আগামী ১ জানুয়ারী জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী।এ উপলক্ষে ওইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে দলটি। এ মহাসমাবেশে ১০ লাখ মানুষের জমায়েতের ঘোষণাও ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। আর অর্থের জোগান দিতে ও সমাবেশকে সফল করতে দলটির প্রতিটি নেতাদের কাছে ধরা হয়েছে পদ ও পদবী অনুযায়ী চাঁদা। সব মিলেই ১০ লাখ মানুষের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে জাপা।
এমন সব কথাই জানা গেছে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সাথে কথা বলে।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশ উপলক্ষে জাপার প্রতিটি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আলাদা আলাদাভাবে চাঁদা ধরা হয়েছে। তবে এ চাঁদার পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে তাদের পদের ভিত্তিতে। দলের সাংসদদের জন্য ১ লাখ, প্রেসিডিয়াম সদস্যদের ৫০ হাজার, উপদেষ্টাদের ৩০ হাজার, ভাইস চেয়ারম্যানদের ২০ হাজার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের ১০ হাজার এবং কেন্দ্রীয় সদস্যদের ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা ধরা হয়েছে।
পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের তালিকা অনুযায়ী ৪০ জন সংসদ সদস্যের কাছে ১ লাখ করে ৪০ লাখ টাকা। তবে এদের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১১ জনের মতো রয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য। অবশ্য যে এমপি প্রেসিডিয়াম তাকে আর ওই পদের জন্য কোনো টাকা দিতে হবে না।
এছাড়া ৩১ জন প্রেসিডিয়াম সদসের কাছে ৫০ হাজার করে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৮ জন উপদেষ্টাদের কাছে ৩০ হাজার করে ৫৪ লাখ, ৩৩ জন ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে ২০ হাজার করে ৬ লাখ ৬০ হাজার, ৪২ জন সভাপতিমণ্ডলীর কাছে ১০ হাজার করে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ১৫০ জন কেন্দ্রীয় সদস্যদের কাছে ৫ হাজার করে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।
ফলে মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি টাকার ওপর।
রাজধানীর বাইরের কয়েকটি জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও আহ্বায়কদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। যারা এ টাকা দিতে পারছে না তাদের বাস ভাড়া ও লোকজন উপস্থিতির উপরে বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তবে এই সমাবেশ বাস্তবায়ন করার জন্য মহাজোট সরকারের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে টাকা। সরকার নিজেই এই মহাসমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য জাপাকে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে বলে জানায় জাপার একটি বিশ্বস্ত সূত্র।
জাপা সূত্র আরও জানায়, কাকে কত টাকা দিতে হবে এ সংক্রান্ত একটি পত্রে তা নোটিশ করে নভেম্বরে পাঠানো হয়েছিল। তা প্রতিটি নেতার কাছেই পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর অনেকেই কোনো টাকাই দিতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দলে আর যাই না। কোনো প্রোগ্রাম ও সভা এবং সমাবেশেও অংশ নিই না। তাহলে কেন চাঁদা দেব?
তিনি আরও বলেন, এভাবে প্রতিটি সভা ও সমাবেশের জন্য স্যার আমাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। কিন্তু এসব টাকার তো অর্ধেকই খরচ হয় না। যা থাকে তা চলে যায় মহাসচিব ও সিনিয়র মহাসচিবের পকেটে।
যারা পার্টির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন তারা এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর কোনো জবাবই দেননি। ফলে যত টাকা টার্গেট করা হয়েছে তা উঠবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
মহাসমাবেশ সফল করতে নরসিংদী, টাঙ্গাইল, সাভার, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুর থেকেও লোকজন আনা হবে। এ জন্য এসব জেলার সভাপতি ও নেতাদের টার্গেট দেয়া হয়েছে। এসব জেলায় জাপার তেমন সমর্থক না থাকায় ভাড়ায় লোক আনার জন্য জোর তাগিদও দেয়া হয়েছে।
তবে ঢাকার নিকটতম জেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে ২০ হাজার লোক আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাপার এমপি নাসিম ওসমান। এজন্য তিনি ইতোমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।
তার পাশাপাশি ঢাকা-৪ আসনের এমপি আবু হোসেন বাবলাও ২০ হাজার কর্মী নিয়ে ওইদিন হাজির হবেন বলে প্রস্তুতি দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাবলার আসনের একজন জাপা নেতা বলেন, এই সমাবেশকে সফল করতে বাবলা ভাই অনেক কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি নেতাকর্মীদের বলেছেন, তোমরা যেখান থেকেই পারো লোকজন আনতে হবে এবং যে করেই হোক ২০ হাজার লোক আনতে হবে। না হলে স্যারের কাছে আমার মুখ থাকবে না।
বাবলা ও নাসিম ওমসানের মতই আরও কয়েকজন এমপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারাও নিজ নিজ এলাকা থেকে গাড়িভাড়া করে লোকজন আনবেন।
অর্থের বিষয়টি স্বীকার করে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, প্রত্যেক এমপি এক লাখ করে টাকা দিচ্ছেন। কেননা সবার সহযোগিতা দরকার। কারও অর্থ ছাড়া এত বড় প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, প্রচারের জন্য আমরা পাঁচশ বিলবোর্ডের টার্গেট নিয়েছিলাম। কিন্ত অল্প পরিমাণ সাঁটানো হয়েছে।