জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বন্ধে চিঠি দিয়েছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী এবং হাউজ অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কার্লাইল কিউসি।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. আবদুল হান্নান বরাবর এই চিঠি লিখেন তিনি।
চিঠিতে লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিনটি রায় প্রদান করেছে।’
তিনি বলেন, ‘রায়ে জামায়াতের আমিরসহ দুই নেতাকে এই ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর অন্যদিকে আপিল বিভাগ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের মামলায় ট্রাইবুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে।’
এ সবগুলো রায়ই দুঃখজনকভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন খ্যাতিমান এই বৃটিশ আইনজীবী।
তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের আপিলের রায় প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।
লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন মহল রিভিউ আবেদন বা ক্ষমা চাওয়ার মত দেশীয় আইনে প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলোকেও কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সুযোগ দিবে না।’
তিনি বলেন, ‘যদি সরকার কামার্বজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার ব্যপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তবে তা এখুনি স্থগিত করা উচিত, কেননা আইনি প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি।’
‘আইনি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন না করলে কিংবা কামারুজ্জামানকে তার আইনী সুযোগ না দিয়ে তার ফাঁসি কার্যকর করা হলে তা হবে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শামিল’ যোগ করেন ব্রিটিশ হাইজ অব লডর্সের এই সদস্য।
তিনি বলেন, ‘এ সব মামলা এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মহল থেকে ইতোমধ্যেই অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ট্রাইব্যুনালের ব্যর্থতা এবং অভিযুক্তের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় দেশি-বিদেশি নানা মহল অসংখ্যবার তাদের উদ্বেগ জানিয়েছেন।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে বার বার এ সব আইনী সংকটের সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এই ব্যপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে মন্তব্য করেন লর্ড কার্লাইল।
তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের কাজে সীমা টেনে দিয়েছে। আসামিপক্ষকে তাদের মামলার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি এবং বিবাদীপক্ষের সাক্ষী সংখ্যাও সীমিত করে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস ও প্রমাণাদি আদালতে জমা দেয়ার সুযোগও দেয়া হয়নি।’
লর্ড কার্লাইল বলেন, পূর্বে যারা ক্ষমতাসীন ছিল তাদের শায়েস্তা করার একটি রাজনৈতিক প্রবণতা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে এ ট্রাইব্যুনাল অতীতের বিষয়গুলো ছাড়িয়ে গেছে। ফলে দেশটির রাজনীতিতে বিভাজন প্রজন্মের মধ্যে স্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
এই বিভাজন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কয়েক বিষয় সুপারিশ করেন তিনি।
এক. আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণে এবং তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করতে হবে।
দুই. বর্তমান ট্রাইব্যুনালের দেয়া দণ্ডাদেশগুলো স্থগিত করতে হবে।
তিন. ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়গুলোকে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এবং
চার. আর উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত চলমান বিচার প্রক্রিয়াগুলোও স্থগিত করতে হবে।
লর্ড কার্লাইল বলেন, এ সব সুপারিশমালাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ সরকার এ বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলে দেশটিতে অব্যাহত সংকট নতুন করে অস্থিরতার জন্ম দেবে। কেবল একটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন এবং আইনের যথাযথভাবে প্রয়োগ করলে বাংলাদেশ তার ইতিহাসের ক্ষতকে সমাধান করতে পারবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে রিভিউ করার সুযোগ প্রদানের জন্য আমি বাংলাদেশ সরকার ও বিচার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে নীতি বহির্ভুতভাবে দেয়া সব মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর জন্যও আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’
London Bangla A Force for the community…
