বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য খাবার নিতে বাঁধা দেয়ায় খাবার কষ্টে আছেন তিনি। যা খাবার ছিল তাও শেষ। এই কারণেই অনেকটাই না খেয়ে আছেন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় খাবার না থাকায় ওষুধ খাওয়ার আগে তার যে সব খাবার খাওয়ার কথা তাও খেতে পারছেন না। সব সময় যে খাবার খান এর পরিবর্তে এই কয়দিন শুকনো খাবার দিয়ে দিন পাড় করেছেন। মাঝে মাঝে অল্প বিস্তর নিজের পথ্য পেয়েছেন। তার খাবারের কষ্টের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার দলের নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে তারা সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে চান।
বিএনপির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এই জন্য বিএনপির তরফ থেকে কারাগারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিশেষ মারফত খবর পাঠানো হয়েছে বিএনপির সিনিয়র নেতারা যাতে কারাগারে অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেখানে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য যে বন্দি আছে ওই সব বন্দিকে তারা খালেদা জিয়ার খাবার বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। তারপর তারাও কারাগারে খাওয়া বন্ধ করে দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত খালেদার কার্যালয়ে খাবার নিতে না দেয়া হবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ ধরনের ঘোষণা দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করে জানান যে, সারাদেশে কারাগারে আটক বন্দির ধারণ- ক্ষমতা ৩০ হাজারের মতো। কিন্তু এখন সারাদেশের কারাগারগুলোতে রয়েছে ৮০ হাজার বন্দি। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি আসামি সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে খাবার দেয়া হচ্ছে না,এই খবরটি বিএনপির যেসব নেতা কারাগারে রয়েছেন তাদেরকে বলা হয়েছে, সেখানে এর প্রতিবাদে অনশন কর্মসূিচ শুরু করার জন্য। যতক্ষণ পর্যন্ত খাবার সরবরাহ স্বাভাবিক না হরে ততক্ষণ তারা অনশন করবেন।
কারাগারে কেমন করে বার্তা পাঠানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে সব নেতা বন্দি রয়েছেন তাদের সঙ্গে তাদের পরিবার- পরিজন ও নেতাও দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন ; তাদের দিয়ে বলানো হয়েছে। তারা যে কোন সময় এটা শুরু করতে পারেন।
কোন্ কোন্ কারাগারে অনশন শুরু করার জন্য বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভাগীয় প্রতি বড় শহরের কারাগার ছাড়াও কাশিমপুর কারাগারও রয়েছে এই তালিকায়।
এদিকে সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের খাবার বন্ধ করে দেয়ার অজুহাতে বিএনপির আটক নেতারা যদি কারাগারে অনশন শুরু করেন তাতে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এমনকি নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে চেলে যেতে পারে। কারাগারে বিদ্রোহ হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে কারা বিদ্রোহের আশঙ্কার কথা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অ¯ী^কার করেন। তিনি বলেন, কারাগারে বিদ্রোহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বিএনপি ও জামায়াত জোটের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। তারা আন্দোলনকে ভিন্নœখাতে নিয়ে আরো সফল করার জন্য কারাগারের ভেতরে বিদ্রোহ করতে পারেন। অনশনও করতে পারেন। ওই সব নেতা যদি সেখানে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করেন সেটা খুব খারাপও হবে। তিনি বলেন, কারা বিদ্রোহ হলে কি করতে হবে সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। আর ওই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কারাগারে যাতে কোন ধরনের বিদ্রোহ না হয় এবং যদি কোন কারণে বিদ্রোহ হয় তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যে এই ব্যাপারে আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি, নিরাপত্তার কারণে তা বলছি না। তবে সেখানে অতিরিক্ত আনসারও মোতায়েন করা হয়েছে। আটক নেতারা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করলে এর পরিণতি খারাপ হবে।
