১১ অক্টোবর ২০১৪: জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করলেন ভারতের সারদা কেলেঙ্কারিতে বহুল আলোচিত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যসভার এমপি আহমেদ হাসান ইমরান। কেন আমি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতে চেষ্টা করবো? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন তেমনটা চাইবেন? এতে তার কি স্বার্থ থাকতে পারে? মমতা তো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত। এ ফান্ডের অর্থ তিনি বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাছে পাঠিয়েছেন। সেই অর্থ শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার উৎখাতে ব্যবহার করা হয়। এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে ভারতে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে। এ সব নিয়ে আহমেদ হাসান ইমরানের মুখোমুখি হন সাংবাদিক মধুপর্ণা দাস। তার কাছে ইমরান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমার কখনও কোন যোগাযোগ ছিল না। তাদের ছাত্র সংগঠন হলো স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন (এসআইও)। তারা সিমি (এসআইএমআই) নয়। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে নিশ্চিত করেছেন, আমার বিরুদ্ধে এমন কোন রিপোর্ট তাদের কাছে নেই। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ব্যাপক আলোচনা রয়েছে যে আপনার শেকড় রয়েছে বাংলাদেশে। এ দেশের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ কি নিয়ে? জবাবে ইমরান বলেন, বাংলাদেশে রয়েছেন আমার অল্প কিছু আত্মীয়। কিন্তু সেখানে আমার কোন শেকড় নেই। আমি উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির মানুষ। আমার পিতা ছিলেন জলপাইগুড়ির মালবাজার এলাকার একটি টি-এস্টেটের ম্যানেজার। সেখানেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। যেখানে আমি পড়াশোনা করেছি সেখানকার প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ রয়েছে আমার কাছে। তবে বাংলাদেশ সফর করেছি কমপক্ষে ৮ বার। আমি বাংলাদেশী পত্রিকা দৈনিক নয়া দিগন্তের ভারত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- আপনি কি সিমির সদস্য ছিলেন? জবাবে ইমরান বলেন, আমি সিমিতে যোগ দিয়েছিলাম ১৯৭৭ সালে। ওই বছর সিমি গঠন করা হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থে কাজ করার জন্য। ওই সময় সিমি ছিল ঠিক রামকৃষ্ণ মিশনের মতো। রামকৃষ্ণ মিশনের মতো কাজ করতো এ সংগঠন। যখন এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন আমি ছিলাম আলীগড়ে। সিমি রক্তদান কর্মসূচি, লাইব্রেরি স্থাপন, গরিব ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করার জন্য অর্থ সংগ্রহের মতো কাজ করতো। তবে নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য আমি কখনও ছিলাম না। আপনি কখন সিমি ত্যাগ করলেন এবং কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে আমি সিমি ত্যাগ করি। যেহেতু এটি একটি ছাত্র সংগঠন তাই কারও বয়স ৩০ বছরের ওপরে হলে তাকে আর এর সদস্য রাখার নিয়ম নেই। তাই ওই সংগঠন ছেড়ে আসি আমি। তারপর ৩০ বছর পরে হঠাৎ করে সে সব বিষয় টেনে আনা হচ্ছে আমার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে এবং সংখ্যালঘু ভাই-বোনের মর্যাদাকে অবমূল্যায়নের জন্য। সারা ভারতে আমার বিরুদ্ধে কোন একটি পুলিশ স্টেশনে কেউ একটি এফআরআই খুঁজে পাবে না। সারদা চিট ফান্ডের সঙ্গে কিভাবে আপনি জড়িয়ে গেলেন? এ প্রশ্নের জবাবে আহমেদ হাসান ইমরান বলেন, আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ১৯৮১ সালে আমি ‘কলম’ নামে একটি পত্রিকা বের করি। সময় যত যেতে থাকে ততই আমরা এটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে পড়তে থাকি। তখন আমিনুদ্দিন সিদ্দিকী নামে একজন সিনিয়র ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আমাকে সারদা প্রধান সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিলেন। আমিনুদ্দিন তাকে উর্দু ভাষার এ পত্রিকাটি কিনে নিতে রাজি করালেন। এভাবেই সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ। তিনি আমাদের পত্রিকাটি কিনে নিলেন। পত্রিকাটির ২৬ জন মালিক ছিলেন। তারা সবাই এতে সম্মতি দিয়েছিলেন।