ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিতে আবারো ভাঙনের সুর শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে কৌশল নিয়েছেন, তাতে নেতাদের মধ্যে প্রবল আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারে থেকে কখনও সরকারের পক্ষে আবার কখনও বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়ার ফলে দলের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এ নিয়ে দলের মধ্যে দু’টি গ্র“প সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুই গ্র“পই চাইছে এরশাদ শেষ পর্যন্ত তাদেরই সমর্থন দিবে।
জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি মহাজোটে তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। স্বয়ং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই এ নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তবে দলের নেতাদের নিয়ে এখনও পর্যন্ত তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
একটি সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোট ছেড়ে আলাদাভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সহধর্মিনী ও সিনিয়র প্রেসিডিয়াম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মহাজোট সরকারে সামিল হয়। এতে জাতীয় পার্টির প্রধান এরশাদ কিছুদিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে অন্তর্ভূক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হন। তাতে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে তখন প্রবল অসন্তোষ দেখা দেয়।
সূত্র জানায়, এরশাদের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ার হঠকারি সিদ্ধান্তের ফলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্রি. মাহামুদ হাসানসহ বিএনপিপন্থী অনেকেই অসন্তষ্ট হলেও মহাজোটে থাকার পক্ষে ছিলেন- মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু ও সুনীল শুভ রায়।
কিন্তু ইতোমধ্যে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপিকে এরশাদ জাতীয় পার্টির মহাসচিব করার পর দলটিতে আবার নতুন করে কোন্দল দেখা দেয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর বুধবার বিকালে কাকরাইলস্থ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই জনসভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিএম কাদের ও দলের চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজসহ অনেক শীর্ষ নেতা ছিলেন না। এই সভায় ছিলেন জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমএ হান্নান, এসএম ফয়শল চিশতী, অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, সাইদুর রহমান টেপা, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, রওশন আরা এমপি, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, বেলার হোসেন ও জহিরুল আলম প্রমুখ।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় পার্টিতে এরশাদ ও রওশন গ্র“প এমান্বয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠছে। যে কোনো সময় দলের মধ্যে ভাঙনসহ নানা বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতীর সঙ্গে শক্রবার যোগাযোগ করলে বলেন, দলের দুই দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ ও জুয়েল দলের সকল প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপদেষ্টা সম্পাদক ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের সংবাদ জানিয়ে দেয়। এতে কেউ না জানার কথা নয়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলেন, আমাকে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় পার্টির কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয় না। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমন্ত্রণ না জানালে যেতে পারি? তবে আতীতেও আমাকে যেখানেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে-আমি সেখানে গিয়েছি।
Benge jaw valo
Benge jaw valo