ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন

খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

রবিবার রাতে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীর ব্যাপারে তার এ নীতি পরিবর্তনের কথা জানান।
সভায়য় খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তার কপালে অনেক দুঃখ আছে। চাইলে তার বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু করতে চাই না।
প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময়ে এ কথা বললেন যার একদিন আগেও খালেদার কার্যালয় ১৭ ঘন্টা যাবত বিদ্যুৎহীন ছিল। কেবল টিভি, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের সংযোগ এখনো পুনঃস্থাপন করা হয়নি।
তবে শনিবার সন্ধ্যায় খালেদার কার্যালয়ে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার মধ্য দিয়েই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আভাসা পাওয়া গেছে।
আগের দিনগুলোতে খালেদার কার্যালয় অবরোধ, গ্রেফতার বা খাবার বন্ধ করতে মরতে বাধ্য করার হুমকি দেয়া হলেও রবিবার সরকারের মন্ত্রীরা অনেকটাই মুখ বুঝে ছিলেন।
কেন তারা চুপ ছিলেন তার কারণটাও উঠে এসেছে সংসদীয় দলের বৈঠকে বৈঠকে।
সভা সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, কোনও বিষয়ে নিয়ে এত বেশি রিঅ্যাক্ট দেখানোর দরকার নেই। সরকার তো ব্যবস্থা নিচ্ছে। কাজেই এত বেশি উদ্বিগ্ন হবার দরকার নেই।
প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংসদ সদস্যদের এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে তিনি বিএনপি জামায়াতের চলমান সহিংসতা, অপরাজনীতির জনগণের সামনে তুলে ধরার আহবান জানান।
সভায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সংসদ অধিবেশন দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করে যার যার নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে অবস্থানের প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এই প্রস্তাবে সাড়া দেননি।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এসএসসি পরীক্ষাকে চ্যা‌‌‌লেঞ্জ হিসেবে নিয়ে হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে। চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে যদি একজন শিক্ষার্থীর কোনও ধরনের সমস্যা হয় তাহলে তার দায়ভাব সরকারকে নিতে হবে। আমরা চাই না কোনও শিক্ষার্থীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে।
বৈঠক শেষে উপস্থিত তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া যে কাজটা করছেন এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার কার্যকলাপ মানবতাবিরোধী, এটা কোনও আন্দোলন নয়। এটা জঙ্গিবাদ উত্থানের একটা পদক্ষেপ।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সিনিয়র সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলী, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি পুলিশের বাড়তি ‘নিরাপত্তার’ কারণে নিজের গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে থেকেই সারা দেশে সরকারের বিরুদ্ধে অবরোধের ডাক দেন তিনি। এই অবরোধ বিরতিহীনভাবে চলার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে হরতালও চলছে।
এর মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।
ওই দিন রাতে শোকাহত খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে গুলশান কার্যালয়ের ফটক থেকে ফেরত আসেন প্রধানমন্ত্রী। খালেদার অসুস্থতার কারণে এমনটা হয়েছে বলা হলেও এতে অপমানিত বোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার বায়তুল মোকারমে কোকোর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেননি। কোকোকে সামরিক কবরস্থানে সমাহিত করার আবেদন করা হলেও তা নাকচ করা হয়।
এক পর্যায়ে এসএসসি পরীক্ষার সময় অবরোধ তুলে নিতে খালেদা জিয়ার উপর নানা চাপ বাড়ানো হয়। তার জোটের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকটি আলোচিত ‘বন্দুক যুদ্ধ’ ও ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা ঘটে।
সব শেষ গত শুক্রবার অবরোধ প্রত্যাহারে খালেদাকে দুদিনের সময় বেধে দেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। অন্যথায় খালেদার কার্যালয়ের সকল জরুরি পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেয়া হয়।
কিন্তু এ ঘোষণার রাতেই গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে। পরদিন আটক করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও এনটিভি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালুকে।

2 comments