ব্রেকিং নিউজ
Home / বাংলাদেশ / ছালাম-মহিউদ্দিন বিরোধ তুঙ্গে!

ছালাম-মহিউদ্দিন বিরোধ তুঙ্গে!

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে নোটিশ প্রদানকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া নোটিশের জবাবে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দলীয় প্যাডে কড়া ভাষায় হুমকি দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অশালীন, শিষ্টাচার বহির্ভূত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছেন সিডিএ চেয়ারমান আবদুচ ছালাম।
আবদুচ ছালাম জানান, অনুমোদন ছাড়াই ক্যাম্পাসে সেমিপাকা ভবন নির্মাণ করায় সিডিএর পক্ষ থেকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নোটিশ দেয়া হয়, যা আইনগত বিষয়। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা এর জবাব কিংবা ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু তা না করে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দলীয় প্যাডে কড়া ভাষায় এর জবাব দিয়েছেন।
জবাবে সিডিএর নোটিশ প্রদানকে বেআইনি উল্লেখ করে ছাত্র জনতাকে সঙ্গে নিয়ে সিডিএ’র কার্যক্রম প্রতিহত করার হুমকি দেন। সিডিএর চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসকে সেমিপাকা স্থাপনা উল্লেখ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে একে শিষ্টাচারবর্জিত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ উল্লেখ করে তা প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
জবাবে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রায় ২০০ স্থাপনা করপোরেশনের নিজস্ব অ্যাক্ট অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের কত সালের অ্যাক্ট এবং কত ধারায় করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়, সিডিএর অনুমোদন ছাড়া স্থাপনা নির্মাণের আইনগত ক্ষমতা কারো নেই। তবে এ বিষয়ে ক্ষমতা চেয়ে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব রশিদ আহমদ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজেদের স্থাপনা নিজেরাই অনুমোদনের ক্ষমতা চাওয়া হয়।
তিনি জানান, উন্নয়ন প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে ঢাকা সিটি করপোরেশন নিজেদের স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদনের ক্ষমতা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়েছে। তাই যে কোনো প্রকল্প তারা তাদের প্রধান প্রকৌশলীকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এই ক্ষমতা পাওয়ার অনুমতি চেয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। গত ৯ এপ্রিল আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে সিডিএর দ্বারস্থ হতে হবে না। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত সিডিএর অনুমোদন নিয়েই ভবন স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮ এর শুরুতেই বলা আছে, এটি চিটাগং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডিনেন্স, ১৯৫৯ (অর্ডিন্যান্স নং এলআই অফ ১৯৫৯) এর অধীন প্রণীত চট্টগ্রাম মহানগর পরিকল্পনাভুক্ত এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে। আর সিডিএর পরিকল্পনাভুক্ত এলাকা সিটি করপোরেশনের আয়তনের চেয়ে অনেক বেশি।
এছাড়া ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায়ও সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধাসরকারি, ব্যক্তিগতসহ সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণের আগে সিডিএর অনুমোদন নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
আর বিধিমালা অনুসরণ না করে ক্যাম্পাস নির্মাণ করায় সিডিএ কর্তৃপক্ষ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে নোটিশ প্রদান করে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তবে এখানে ব্যক্তিগত চিঠি দেয়া সমীচীন নয় বলে মত প্রকাশ করেন সিটি করপোরেশনের সচিব রশিদ আহমদ।
রাজনৈতিক সচতেন মহলের মতে, মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আবদুচ ছালাম হচ্ছেন রাজনীতিতে গুরু-শিষ্য। আবদুচ ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যান থাকাকালে প্রথমদিকে উভয়ের মাঝে সুস¤পর্ক ছিল। নানা বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে স¤পর্কে ফাটল ধরে। সেই তিক্ততা আর কাটেনি। বরং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্প্রতি সিডিএর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়ার পর সিডিএ চেয়ারম্যানের প্রতি দীর্ঘদিনের চাপা রাগ চিঠির মাধ্যমে খানিকটা মিটিয়েছেন তিনি।