল গুলি চালায়।’ এ নিয়ে সংবাদ না প্রকাশেরও অনুরোধ জানান এসআই আবদুল্লাহ্ আল মামুন।

চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসূল আহমদ নিজামী গুলির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের ফোর্স আসামি গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার সময় কতিপয় গ্রামবাসী আসামি আনতে বাধা প্রদান করে এবং হামলা চালায়। এসময় আত্মরক্ষার্থে দু’একরাউণ্ড গুলি ছুড়েছে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, আসলে এরা তো আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে। এটার আর কী বিচার হবে। তবে গুলিবিদ্ধ মহিলা নিরীহ-নিরপরাধ উল্লেখ করে ওসি বলেন, তাকে চিকিৎসা দিলেই ভালো হয়ে যাবে। বিষয়টি আমরা ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে মিমাংশা করেছি। ওই মহিলার চিকিৎসার খরচ আমি বহন করব বলে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’

এ ব্যাপারে কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সদর সার্কেল) ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমি তিনদিন হলো যোগদান করেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না।’

2 comments

  1. Mohammad Lutfur Rahman Kasemy

    মানুষের উচিৎ মানুষের অধিকার বুঝা ও কোনভাবেই যেন মানবাধির লংঘন না হয় তা সতর্কতার সাথে মানা ও খেয়াল রাখা। কারণ সবারইতো বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্বীয়-স্বজন আছে। তাছাড়া সবাইতো একই দেশের মানুষ তথা বাংলাদেশ নামক একই পরিবারের সদস্য। আসুন দুনিয়ার হানাহানি থেকে বাচিঁ, পরকালকে বিশ্বাসের সাথে আল্লাহকে হাজির- নাজির জেনে কাজ করি, পরপারের জীবনের শান্তি নিশ্চিৎ করি।

  2. Mohammad Lutfur Rahman Kasemy

    মানুষের উচিৎ মানুষের অধিকার বুঝা ও কোনভাবেই যেন মানবাধির লংঘন না হয় তা সতর্কতার সাথে মানা ও খেয়াল রাখা। কারণ সবারইতো বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্বীয়-স্বজন আছে। তাছাড়া সবাইতো একই দেশের মানুষ তথা বাংলাদেশ নামক একই পরিবারের সদস্য। আসুন দুনিয়ার হানাহানি থেকে বাচিঁ, পরকালকে বিশ্বাসের সাথে আল্লাহকে হাজির- নাজির জেনে কাজ করি, পরপারের জীবনের শান্তি নিশ্চিৎ করি।