||সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ ||
০১) বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ একজন স্বজন, বয়োজ্যেষ্ট রাজনীতিক, আইনবিদ ছাড়াও রসালো ভাষণ আর গুমট রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে মিষ্টি মধুর বক্তব্য দিয়ে সকলের মন জয়ের বিরল এক রেকর্ড ও গৌরবের অধিকারি।রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হওয়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতির অভিভাবক হিসেবে এখন পর্যন্ত তেমন একটা বিতর্কিত কিংবা আলোচিত- সমালোচিত হওয়ার মতো কোন ঘটনার জন্ম দেননি। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সফরের ক্ষেত্রে আমাদের এই মহামান্য রাষ্ট্রপতির রয়েছে যথেষ্ট কৃচ্ছ্রতা সাধনের নজির। এমনকি রাষ্ট্রীয় অতিথি আপ্যায়নে অতিরিক্ত ব্যয় এড়িয়ে চলারমতো অনেক অনন্য কিছু দৃষ্ঠান্তও তিনি স্থাপন করেছেন- যা সচরাচর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের কোন ব্যক্তির বাহ্যিক আচার আচরন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব একটা দেখা যায়না বললেই চলে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খান এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সেজন্যে রাষ্ট্রপতির শত্রু-মিত্র সকলের কাছেই তিনি এক আদর্শতুল্য এবং একই সাথে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্টিত। অবশ্য দুএকটি ব্যতিক্রম যে নয়- তা বলা যায়না। একজন দলীয় রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে সেসব স্বাভাবিক বলেই আমরা ধরে নিতে পারি এবং নেয়াটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিৎ।
০২) সেই আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি হঠাৎ করে নিজস্ব সেই সব স্বকীয়তা ও আদর্শ এবং কৃচ্ছ্রতার রেকর্ডকে পেছনে ফেলে দিয়ে চোখের চিকিৎসার জন্য নয় দিনের এক সফরে লন্ডনে রয়েছেন। লন্ডনে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ ইতোপূর্বেও চিকিৎসার জন্যে এসেছিলেন এবং একই হিল্টন হোটেলেই অবস্থান করেছিলেন। আমরা রাষ্ট্রপতির আশু সুস্থ্যতা কায়মনোবাক্যে কামনা করি। কিন্তু মোটা দাগের যে প্রশ্নটি বার বার মনে উঁকি দেয় এবং লন্ডনের সকল মহলে ঘুর পাক খাচ্ছে- হঠাৎ করে কি এমন চিকিৎসার এমন বিশাল বহরের উপস্থিতি সাথে থাকা প্রয়োজন পড়লো, যাতে ৪০ সদস্য (রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত চার সদস্য বাদে)নিয়ে চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনের মতো পৃথিবীর সব চাইতে ব্যয় বহুল সিটিতে আসতে হলো। বিশেষ করে এমন এক সময়, যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক, সুইজারল্যান্ডে র্যাবের জন্য ব্যবহ্নত গোয়েন্দা সরঞ্জাম ব্রিটিশরা আটকে দিলো, ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে, অভিজিৎ হত্যাকান্ডের আন্তর্জাতিকতা লাভ বিশেষতঃ বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার আন্দোলনের সাথে একাকারের একটা চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে- ঠিক সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির বিশাল বহর নিয়ে চোখের চিকিৎসা নানা প্রশ্ন ও কূটনৈতিক মহলে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির বিশাল বহরে যারা লন্ডনে এসেছেন, তারা কেউ ই ব্রিটিশ সরকারের কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স, এমনকি কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বা বাংলাদেশী ব্রিটিশ চেম্বারের সাথে কোন পর্যায়েই কোন বৈঠক বা ব্যবসায়িক কর্মসূচীর খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। উপরন্ত লন্ডনের ষ্ট্রাটফোর্ডস্থ দামী শপিং মল আর হ্যারর্ডস, সহ ইত্যাদি মলে তাদের অনেককেই শপিং আর ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।যদিও স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবং দূতাবাস সূত্র রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক কোন দলীয় কর্মসূচীর কথা জানানো হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দলীয় নেতৃবৃন্দ দলবেধে হিল্টনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে ফটোসেশন করছেন ও পোস্ট দিচ্ছেন।
