ভোট প্রদানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
একইসঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংসতা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের আরো কঠোর ভূমিকাও প্রত্যাশা করছে সুজন।
শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে এমন মতামত তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ভোট প্রদানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও ব্যালটবাক্স ছিনতাই রোধে পূর্ব থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকেই সেনা মোতায়েন করতে হবে।’
তবে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সুজনের দাবি নয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অতীতে উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। উপজেলা নির্বাচনে সহিংস ঘটনা, কারচুপি, জালভোট দেয়া, ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের কথা আমরা জানি। সহিংস ঘটনায় মৃত্যুও আমরা দেখেছি। এখন নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া পারবে কিনা।’
একই প্রশ্নের জবাবে সুজনের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘গত উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বলে দেয় সেনাবাহিনী প্রয়োজন। তবে আমরা আরও কয়েকদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই। এরপর সেনাবাহিনীর বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরব। তবে সেনাবাহিনী থাকলে দুষ্টু লোকেরা ভয়ে থাকবে।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইনে যে বিষয়গুলোকে দণ্ডনীয় অপরাধ বলা হয়েছে, তা অবাধে করেছেন কোন কোন রাজনৈতিক দল। দলীয় সমর্থনদান বা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য শুধু চাপ সৃষ্টিই নয়, ইতোমধ্যেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ, গাড়িবহর নিয়ে মিছিল, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, শত-সহস্র মানুষ নিয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল, মিছিলসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিভিন্ন নমুনা আমরা দেখেছি।
নির্বাচন কমিশনকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান ছিল কঠোরতা প্রদর্শনের। কিন্তু আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের আহ্বান অনেকের কাছেই গুরুত্ব পায়নি। ফলে যাচ্ছেতাইভাবে আচরণবিধি, আইন-কানুন ও বিধিবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে এক্ষেত্রে কঠোর হতে দেখা যাচ্ছেনা।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আহ্বান, শুধুমাত্র দায়সারা গোছের কারণ দর্শানোর নোটিশ বা জেল-জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে একটি অবাধ নিরপেক্ষ অর্থবহ নির্বাচন উপহার দিন।’
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তিরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নির্বাক। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারেন, ভোট যেন সঠিকভাবে গণনা হয় এবং সঠিকভাবে যেন ফলাফল প্রকাশ করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা রাজনৈতিক সহিংসতাপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছি। সেই নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তবে আবারও হয়ত আমরা অস্থিরতাপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হব।’
সুজনের এই বক্তব্য কিসের ভিত্তিতে এবং এটা অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচ্ছন্ন হুমকি কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘এটা হুমকি নয়, এটা আমাদের আশঙ্কা। আমরা সহিংসতায় বিশ্বাস করিনা। যখন শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সুজনের চট্টগ্রামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, ‘আমরা কাউকে উসকানি দিচ্ছিনা। আমরা উভয়পক্ষকে সংযত করার চেষ্টা করছি। যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের বলছি সংযত হয়ে আচরণ করতে। আর যারা ক্ষমতার বাইরে আছেন তাদের বলছি এমন কিছু না করতে যেটা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন।