ঢাকা: দেশের বৃহত্তম দু’টি রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী। আগামী ৫ ডিসেম্বর কী ঘটবে এ নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে টানটান উত্তেজনা।
কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের অনুমতি পাবে না জেনেই যেকোনো মূল্যে সেদিন ঘোষিত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। অপরদিকে বিএনপিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমনকি তারা ওই দিন একগুচ্ছ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। দিনটিকে একপক্ষ গণতন্ত্র হত্যা দিবস অপরপক্ষ গণতন্ত্র রক্ষা দিবস বলে আখ্যা দিয়েছে।
এদিকে বিএনপির কর্মসূচি প্রতিহত করতে ইতিমধ্যে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবেই ইতিমধ্যে রাজধানীর আবাসিক হোটেল, বাস এবং ট্রেন স্টেশনে পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়েছে।
শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, ফার্মগেট, মহাখালী, বনানী, গুলশান, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, নয়াপল্টন ও কাকরাইল এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে তল্লাশির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শ্যামলী ওভারব্রিজের পশ্চিম দিকে অবস্থিত হোটেল শ্যামলী থেকে দু’জন বোর্ডারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হোটেলের ম্যানেজার আবু বকর জানান, সকাল ১০টার দিকে চার পুলিশ এসে হোটেলের টালি (নাম নিবন্ধন খাতা) খাতা দেখতে চায়। পরে হোটেলের সবক’টি কক্ষে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে চানমিয়া এবং রাজিব নামের দু’জনকে ধরে নিয়ে গেছে।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে শেরে বাংলা নগর থানায় যোগাযোগ করা হলে এসআই জহির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে তিনি দাবি করেন, রাজধানীর সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখতেই এমন অভিযান। তাছাড়া ওই হোটেল জঙ্গিদের অবস্থান করার তথ্য ছিল।
কিন্তু আটককৃতরা প্রকৃত অর্থে জঙ্গি কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘না, আমরা এখনো নিশ্চিত করে বলছি না যে তারা জঙ্গি। তবে আমাদের কাছে এমন তথ্য ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে ফার্মগেট এলাকার হোটেল মেট্রোরাজ থেকেও বেশ কয়েক জনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হোটেলের ম্যানেজার সোহেল জানান, বেলা ১২টার কিছু পরে কয়েকজন পুলিশ হোটেলে এসে খাতা দেখতে চায়। পরে তারা হোটেলের সবক’টি কক্ষে তল্লাশি চালায়। এসময় বেশ কয়েকজনকে হোটেল থেকে ধরে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তেজগাঁও থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার কামরুজ্জামান অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে কতো জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক জনকে না, শুধুমাত্র ফারুক হোসেন নামের একজনকে ধরে নিয়ে আনা হয়েছে।’
এদিকে রাজধানীর গাবতলী বাস-টার্মিনাল এলাকায় সবে ঢাকায় আসা কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ এবং র্যাব ঢাকাতে আসা বাসসহ সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে।
রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশি তল্লাশি এবং ধর-পাকড়ের প্রসঙ্গে কথা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে রাজধানীতে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্যই এসব অভিযান চালানো হয়েছে।’ ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া এসময় পর্যন্ত রাজধানীতে র্যাব পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা কড়া নজরদারি করছেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, অনুমতি না দিলেও ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচি পালনে অনড় রয়েছে বিএনপি। বিএনপির একাধিক নেতা গণমাধ্যমে এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এমনকি ওইদিন বিএনপি চেয়ারপারসন পল্টনে আসবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
যে কোনোভাবে পল্টনে সমাবেশ করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন জোটের নেতাকর্মীরা। তবে এখন পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি ডিএমপি।
অপরদিকে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হচ্ছে- ৫ জানুয়ারি সারা দেশে সকাল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, জেলা ও উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজবে, ওইদিন ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ উপলক্ষে দুপুর আড়াইটায় রাজধানীসহ দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয় র্যালি হবে। বিজয় র্যালি শেষে ঢাকার নির্বাচনী এলাকায় ১৬টি স্পটে ভাগ হয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে একটি হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।