আবারও ‘গৃহবন্দী’ হতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নিরাপত্তার অজুহাতে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ‘ফিরোজা’ নামের বাড়িতেই তাকে অঘোষিতভাবে ‘আটকে’ রাখতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ৫ জানুয়ারির আগেই নেওয়া হতে পারে এ ব্যবস্থা। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এমন আশঙ্কা করছেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৫ জানুয়ারি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনকে সামনে রেখেই খালেদা জিয়ার ‘গৃহবন্দী’ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওইদিন ঢাকায় সমাবেশ করার বিষয়ে এখনও অনড় বিএনপি। সরকার অনুমতি না দিলেও নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০দলীয় জোট। খালেদা জিয়া নিজে ওইদিন বাধা ডিঙিয়ে রাজপথে থাকবেন বলে জানিয়েছেন দল ও জোটের জ্যেষ্ঠ নেতাদের।
এদিকে, সরকারের বর্ষপূর্তির দিন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সমাবেশ হলে ঢাকার রাজপথে ‘ভিন্নরকম পরিস্থিতি’ তৈরি হতে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকেই তাঁকে ‘আটকে’ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। সেক্ষেত্রে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণার পর ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে টানা পনেরো দিন খালেদা জিয়াকে যে কৌশলে তার গুলশানের বাসায় থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল, এবারও প্রায় একই কৌশলে কিংবা ভিন্ন কোনও পন্থায় তাঁকে অঘোষিতভাবে ‘গৃহবন্দী’ করা হতে পারে।
অসমর্থিত একটি সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারি সমাবেশের বিষয়ে বিএনপির অনড় অবস্থান জানার পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নাশকতা-নৈরাজ্যের আশঙ্কা থাকলে সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা আছে সরকারের।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবারও ‘গৃহবন্দী’ হতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেই জানিয়েছেন খালেদা জিয়াকে। এজন্য করণীয় কী হতে পারে, সে বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্বস্ত কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথাও বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সেক্ষেত্রে ৫ জানুয়ারির সমাবেশে অংশ নিতে আজ থেকেই বাসার বাইরে অবস্থান করতে পারেন খালেদা জিয়া। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় কিংবা ছোটভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের বারিধারার বাসায় থাকতে পারেন তিনি। বারিধারা কূটনৈতিক এলাকা হওয়ায় সেখান থেকে ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনের উদ্দেশে রওনা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খালেদা জিয়াকে ‘আটকে’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে বলে ধারণা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ৪ জানুয়ারি থেকে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে থাকতে পারেন খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি সকাল থেকে গুলশান কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশকে উপস্থিতি থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে তার। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতেই পল্টনের সমাবেশের উদ্দেশে রওনা দিতে চান তিনি। গুলশান থেকে সম্ভাব্য সমাবেশস্থল নয়াপল্টন পর্যন্ত বিএনপি, দলটির ১১ অঙ্গ-সহযোগি সংগঠন ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাকর্মীদের রাস্তার দু’ধারে উপস্থিত থাকার নির্দেশও রয়েছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী অবৈধ সরকার একের পর এক অশুভ সিদ্বান্ত নিচ্ছে। যদি কোনও কারণে ৫ জানুয়ারির সমাবেশকে ঘিরে সরকার খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী কিংবা কৌশলে আটকে রাখার সিদ্বান্ত নেয়, তাহলে মস্তবড় ভুল করবে তারা। যার মাশুল ৫ জানুয়ারি থেকেই দিতে হতে পারে সরকারকে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করতে চাই আমাদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত করে সরকার বিএনপিকে ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি দেবে এবং খালেদা জিয়াকে কোথাও আটকে রাখার মতো চরম ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে না।