৩ অক্টোবর ২০১৪: দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক চশমা উদ্ভাবন করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চতুর্থ বর্ষের তিন ছাত্র। অন্ধদের চলাফেরার বাধাবিঘ্ন দূর করতে যন্ত্রটিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক সব প্রযুক্তি। স্মার্টফোন অ্যাপ, সময় ও অবস্থান নির্ণয়, আবহাওয়া সংবাদসহ আরও উন্নত সব প্রযুক্তির সম্মিলনে এই ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করেছেন তারা। এক বছর আগে অন্ধদের জন্য সহায়ক আরেকটি বিশেষ চশমা তারা তৈরি করেছিলেন। চশমার আদলে তৈরি করা এ যন্ত্রটি সম্পর্কে উদ্ভাবক ও কুয়েটের শিক্ষার্থী মো. মোস্তফা কামাল, আবু ইবনে বায়েজিদ ইমন ও নাজমুল হাসান জানান, অন্ধদের সহযোগিতার জন্য এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তি বিশ্বে এই প্রথম। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা চশমাটিকে চলার পথের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গাইড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
উদ্ভাবক দলটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শেখ সাদী। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চশমাটি কল্পনা থেকে বাস্তবে রূপলাভ করে।
চশমাটি সম্পর্কে কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, দেশের বাইরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ নিয়ে গবেষণা হলেও এ ধরনের স্বয়ংসম্পূর্ণ যন্ত্র আবিষ্কার বিশ্বে এই প্রথম। আগে এত হালকা ও ব্যবহারবান্ধব যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। তবে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে একে আরও ব্যবহারবান্ধব ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত করা সম্ভব।
চশমাটি চারপাশের সব বস্তু এবং রাস্তার সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীকে অবহিত করতে সক্ষম। ব্যবহারের সুবিধার্থে এবং বাইরের কোলাহল থেকে মুক্ত রাখতে চশমাটিতে শব্দের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ভাইব্রেশন, যা আগে আবিষ্কৃৃত চশমাটির তুলনায় অধিকতর কার্যকর বলে জানান উদ্ভাবক দলের সদস্যরা। তারা জানান, চলার শুরুতে শুধু চশমাটি চালু করে দিলেই এটি সামনের, ডানের অথবা বামের যে কোনো বাধা সম্পর্কে ভাইব্রেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে দেবে। ব্যবহারকারী থেকে বস্তুর দূরত্বভেদে ভাইব্রেশনের তীব্রতাও হবে ভিন্ন, যা থেকে ব্যবহারকারী বস্তুর দূরত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন। ছোট্ট এই চশমা দিয়ে প্রায় তিন মিটার দূর পর্যন্ত কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া চলার পথের ছবি তোলার মাধ্যমে চশমাটি পথের সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা নির্ণয় করে ব্যবহারকারীকে সঙ্গে সঙ্গে অবহিত করবে। শুধু তা-ই নয়, চশমাটি দিন-রাত এবং সব আবহাওয়ায় ব্যবহারোপযোগী।
চারপাশের বস্তু শনাক্ত করতে চশমাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আলট্রাসনিক সাউন্ড সেন্সর। পথের প্রতিবন্ধকতা নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়েছে ক্যামেরা। ডাটা প্রসেসিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘পিআইসি’ সিরিজের মাইক্রো-কন্ট্রোলার। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে চশমাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ভয়েস ইনস্ট্রাকশন। চশমাটির শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, যা একবার চার্জ দিলে ব্যবহার করা যাবে ১০-১২ ঘণ্টা। চার্জ শেষ হয়ে গেলেও বিশেষ কেবল ইন্টারফেসের মাধ্যমে এটিকে মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করে সচল রাখা যাবে বাড়তি কয়েক ঘণ্টা। চশমাটি তৈরিতে খরচ হয়েছে চার হাজার টাকা।
মো. মোস্তফা কামাল ও আবু ইবনে বায়েজিদ ইমন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। আর নাজমুল হাসান অধ্যয়ন করেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষে।
সৌজন্যে: সমকাল