চলমান ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে ক্রসফায়ারে প্রায় ২৮ দলীয় নেতাকর্মী নিহতের ঘটনায় ভীত নয় জামায়াত। ৫ জানুয়ারি থেকে চলা অবরোধ-হরতালে সরকার উৎখাত না করতে পারলেও পেট্রলবোমা ছুড়ে মেরে সাধারণ মানুষ হত্যায় দেশব্যপী আবারো সমালোচনার ঝড় তোলে সংগঠনটি।
তবে এ সংগঠনের নেতারা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, পেট্রলবোমার সঙ্গে জামায়াত-শিবির কোনোভাবেই জড়িত নয়। তারা জানান, জামায়াত-শিবিরকে নিধন করার জন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। যার পরিণাম শুভ হবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব নেতা জানান, এ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে চিরস্থায়ীভাবে থাকার জন্য যত অপকৌশল আছে সব প্রয়োগের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। তাদের সেই স্বপ্ন কখনো অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন হবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে একই কায়দায় সংগঠনটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে আসছে। চলমান আন্দোলন সংগ্রাম শুরুর পর থেকে সারাদেশে বিভিন্ন পরিবহনে পেট্রলবোমা ছুড়ে বহু সাধারণ মানুষকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের কারণে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে দলটির বেশ কয়েক নেতাকর্মী ক্রসফায়ারে নিহত হয়। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে একচুল পরিমাণও আন্দোলন থেকে নেতাকর্মীদের দূরে রাখা যাবে না। বরং সরকার ক্ষমতা না ছাড়লে সামনে আরো কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। আর এসব হত্যার মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা ভীতসন্ত্রস্ত নয় বলেও জানান ছাত্র শিবির নেতারা। ঢাকা মহানগর শিবিরের বেশ কয়েক নেতা এসব কথা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক যত হত্যাকাণ্ড বাড়বে তত সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বাজাতে সহজ হবে।
অপরদিকে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহিদুল হক ও র্যাবের মহাপচিালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, জনগণের স্বার্থে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নাশকতাকারী সন্ত্রাসীদের নিধন করার কথা বললেও জামায়াত-শিবির নিহতদের নিজেদের নির্দোষ নেতাকর্মী দাবি করে আসছে। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ জানিয়েছেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বেছে বেছে গুলি করে হত্যা করছে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের ২৮ নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনাকে পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড দাবি করে তা বন্ধের আহ্বান জানান মকবুল আহমাদ।
একইভাবে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান। তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, গুলি, নির্যাতন, বাড়িঘর ভাঙচুর ও গণগ্রেফতার চালাচ্ছে সরকার। ছাত্রজনতার মুক্তির আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে নৃশংসতা ও অমানবিকতার পথ বেছে নিয়েছে এ অবৈধ সরকার। তারা আরো জানান, সরকারের নৃশংসতার প্রধান শিকার হচ্ছেন জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির।
দেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে দাবি করে জামায়াতের একাধিক নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরাসরি আইন লঙ্ঘন করছে। এ বিষয়ে তারা জাতিসংঘ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার নিকট হত্যা বন্ধের জন্য চিঠি পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে জামায়াতের কয়েক পলাতক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জানান, এ হত্যাকাণ্ডের জয় পরাজয়ের শেষ দেখতে চান তারা।