কারাগুলোর যে ধারণাক্ষমতা আপনারা তার চেয়ে বেশি গ্রেফতার করছেন যার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। সেখানেওতো পানি, খাওয়া, ঘুমনো, কম্বলসহ কত ধরনের জিনিস কম পড়তে পারে। সে সব বিষয় নিয়েও কারা বন্দিরা একটা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। তিনি বলেন, সেটাও করতে পারে। এ সব বিষয় আমাদের মাথায় রয়েছে। সে জন্য যাতে কারাগারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ও কোন ধরনের বিদ্রোহ না হয় সে জন্য আমরাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে বলেছি। তারা সতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি, সেটা এখনই বলতে চাই না। তবে এটুকু বলে রাখি, এর মধ্যে সাধারণ যে-ই ছোটখাটো বিষয়ে অপরাধ করেছে, এমন আসামিদের যারা কারাগারে ছিল তাদেরকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর অন্যদের আটক করা হচ্ছে।
যারা অপরাধ করেছে এ সব আসামি জামিনে বেরিয়ে আসার সুযোগ পাওয়ায় তারা আরো বড় ধরনের অপরাধ করতে পারে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম ও অপরাধও করতে পারে এই ব্যাপারে তিনি বলেন, সেটা হলেও তা খুব বেশি হবে না। কারণ বড়, চিহ্নিত ও দাগি কোন আসামিকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। ছোটখাটো বিষয়গুলোর জন্য যারা কারাগারে ছিল তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন কতসংখ্যক আটক করা হচ্ছে, কারাগারে আনা হচ্ছে আর কতসংখ্যক জামিন দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, য সংখ্যক আটক করা হচ্ছে তা খুব বেশি নয়। তবে এখন জামিন দেয়ার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কারাগারে বিএনপির নেতাদের কোন ধরনের অনশন করার চেষ্টা করতে দেব না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে সরকার। তাছাড়াও সব আসামিকেও এক জায়গায় রাখা হয়নি। তাদেরকে সংগঠিত হওয়ার আগেই অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, কারাগারে অনশন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে ;সময় ও সুযোগ পেলেই সেটা তারা শুরু করবে। তাছাড়া যেভাবে অমানবিকভাবে বন্দিদের কারাগারে রাখা হয়েছে সেটা ঠিক না। আমরা জানতে পেরেছি তাদেরকে ঠিকমতো খেতে দেয়া হচ্ছে না। অনেকে কম্বল পর্যন্ত পাচ্ছে না। আরোতো অনেক সমস্যা রয়েছে। এ সব সমস্যা থাকলে যেকোন সময় সেখানে বিস্ফোরণ হতে পারে। বিএনপি সে সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাইছে। এটাও বিএনপির আন্দোলনের একটি কৌশল।
এদিকে খালেদা জিয়ার খাবার বন্ধ রাখা হলে কারাগারে অনশন শুরু হওয়ার আশঙ্কার বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী বলেন, বিএনপি সেটার চেষ্টা করতে পারে। তবে সফল হতে পারবে না। তারা ৪০ দিনে পেট্রোল বোমা হামলা করে মানুষ মারা ছাড়া তো আর কিছুই করতে পারেনি। তাহলে তারা আরো কিছু করবে? সরকারের পতন ঘটাবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। এ ব্যাপারে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করি কোন সমস্যা তারা করতে পারবে না। তবে খালেদা জিয়ার খাবার বন্ধ করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়নি। যারা বন্ধ করেছে তারাই জানে কি করবে; খাবার নিতে দেবে না-কি দেবে না।
এদিকে কারাগারে অনশন ও বিদ্রোহ করার উদ্যোগ কে নিয়েছে এ ব্যাপারে সূত্র জানায়, বাইরে যারা মুক্ত আছে তাদেরকে রাস্তায়ও নামতে দিচ্ছে না সরকার। তাদেরকে অনশনও করতে দেবে না। এ কারণেই কারাগারে এমন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। সেখানে সরকার বাধা দিতে পারবে না। তাছাড়াও সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে সরকারের উপর চাপও বাড়বে। সেই চাপ তৈরি করার জন্য কাজ করছেন তারেক রহমান ও বিএনপির নেতারা। আস