বেনাপোলের বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর দখলে থাকা ধান্যখোলা বাওড়ে মাছ ধরতে নেমে অব্যাহত নির্যাতিত ৩১ হিন্দু পরিবার একে একে দেশত্যাগ করেছেন।
এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা মনোকষ্ট নিয়ে দেশত্যাগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এখন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বাওড় পাড়ের আরও দুশো মানুষ।
শনিবার দুপুরে শারীরিক নির্যাতিত ৩৭ জনের উপস্থিতিতে এলাকার অসংখ্য ভুক্তভোগী বেনাপোলের শাখারিপোতা বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত মফিজুর রহমান এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করে বলেন, বাওড় দখল করতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছে।
শাখারিপোতা বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ জামাল উদ্দিন বলেন, ধান্যখোলা গ্রামের প্রয়াত আনোয়ার আলির ছেলে মফিজুর রহমান বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার নামে বেনাপোল পোর্ট থানায় ৪টি মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে আটক করে না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বাহিনী গড়ে তুলে বাহাদুরপুর কালিয়ানী বাওড় বিগত সাত বছরের বেশি সময় দখল করে মৎস্যজীবীদের পেটে লাথি মেরে চলেছেন। শুধু তাই নয়, বাওড়ে কেউ মাছ ধরতে নামলে তাকে মারপিট করে নির্যাতন করা হয়। বিশেষ করে বাগদি সম্প্রদায় তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৩১টি পরিবার দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।
এবিষয়টি তিনি সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীরকে লিখেছেন। এছাড়া মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কথা লিখে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি, র্যাব সদর দপ্তর ও পুলিশ সুপার বরাবর লেখা হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ জামাল উদ্দিন আরও বলেন, শাখারীপোতা প্রায় ২শ’ ঘর বাগদি সম্প্রদায় বসবাস করতেন। এরমধ্যে পরিতোষ দাস, গুপীনাথা দাস, গোডাদাস, শাতীল পাত্র, রেপকী দাস, রবেন বিশ্বাস, সাধন কুমার, সোনাচাঁদ, মনোহার বিশ্বাস, খিতিব চন্দ্র, দুলাই কানাইসহ ৩১ পরিবার দেশছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য এখনই প্রতিকার হওয়া জরুরি।
এবিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর জানান, মৎস্যজীবীরা এধরনের অভিযোগ দিলে তিনি শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছিলেন। তবে ওই আবেদনে হিন্দুদের দেশত্যাগের কথা বলা ছিলো কিনা মনে পড়ছে না। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত মফিজুর রহমান এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করে বলেন, বাওড় দখল করতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছে। তিনি আরও বলেন, হিন্দুদের মেয়ের বিয়ে থেকে সব কাজে তিনি অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন। তাহলে আমি কেন তাদের নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মফিজুর রহমানের বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হায়দার আলি, নিয়ামত আলি, আব্দুর রহমান, মনতাজ আলি, রাহাতুন নেছা, আলেয়া বেগম, রাশেদা খাতুন, ইকবাল হোসেন, নাসির উদ্দিন, এনায়েত আলির মতো ৩৭ জন দরিদ্র মানুষ।