০৩) হিল্টন কর্তৃপক্ষ বিনয়ের সাথে ব্যবসায়িক প্রাইভেসি আর নিজেদের কাস্টমারদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার যৌক্তিক অজুহাতে কোন তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ- স্বাভাবিক ধরেই নিতে হয়। তারপরেও যে তথ্য অবগত হওয়া গেছে, দলীয় বিভিন্ন সূত্রে, আর তা হলো হিল্টনের বিশাল কয়েক ফ্লোর ব্যাপী ৪০ সদস্যের বহরের জন্য শতাধিক রুম বরাদ্ধ বাংলাদেশের এই গরীব দেশের রাষ্ট্রপতির সফর সঙ্গীদের লন্ডন শহর ঘুরে বেড়ানোর জন্য।হিল্টনের খানা পিনাতো থাকছেই। হিল্টন হোটেলের সাধারণ এক কাপ(সাদা মাটা) কফির দাম ৫.৯৯। কেউ কখনো হিল্টনে সাদা মাটা স্বাভাবিক কফি পান করেননা, নেহায়েত ভ্রমণ পিয়াসু ছাড়া।
০৪) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বৈরশাসকদের যখন পতনের সময় আসে, তখন লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, প্যারিস, মাদ্রিদ, ব্যাংকক, সুইজারল্যান্ড আর আজকের দুবাই প্রভৃতি দেশে নামে বেনামে, সফর-অসফরের অজুহাতে দেশীয় মুদ্রা, সম্পদ, স্বর্ণ, সুটকেস ইত্যাদি জমার জন্য নিরাপদ স্থান মনে করে থাকেন। যেমন ইমেলদা মার্কোস, পারভেজ মোশাররফ, চারদলীয় জোট সরকার আর বিগত ৯৬ আওয়ামীলীগের সরকারের সময়ে আমাদের অনেক নেতা নেত্রীরা কেবলমাত্র লন্ডনের ন্যাট ওয়েস্ট ব্যাংক আর ওয়েস্ট মিনিস্টার এলাকায় মিলিয়ন-বিলিয়ন পাউন্ডের প্রোপার্টি মার্কেটে ইনভেস্টম্যান্টের রিপোর্ট বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায় এসেছে।৪০ জনের প্রতিজন নয়দিনের সফরে দুটি করে ল্যাগেজ সহ সর্বমোট ১৪০টি ল্যাগেজ হিথরো থেকে ছাড় করানো হয়েছে বলে একটি দলীয় সূত্র জানিয়েছেন ( কিন্তু এ তথ্য ভেরিফিকেশন করার কোন উপায় নেই, সেজন্যে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায়না)। ব্রিটেনের বা ইউরোপের বিশেষ করে রাশিয়ার শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টম্যান্ট এর ব্যাপারে আলাপ আলোচনা প্রকাশ্যে বা জানিয়ে হলে খারাপ কিছু নয়। বিনিয়োগ দেশে বিদেশে হতেই পারে- নামে বেনামে কিন্তু যতক্ষণ স্বচ্ছতা থাকে, দেশের স্বার্থে থাকে, ততোক্ষণ প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই। কিন্তু যখনি দেশের সম্পদ ব্যক্তিগত কিংবা নামে বেনামে আলোচনা শুরু হয়, তখনি প্রশ্ন ও শংকা সামনে চলে আসে।আবার অস্রের কোন অবৈধ চালান বা স্বর্ণের মার্কেট জ্যাম্প দেয়া বা দলীয় বিশাল নেগেটিভ ইস্যু বহন করে নিরাপদ অবস্থানের সুযোগের ধার নিরবে চালান করে দেয়া কিংবা রাজনৈতিক বৈদেশিক ফর্মুলার গোপন আঁধার রাষ্ট্রপতির সম্মানিত ও অতি উঁচু মার্গের আদর্শের আবডালে নিষ্টুর ও বেহিসেবি সূত্রের যোগসূত্র কোনভাবেই কাম্য নয়। যেমন নয় গনতন্ত্রের আড়ালে অগণতান্ত্রিক শাসন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতির বিবেক হিসেবে বিষয়গুলো কি খোলাসা করবেন ?
( প্রিয় পাঠক, প্রিয় রাষ্ট্রপতি- বিক্ষিপ্ত তথ্যগুলোকে সাজিয়ে আপনাদের সামনে নিয়ে আসা, সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য। কোনভাবে স্রেফ রিউমার, গুজব কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতির ইমেজের সামান্যতম ক্ষতি সাধন নয়- বরং যারা প্রিয় রাষ্ট্রপতির বিশাল বহর নিয়ে নানা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, খোলাসা করার জন্য এই রিপোর্টের অবতারনা। পাঠক এবং জাতির বিবেক রাষ্ট্রপতি মাত্রই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্ঠিতে দেখবেন আশা করি)।
Salim932@googlemail.com
15th March 2015, London.