৩ নভেম্বর ২০১৪: আলোচিত ব্যবসায়ি ও জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুসা বিন শমসেরের ( প্রিন্সমুসা) অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুসা বিন শমসেরের অবৈধ অর্থ-সম্পদের উৎসের অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচলাক মীর জয়নাল আবেদীন শিবলীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, আমরা মুসা বিন শমসেরের অবৈধ সম্পদ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করেছি। ‘বিজনেস এশিয়া’ নামক একটি ম্যাগাজিনে আমরা তার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। যা নিয়ে কমিশনে আলোচনা করেছি। তার স্বঘোষিত বা অঘোষিত যে অর্থের উৎস তার মধ্যে স্বচ্ছতা কতটা আছে তা দুদক খতিয়ে দেখছে। ওই ম্যাগাজিনে তার যে লাইফ স্টাইলের বর্ণনা রয়েছে তা আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
দুদক কমিশনার আরও বলেন, আমরা ম্যাগাজিনে তার জবানিতে জানতে পেরেছি সুইস ব্যাংকে তার ৭ হাজার বিলিয়ন ডলার জমা আছে। তিনি অস্ত্রের ব্যবসা করেন। এই অস্ত্র ব্যবসাটি বৈধ কি অবৈধ তা আমরা পর্যালোচনা করেছি।
তিনি বলেন, মুসা বিন শমসের প্রকৃতপক্ষে যে অর্থ আয় করেন তা বিদেশে পাচার করেন কিনা। সুইস ব্যাংকের যে অর্থ জমা করেন তার প্রকৃত উৎস কি এবং তার কী এমন আয়ের উৎস যা তিনি বিশ্ব মিডিয়াতে প্রচার করেন। এইসব তথ্য দুদকের নজরে এসেছে।
দুদক সুত্রে জানা যায়, মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দুদকের মানি লন্ডারিং শাখা থেকে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয় আমলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিকভাবে তা যাচাই-বাছাই করেছে দুদক।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নিয়মবহির্ভূত লেনদেনের জন্য ২০০৯ সালে ড. মুসা বিন শমসেরের সাত বিলিয়ন ডলার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে তা ফিরিয়ে দিতে সুইস কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়। ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুসা বিন শমসেরই বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার মূল সম্পত্তি প্রায় ১২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের উপরে। তিনি অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিত। ড. মুসা ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে অনুদান দিতে চেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। লেবার পার্টির টনি ব্লেয়ার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য তার পাঁচ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মুসা বিন শমসের ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ঘড়ি ব্যবহার করেন। এছাড়া তিনি তার জুতায় হীরক খন্ডও ব্যবহার করেন।
উল্লেখ্য, মুসা বিন শমসের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই। ২০১১ সালের ২৪ জুন মুসা বিন শমসেরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে তার নো ইউর কাস্টমার (কেওয়াইসি) ফর্মের সব তথ্য জানতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ড. মুসার সব ব্যাংকের স্থায়ী, চলতি, সঞ্চয়ী, ডিপিএস, এসপিডিএস, এফডিআর বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে হিসাব পরিচালিত হয়েছে বা হচ্ছে কি না সে সম্পর্কে তথ্যসহ হিসাব খোলার দিন থেকে হালনাগাদ হিসাব বিবরণী দাখিল করতে তফসিলিভুক্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল। দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব হিসাব তলব করলেও পরে রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।